শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন

পুলিশী হস্তক্ষেপ প্রতারণার অভিযোগ ও বিশৃংখলায় বঙ্গ সম্মেলন

পুলিশী হস্তক্ষেপ প্রতারণার অভিযোগ ও বিশৃংখলায় বঙ্গ সম্মেলন

স্বদেশ ডেস্ক:

পুলিশী হস্তক্ষেপ অব্যবস্থাপনা ও বাংলাদেশিদের অবজ্ঞা বঙ্গ সম্মেলনের ইমেজকে ম্লান করে দিয়েছে। অথচ এই সম্মেলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বাংলাদেশি আমেরিকান কালী প্রদীপ চৌধুরী। অনেকের কাছ থেকে আয়োজকরা মোটা অংকের অর্থ নিয়ে তাদের অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়নি। অর্থ নেবার সময় প্রতিশ্রুতি ছিল তাদেরকে মঞ্চে তুলে পরিচয় করে দেয়া হবে। অনেক অনুষ্ঠান বাদ দেয়া হয়েছে বিনা নোটিশে। এতে অংশগ্রহনকারিরা ছিলেন বিক্ষুব্ধ। অর্থ প্রদানকারি অতিথি ও সম্ভাব্য পারফরমারদের সাথে দফায় দফায় আয়োজকদের বাদানুবাদ ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ কল করে। সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের বিচরন, আড্ডা ও সময় কাটানো ছিল তসলিমা নাসরিন, চঞ্চল চৌধুরী ও শাওনকে ঘিরে। বঙ্গ সম্মেলটিকে কার্যত মনে হয়েছে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ কেন্দ্রিক কোন অনুষ্ঠান। আর বাংলাদেশিরা অতিথি মাত্র। তবে দাদা ভক্ত কিছু বাংলাদেশি লেখক ও সাংবাদিক নিজেদের মর্যাদা বিলীন করে আস্থায় উঠার প্রতিযোগিতায়  ছিলেন।

চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃংখলার নজির গড়ে গত  দুই জুলাই, রোববার মধ্য রাতে সমাপ্ত হয় ৪৩তম ‘ নর্থ আমেরিকান বেঙ্গলি কনফারেন্স ‘ যা ‘বঙ্গ সম্মেলন’ নামে সমধিক পরিচিত।

গত ৩০ জুন, শুক্রবার  জিম হুইলান বোর্ডওয়াক হলে  উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শহর থেকে এগারো মাইল দূরে ওশান ভিউ হোটেলে স্বল্পপরিসরে আয়োজিত হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ।

বঙ্গ সম্মেলনের বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যে ছিল সেমিনার, যাত্রাপালা, রবীন্দ্র ও নজরুল সংগীত, আধুনিক গান, নৃত্যানুষ্ঠান, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ব্যান্ড সংগীত, শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন পরিবেশনাসহ হরেক রকমের আয়োজন।

বঙ্গ সন্মেলনে অংশগ্রহনকারী বাঙালিরা ঘুরে ঘুরে নিজেদের পছন্দ মতো অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।কিন্তু  অনুষ্ঠানসূচীর সাথে মিল না থাকায় অনেকেই পছন্দের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অব্যবস্থাপনা থাকলেও লোকজন সহিংস হয়ে উঠেননি। ধৈর্য ধরেই অধিকাংশ লোকজন তাদের বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। রেজিস্ট্রেশন, আবাসিক ব্যবস্থাপনা, খাবার বিতরণ, প্রোগ্রাম সূচী সহ সর্বত্রই নিজেদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি প্রকাশ করেছেন উদ্যোক্তারা।

জিম হুইলান বোর্ডওয়াক হল এর বিশাল চত্বর জুড়ে হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছিল দেশের ও প্রবাসের স্বনামধন্য ব্যবসায়ীরা, এসবের মাঝে আপন ঔজ্জল্যে জ্বলজ্বল করছিল খ্যাতনামা বই বিপনী প্রতিষ্ঠান ‘মুক্তধারা’। বাঙালি খাবারের লোভে খাবারের ষ্টলে ছিল ভোজনবিলাসীদের দীর্ঘ লাইন।

বঙ্গ সন্মেলনে  প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা, ঘুংঘুর, বাংলাদেশ একাডেমী অফ ফাইন আর্টস সহ অন্যান্যদের উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল।

দুই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী ও নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন ছিলেন সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ।

বঙ্গ সন্মেলনে পদ্মভূষণ অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার, পণ্ডিত আনিন্দ চ্যাটার্জি, কবি সুবোধ সরকার, সোনু নিগম, জাভেদ আলী , বাংলা ব্যান্ড ক্যাকটাস, দুলাল লাহিড়ী, সুমিত্রা মিত্র, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, মেহের আফরোজ শাওন, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ব্যক্তি ও সংগঠন অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে অংশগ্রহন করেন।

আটলান্টিক সিটি থেকে সুব্রত চৌধুরী লিখেছেন,বঙ্গ সন্মেলনের রেজিস্ট্রেশন, আবাসিক ব্যবস্থাপনা,, অনুষ্ঠানসূচী, উপহার সামগ্রী বিতরন সহ সর্বত্রই ছিল চরম অপেশাদারিত্ব।  বঙ্গ সন্মেলনে আগতদের পরিবেশিত খাবারের মান নিয়ে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

একদিনের জন্য মুল মিলনায়তন বাতিল হওয়ায় বহু অনুষ্ঠান বাদ দিতে হয়েছে। আমন্ত্রণ পেয়েও  বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান  মঞ্চে অনুষ্ঠান   করতে  পারেননি।বঙ্গ সন্মেলনে পুলিশের হস্তক্ষেপও দেখা গেছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য। এসব অনিয়ম ও অব্যবস্হাপনা দেখে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে  বলেছেন, এমন পেশাদার অনুষ্ঠানে অপেশাদারিত্ব একেবারেই অনভিপ্রেত।

আটলান্টিক সিটির  জিম হুইলান বোর্ডওয়াক হলে অনুষ্ঠিত এই বঙ্গ সম্মেলনে পদ্মার এপার ওপার দুই বাংলার বাঙালিদের সম্মিলন ঘটেছিল, তবে তা আশাব্যঞ্জক  ছিল না।

সন্মেলন শেষে অনেকেই  হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এবারের বঙ্গ সম্মেলন থেকে যে বিরূপ অভিজ্ঞতা নিয়ে লোকজন ফিরে যাচ্ছে আগামীতে তারা যদি বঙ্গ সম্মেলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877