স্বদেশ ডেস্ক:
গত ১০ জুন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঘরোয়া বা ইনডোর সমাবেশ হলেও ঘরে-বাইরে মিলে দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো লোকসমাগম হয়েছে। বিশেষ করে পুলিশের দ্বিধান্বিত অনুমোদন প্রক্রিয়া এবং সমাবেশ পরবর্তী ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের পরস্পরবিরোধী ও স্ববিরোধী বক্তব্য ওই সমাবেশটিকে আলোচিত করে তুলছে। আর একশ্রেণীর বাম নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবী এবং কিছু গণমাধ্যমের ‘হায় হায়’ চিৎকার সমাবেশটিকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে! অন্য দিকে জামায়াত নীরবে-নিঃশব্দে সমাবেশটি সম্পন্ন করে তাদের কৌশলগত জয়ের ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
১০ বছর পর জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি কেন দেয়া হলো সেই প্রশ্ন নিয়ে যে যার মতো করে নানা জন মতপ্রকাশ করছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনে করেন বিএনপিই জামায়াতকে মাঠে নামিয়েছে। আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্বের একটি অংশ মনে করেন, এ সমাবেশের অনুমতি দেয়াটা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য বিব্রতকর হলেও ভিসানীতির কারণে আর কোনো বিকল্প ছিল না (ডেইলি স্টার: ১৩/০৬/২০১৩)।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তাদের সভা-সমাবেশ করতেই পারে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচারে চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না জামায়াত দোষী (নয়া দিগন্ত: ১২/০৬/২০২৩)। সরকারের আরেকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘জামায়াতের অনেক সমর্থক রয়েছে। পরিস্থিতির আলোকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি ছিল একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ ((bdnews24.com, ১১.০৬.২০২৩)। তবে সব সমালোচনার তীর যাচ্ছে সরকারের দিকে। কেউ বলছেন, দেশে গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে সেটা বিশ্বকে বোঝানোর জন্যই সরকার জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। কারো কারো মতে সরকার জামায়াতের সাথে আঁতাত করে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই অনুমতি দিয়েছে। কোনো কোনো সমালোচক মনে করেন সরকার জামায়াতের শোডাউন দেখিয়ে ভারতকে ভয় দেখাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের পাশে না দাঁড়ালে জামায়াত বা ইসলামী শক্তি ক্ষমতায় আসবে। তাই যেন ভারত আমেরিকাকে ম্যানেজ করতে এগিয়ে আসে। ভারতের নিরাপত্তা নীতি বা পররাষ্ট্রনীতির বড় অংশই হলো প্রতিবেশী দেশগুলোয় ইসলামিস্টদের উত্থান ঠেকানো। তাদের বদ্ধমূল ধারণা আশপাশে ইসলামিস্টরা শক্তিশালী হলে তা তাদের কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঢেউ তুলবে। ভারতের এই নিরাপত্তা ধারণা প্রকাশ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি ২০১১ সালের ১ জুলাই বলেছিলেন, ‘at least 25 percent of the population in Bangladesh swears by the Jammat-e-Islami and they are very anti-Indian, and they are in the cultches, many times, of the ISI. So the political landscape in Bangladesh can change at anytime. We do not know what these terrorist elements, who have a hold on the Jamaat-e-Islami elements in Bangladesh, can be upto” (ISTITUTE OF PEACE AND CONFLICT STUDIES, Md Jawaid Akhtar, 08 July, 2011)। কাজেই বাংলাদেশে জামায়াতের এই উত্থান ভারতীয়দেরকে চিন্তিত করে তুলবে। এই সমাবেশ সরকারের জামায়াতকে বিএনপি থেকে পৃথক রাখার স্ট্র্যাটেজিও হতে পারে বলে অনেকেরই ধারণা। ২০০৯ সাল থেকে জামায়াতকে বিএনপি থেকে দূরে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সফলতার দ্বারপ্রান্তে। বর্তমানে চারদলীয় জোট নেই। গত বছর থেকে গড়ে ওঠা বিএনপির দুর্বার আন্দোলনেও জামায়াত যুগপৎভাবে নেই। এমন সময় সরকার জামায়াতের সাথে সখ্য গড়ে তুলতে পারলে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সন্দেহ সংশয় সৃষ্টি হবে এবং দূরত্ব আরো বাড়বে। ফলে বিএনপির একক আন্দোলন মোকাবেলা করা সরকারের পক্ষে খুবই সহজ হয়ে যাবে। ক্ষমতাসীন দল যে জামায়াতকে তাদের রাজনীতির অন্যতম ‘ডিনামিক্স’ বানিয়েছে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে তাদের স্ববিরোধী কার্যকলাপ দেখে। হাইকোর্ট ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বেআইনি ঘোষণা দিলে জামায়াত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। কিন্তু ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে আগে অক্টোবরে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়। এরপর সরকার জামায়াতের সব রাজনৈতিক স্পেস একেবারে বন্ধ করে দেয় এবং দল হিসেবে জামায়াতের শাস্তির কথা সামনে নিয়ে আসে। এ জন্য আইন হবে বা আইন সংশোধন হবে ইত্যাদি তারা মাঝে মধ্যেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিকূলে গেলেই বলতে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোন দলকে শাস্তির আওতায় আনা কি করে সম্ভব? তারা এ বিষয়ে ১০ বছর ধরে শুধু হুমকি-ধমকিই দিয়ে যাচ্ছেন। আসলে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অন্যতম উপাদান হলো জামায়াত নামক প্রতিপক্ষ। ক্রান্তিকালগুলোতে তারা জামায়াত বিরোধিতাকেই কৃত্রিম অক্সিজেনের মতো ব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকেন। অবশ্য এটাও তারা ভালোভাবেই জানেন, মার্কিন সরকার জামায়াতকে একটি মধ্যপন্থী ইসলামী দল হিসেবে বিবেচনা করে।
জামায়াতের এই সমাবেশ নিয়ে চার দিকে হইচই হলেও জামায়াত নির্বিকার। তারা ধীরস্থিরভাবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের স্ট্র্যাটেজি সফলতার সাথে প্রয়োগ করতে পেরেছেন, এটিই বড় কথা। কে কী বলল বা করল তাতে তারা গা করছে না। জামায়াত সর্বশেষ ২০১৩ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি শাপলা চত্বরে সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে সমাবেশ করেছিল। এরপর দীর্ঘ ১০টি বছর পর তারা এই অনুমোদিত সমাবেশটি করল। এতে তাদের রাজনৈতিক কৌশলের অত্যন্ত চমৎকার প্রতিফলন ঘটেছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর পশ্চিমা তথা মার্কিন চাপ ক্রমেই বাড়ছে। বিরোধীদের ওপর নির্যাতন-নিষ্পেষণের বিপরীতে মার্কিন ভিসানীতির স্পষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর উত্তাপ ময়দানে গড়াচ্ছে। সংসদে বোঝাপড়ার বিরোধী দলও একটু একটু করে লজ্জা ভেঙে সরকারবিরোধী সুর ছড়াচ্ছে। একই সাথে জামায়াতের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছে। এমন একটা উর্বর ময়দানের সুযোগ যেকোনো রাজনৈতিক দলই লুফে নেবে। জামায়াত অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সমাবেশ সম্পন্ন করেছে। তারা পুরো গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সরকারি বিধিনিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে সমাবেশটি করেছে। প্রথম অনুমতি নিতে গেলে তাদের চারজন আইনজীবী নেতাকে ডিএমপি অফিসের গেট থেকে পুলিশ আটক করে পরে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ৫ জুন ‘ওয়ার্কিং ডে’ এই অজুহাত দিয়ে পুলিশ অনুমতি দেয়া থেকে বিরত থাকে। জামায়াত পুনরায় ছুটির দিনে অর্থাৎ ১০ জুন বায়তুল মোকাররমে সমাবেশের অনুমতি চায়। ৯ জুন পর্যন্ত অনুমতি না মিললেও জামায়াত হাল ছাড়েনি। ফলে ৯ তারিখ রাতে ডিএমপি বায়তুল মোকাররমের পরিবর্তে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে ইনডোর সমাবেশের অনুমতি দিতে বাধ্য হয়।
উল্লেখ্য যে, সেখানে জাতীয় পার্টির যুব সংহতি সমিতির বার্ষিক সম্মেলনের জন্য এক মাস আগে থেকেই বরাদ্দ দেয়া থাকলেও তাদের সেই বরাদ্দ বাতিল করে জামায়াতকে বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে ইনডোর সমাবেশের অনুমতি থাকলেও পরবর্তীতে দেখা যায় হলের বাইরে আশপাশের রাস্তাঘাট পূর্ণ হয়ে ইনডোর মহাসমাবেশে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে। সমাবেশে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ছিলেন অত্যন্ত সতর্ক। যেন কোনো ধরনের অঘটন ঘটিয়ে কেউ এই সমাবেশকে নাশকতার মুখোশ পরাতে না পারে। তবে সমাবেশে ছিল না কোনো বাড়তি আবেগি বক্তব্য। সাদাসিধা ভাষায় সমাবেশে মূল তিনটি দাবি উত্থাপন করেন নেতারা। ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দলের আমির ডা: শফিকুর রহমানসহ কারাবন্দী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও আলেমদের মুক্তি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত এই সমাবেশের আয়োজন করে (প্রথম আলো: ১২/০৬/২০২৩)। অত্যন্ত সময়োপযোগী কৌশল তারা ব্যবহার করেছেন। প্রথমত, ২৯ মে চারজন আইনজীবী জামায়াত নেতাকে ডিএমপি অফিসে দরখাস্ত নিয়ে গেলে আটক করলেও তারা ছিল নমনীয়। ৫ জুন সমাবেশের অনুমতি না দিলেও তারা অস্থির হননি। আবার জনসমাবেশের বদলে ইনডোর সমাবেশের মৌখিক অনুমতি শেষ মুহূর্তে দিলেও জামায়াত সুবোধ গণতান্ত্রিক আচরণ করে সেটা মেনে নিয়েছে। অর্থাৎ সহিংসতার ফাঁদ পাতা হলেও জামায়াত অত্যন্ত সচেতনতার সাথে কৌশলে তা এড়াতে সক্ষম হয়েছে। ফলে সব কূটকৌশল সম্পূর্ণ পরাজিত হয়েছে। জামায়াতের রাজনৈতিক তৎপরতা এবং সহিংসতাকে সমার্থক প্রমাণের সব আয়োজন ভেস্তে গেছে। এমনকি তারা সমাবেশ স্থলের দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফুল দিয়ে বরণ করেছে এবং প্যাকেট খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করেছে। ফলে এই সমাবেশে জামায়াতের স্ট্র্যাটেজি কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে।
বিগত ১০টি বছর জামায়াতকে নির্বিঘ্নে কোনো কর্মসূচিই পালন করতে দেয়া হয়নি। হত্যা, গুম, হামলা, মামলা, জেল-জুলুম ইত্যাদির মধ্য দিয়েই পার হয়েছে জামায়াতের ১০টি বছর। শীর্ষ পাঁচজন নেতাকে আদালতের রায়ে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। অদ্যাবধি তাদের বর্তমান সব শীর্ষ নেতা কারাগারে আটক রয়েছেন। দীর্ঘ দিন আদালতে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন মামলায় উচ্চ আদালতের জামিন নিয়ে জেল গেটে এলে আবার নতুন মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করে আবার জেলে পুরা হচ্ছে। আসলে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকেই জামায়াত প্রচণ্ড চাপে পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত তাদের কেন্দ্রীয় অফিসসহ সারা দেশের অফিসগুলো তালাবদ্ধ রয়েছে। তাদের পরিসংখ্যান মতে, গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১,৮৬০ জন নেতা জেলে আছেন। অভিযোগ মতে, ১৫ জন নেতাকর্মী গুমের শিকার এবং ২৯৪ জন হত্যার শিকার হয়েছেন গত ১২ বছরে। গত ১৪ বছরে তাদের ৯১ হাজার ২৪৬ জন নেতাকর্মী ও সমর্থককে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়েছে। গুলি করে ও শারীরিক নির্যাতন করে পঙ্গু করা হয়েছে পাঁচ হাজার ২০৪ জনকে (প্রথম আলো: ২২/০৬/২০২৩)। দেশে-বিদেশে জনপ্রিয় তাদের ইলেকট্রনিক চ্যানেল ২০১৩ সালের ৫ মে থেকে বন্ধ হয়ে আছে। প্রিন্ট মাধ্যমগুলো অত্যন্ত চাপের মুখে কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। তাদের গড়ে তোলা দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ব্যাংক দখল করা হয়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠিত উঁচু মানের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ও জবরদখল করা হয়েছে। এতসব মহাবিপর্যয়কর বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও সাম্প্রতিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরে জামায়াত নীরবে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। ২০০৮ সালে যেখানে জামায়াতের রুকন সংখ্যা ছিল ২৩,৮৬৩; এখন সেই সংখ্যা ৭৩,০৪৬ জন। অর্থাৎ গত চৌদ্দ বছরে রুকন সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। এই সংখ্যা দুই লাখ ২১ হাজার থেকে বেড়ে এখন ছয় লাখ ৩৯ হাজার হয়েছে। তাদের মহিলা রুকনের সংখ্যা পাঁচগুণ বেড়েছে এবং মহিলা কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে চারগুণ। আর সহযোগী সদস্যের সংখ্যা ২০০৮ সালের এক কোটি তিন লাখ থেকে বর্তমানে দুই কোটি ২৯ লাখ দাঁড়িয়েছে। তবে পুরুষ সহযোগী সদস্যের সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে জানা যায় (ডেইলি স্টার: ১৪/০৬/২০২৩)। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘We were focused on our orgnisational activities in the last 10 years. Now we are focussing on political activities to wage a movement for our demand for caretaker government’ (ডেইলি স্টার : ১৩/০৬/২০২৩)।
এ দিকে দেশে বামদের একটি অংশ, কয়েকটি গণমাধ্যম ও পত্রিকা এবং একজন বিতর্কিত সাংবাদিক নেতা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের গায়ে আগুন লেগেছে জামায়াতের এই সমাবেশ দেখে। তারা ভেবেছিলেন জামায়াত শেষ হয়ে গেছে। তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছিলেন। কিন্তু এ কী ঘটল ১০ জুন! তারা প্রলাপ বকছেন। বলছেন, জামায়াতকে রাজনীতি করতে দিলে তা দেশের জন্য আত্মঘাতী হবে। এই গোষ্ঠীটি আসলে বস্তুনিষ্ঠহীনভাবে ব্যক্তিস্বার্থের মোহেই এসব বলছেন। জামায়াত তো সেই আশির দশক থেকেই এ দেশের রাজনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে। দেশ কী সে জন্য ধ্বংসের দিকে গেছে? বরং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে ক্ষমতায় যাওয়া বা টিকে থাকার রাজনীতির জন্য; যেখানে মোটা দাগে বড় দলগুলো জড়িত। জামায়াতের দু’জন মন্ত্রী ছিলেন ২০০১ এর সরকারে। তাদের বিরুদ্ধে কী কোন দুর্নীতির অভিযোগ আছে? ১৯৮৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সব সংসদেই জামায়াতের এমপিদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সেসব এমপিদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, জমিদখল, ভ‚মিদস্যুতা, দুর্নীতি, ঘুষ, মানবপাচার, অস্ত্রের মহড়া ইত্যাদির কোনো একটি অভিযোগও কী পাওয়া গেছে? এসব অভিযোগ কাদের বিরুদ্ধে আছে তা আমরা সবাই জানি। সুতরাং সেসব অন্ধ জামায়াতবিরোধীদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অন্ধত্ব বাদ দিয়ে নির্মোহভাবে বিচার করুন, কারা রাজনীতি করলে দেশ ধ্বংস হয়? আসলে ইসলামের নাম শুনলেই যাদের চোখ বন্ধ হয়ে যায় তাদের অন্তরচক্ষুও তাদের সাথে প্রতারণা করে। কিছু দিন আগে এরাই ১১৬ জন দেশ বরেণ্য আলেম ওলামাকে ধর্মব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে সরকারের কাছে মিথ্যা বানোয়াট প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন।
জামায়াতের ১০ জুনের সমাবেশটি ছিল একটি ইনডোর সমাবেশ, যা স্বাভাবিক কারণেই বেশ বড়সড় হয়ে পড়েছে। জামায়াত তাদের কৌশল ও রীতি অনুযায়ীই সমাবেশ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু এটিকে মহা ইনডোর সমাবেশে রূপ দিয়েছে সরকারি দল, তাদের সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবী, কিছু চিহ্নিত মিডিয়া এবং বাম রাজনীতিকরা নিজেদের চায়ের কাপে ঝড় তোলে। আমরা যদি গণতন্ত্রের কথা বলি, গণতন্ত্রের চর্চা করি তাহলে অবশ্যই জামায়াতের সমাবেশের অধিকার রয়েছে, যা অনেক দিন পরে হলেও আমাদের মন্ত্রী মহোদয়রা এখন বলেছেন।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক