স্বদেশ ডেস্ক:
রাশিয়ার মস্কোতে এক ড্রোন হামলায় দুটি অফিস ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একটি বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এই হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে রাশিয়া।
মস্কোর শহর কেন্দ্রের পশ্চিমে ওডিন্টসোভো এলাকায় একটি ড্রোন গুলি করে ফেলে দেয়া হয়। অন্য দুটি ড্রোনকে বিকল করে দেয়া হলেও সেগুলো দুটি অফিস ভবনের ওপর গিয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এই ড্রোন হামলায় এক ব্যক্তি আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা ওই হামলার দায় স্বীকার করেননি।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেন, দুটি অফিস ভবনের সামনের অংশের সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
ঘটনাস্থলের ছবিতে দেখা যায় ভবন দুটির কোনায় কয়েকটি জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর নিচে বিভিন্ন ভাঙা-চোরা জিনিস পড়ে আছে।
লিয়া নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তিনি সেখানে আগুন ও ধোঁয়া দেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি বিস্ফোরণ শুনে সবাই লাফ দিয়ে উঠি। এরপর আমরা অনেক ধোঁয়া দেখতে পাই, কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। উপর থেকে আমরা আগুন দেখতে পাই।’
ওই ড্রোন হামলার পর মস্কোর দক্ষিণ-পশ্চিমের ভনুকোভো বিমানবন্দরে কিছুক্ষণ ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখা হয়। সেখানে নামতে আসা কিছু ফ্লাইট অন্য বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সন্ত্রাসবাদী হামলার চেষ্টা’ ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে।
রোববার সকালের ওই ড্রোন হামলার জন্য মস্কো ইউক্রেনকে দায়ী করেছে। মস্কোতে এর আগেও এমন ড্রোন হামলা হয়েছে। তবে ইউক্রেন রাশিয়ার ভেতরে চালানো কোনো হামলার দায় এখনো স্বীকার করেনি।
ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে মস্কোর দূরত্ব প্রায় পাঁচ শ’ কিলোমিটার। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার পর মস্কোকে টার্গেট করে হামলার ঘটনা খুব বিরল।
তবে রাশিয়া অভিযোগ করছে, ইউক্রেন সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মস্কোসহ বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হামলা হয়েছিল গত মে মাসে। রাশিয়া দাবি করেছিল, ইউক্রেন দুটি ড্রোন দিয়ে ক্রেমলিনে আক্রমণ চালায়। তবে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট পুতিনকে টার্গেট করে ক্রেমলিনে হামলা চালানোর কথা অস্বীকার করে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন গতরাতে ক্রাইমিয়াতেও ড্রোন হামলা চালায়। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া দখল করে নিজেদের সীমানাভুক্ত করেছিল।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৬টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে এবং আরো নয়টিকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এক ব্যক্তি নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছে।
শান্তি আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করছেন না পুতিন
এদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের সাথে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিচ্ছেন না। সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে আফ্রিকান নেতাদের সাথে এক বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, আফ্রিকান ও চীনা নেতাদের উদ্যোগ শান্তি প্রতিষ্ঠার ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।
তবে পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের বাহিনী যতক্ষণ পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ততক্ষণ কোনো যুদ্ধবিরতি নয়।
প্রেসিডেন্ট পুতিন এই কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মস্কোতে ড্রোন হামলার হয়।
শান্তি উদ্যোগের ব্যাপারে এর আগে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়েই বলেছিল, কোনো পূর্বশর্ত মেনে তারা আলোচনার টেবিলে যাবে না।
কিয়েভ বলেছে, তারা তাদের দেশের কোনো অংশই রাশিয়াকে ছেড়ে দেবে না।
তবে মস্কো বলেছে, সীমানা নিয়ে নতুন বাস্তবতা ইউক্রেনকে মেনে নিতে হবে। গত বছর ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়া এখন দেশটির দক্ষিণ এবং পূর্বাঞ্চল দখল করে রেখেছে।
সূত্র : বিবিসি