স্বদেশ ডেস্ক:
ইউক্রেনের শীর্ষ সামরিক অধিনায়কদের একজন বলছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের দ্রুত ফলাফল অর্জন করা ‘কার্যত অসম্ভব’।
জেনারেল অলেক্সান্ডার সিরস্কি জানান, রণাঙ্গনে অগ্রগতি যতটা দ্রুত হবে বলে তিনি আশা করেছিলেন তেমনটা ঘটেনি।
তবে তিনি জানান, ইউক্রেনিয় বাহিনী বাখমুত শহরকে ঘিরে রেখেছে, যেটি দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গত মে মাসে রুশ সেনারা দখল করেছিল।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা ওডেসা অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২০টিরও বেশি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর নেই।
কে এই জেনারেল সিরস্কি?
বিবিসি সংবাদদাতা জনাথান বিল পূর্ব ইউক্রেন থেকে জানিয়েছেন, গত বছর ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় রুশ অভিযানের শুরুতে জেনারেল সিরস্কি রাজধানী কিয়েভ শহরের প্রতিরক্ষায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। গত গ্রীষ্মে খারকিভে ইউক্রেনের চমকদার এবং সফল পাল্টা আক্রমণের পেছনে তিনিই ছিলেন মূল পরিকল্পনাকারী। এখন তিনি পূর্ব ইউক্রেনের সামরিক অভিযানের প্রধান হিসেবে নতুন পাল্টা অভিযানের তত্ত্বাবধান করছেন।
সৈন্য পরিদর্শন ও যুদ্ধের দিকে নজর রাখতে তিনি যে কমান্ড-যানটি ব্যবহার করেন, এক গোপন স্থানে ও গাড়ির পাশে তিনি বিবিসি সংবাদদাতার সাথে দেখা করেন।
ওই গাড়ির ওপরে একটি শক্তিশালী মেশিনগান বসানো। ভেতরে একটি বড় স্ক্রিন, শত শত ড্রোন থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের একাধিক লাইভ ভিডিও ফিড সেখানে দেখানো হচ্ছে।
কেন ধীর গতি?
তবে জেনারেল সিরস্কি স্বীকার করেন যে পাল্টা আক্রমণ শুরু হওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পর একাধিক ফ্রন্টে ইউক্রেনের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আক্রমণ অনেকের প্রত্যাশার চেয়ে ধীর গতিতে চলছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত ফলাফল পেতে চাই। কিন্তু বাস্তবে এটা অসম্ভব।’
এই জেনারেল জানান, পূর্বের রণাঙ্গনের এলাকাটি মাইন দিয়ে ভরা এবং সেখানে নানা ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সেখানে রুশদের অনেকগুলো শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে। ফলে আমরা যতটা চাই ততখানি দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে না।’
তবে জেনারেল সিরস্কি মনে করেন, ইউক্রেনের এখনো একটি বিশেষ সুযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে আমাদের সামরিক নেতাদের মধ্যে ঐক্য এবং একে অপরের প্রতি আমাদের সৈন্যদের আস্থা, সেনাবাহিনীর জন্য শক্তিশালী একটি পয়েন্ট।’
এটি রাশিয়ার সামরিক শ্রেণিবিন্যাসের সম্পূর্ণ উল্টা।
রুশ বাহিনীতে এখন দৃশ্যত অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে এবং সিনিয়র অফিসারদের কমান্ড থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
জেনারেল সিরস্কি উদ্যম, দৃঢ়-সংকল্প এবং ধূর্ততার জন্য তার আশপাশের লোকদের কাছে বীর হিসেবে প্রশংসিত। তিনি প্রতিদিন জিমে গিয়ে ব্যায়াম করেন। রাতে সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি ঘুমান না।
পূর্ব ফ্রন্টে এই প্রথমবারের মতো ইউক্রেনিয় বাহিনীর লোকবল এখন রুশ বাহিনীর সমান, প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার। তবে ইউক্রেনের বাহিনীতে কামানের সংখ্যা রুশ আর্টিলারির চেয়ে কম।
এর মোকাবেলায় জেনারেল সিরস্কি নিশ্চিত করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ক্লাস্টার বোমার চালান ইউক্রেনে এসে পৌঁছেছে এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সেগুলোর ব্যবহার শুরু হবে।
তবে মার্কিন হাউইটজার কামান- যেগুলো থেকে এসব ক্লাস্টার গোলা ছোঁড়া হবে, সেগুলো ইতোমধ্যেই বাখমুতের চারপাশে বসানো হয়েছে।
জেনারেল সিরস্কি বলেছেন, শহরটি পুনরুদ্ধার শুধুমাত্র প্রতীকী মূল্যের চেয়ে বেশি কিছু হবে।
তিনি যুক্তি দেখান, বাখমুত দখল কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জায়গাটি ওই অঞ্চলের অন্য প্রধান শহরগুলোর প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত হয়।
জেনারেল সিরস্কির বলেন, ‘জনগণ আমাদের বিজয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। ছোট হলেও একটি বিজয়ের প্রয়োজন।’
সূত্র : বিবিসি