স্বদেশ ডেস্ক:
এতদিন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারের পর পরিবেশ শান্ত থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নিচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়রপ্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি প্রদানের অভিযোগ করেছেন কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের ভাষ্য, অব্যাহত হুমকিতে তাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এক প্রকার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। আগামী ২৫ মে ভোটের দিন কেন্দ্রে এজেন্ট পাওয়া নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দুই স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী ও ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী। ২০১৮ সালে এই সিটি নির্বাচনের দিনেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের হয়রানির অভিযোগ ছিল ব্যাপকভাবে। তবে এবারকার নির্বাচনী পরিবেশ এ পর্যন্ত ভালো বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান।
স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, কয়েকদিন ধরে তাদের প্রচারে বাধা দেওয়া হয়েছে। টঙ্গী
এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন এলাকায় তাদের কর্মী-সমর্থকদের প্রশাসনের লোক দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর লোকজনও কেন্দ্রে এজেন্ট না দিতে হুমকি দিচ্ছে। এমন অবস্থায় সব জায়গায় এক আতঙ্ক বিরাজ করছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু কোনো পরিবেশ নেই। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কেউ তো আর নির্বাচনী কাজে আসে না। আমরা সে সুযোগটুকুও পাচ্ছি না।
ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী গাজী আতাউর রহমান বলেন, নির্বাচনের প্রথম থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাইনি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজার হাজার লোকজন নিয়ে প্রচার করেন। তার কোনো দোষ হয় না। আমরা বের হলেই জরিমানা করে দিচ্ছে। সবার জন্য সমান সুযোগ না হলে নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, তা দেশের মানুষই বিবেচনা করবে। তবে তিনি আশা করেন, যদি নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে ঠিকমতো এজেন্ট রাখা যায়, তা হলে ভালো একটি ফল অর্জন করা যাবে।
অপর স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম রনি বলেন, নির্বাচনে এতদিন ভালোভাবে প্রচার-প্রচারণা করে এলেও এখন কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে নির্বাচন শেষ হলে তাদের দেখে নেওয়া হবে। এভাবে হুমকির পর কেন্দ্রে এজেন্টদের ধরে রাখা অনেকটাই চ্যালেঞ্জ হবে। তিনি আরও বলেন, এরপরও আমি নির্বাচনের দিন আশাবাদী, জনগণের ভোটের প্রতি সম্মান জানিয়ে অন্তত ভালো একটি নির্বাচন উপহার দেবে নির্বাচন কমিশন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান বলেন, এজেন্টদের হুমকি দেওয়া বা হয়রানি করার অভিযোগ ঠিক নয়। কেননা সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতিই আমার শ্রদ্ধা আছে। আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। তিনি আরও বলেন, এবার গাজীপুরে নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এ লক্ষ্যে এখন চলছে শেষ পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতা। নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন প্রার্থী অংশ নিলেও আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান, স্বতন্ত্র জায়েদা খাতুন ও স্বতন্ত্র সরকার শাহনুর ইসলাম রনির মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। তবে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমানও ভালো ফল করতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
উন্নয়ন-অগ্রগতি চলমান রাখতে নৌকায় ভোট দিন : মায়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নৌকা প্রতীকের প্রধান সমন্বয়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেছেন, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি চলমান রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিন। প্রধানমন্ত্রী আপনাদের একজন সৎ ও যোগ্য প্রার্থী দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, আজমত উল্লা খান মেয়র হলে গাজীপুর একটি উন্নত সিটি করপোরেশন হবে। আপনারা শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। গতকাল দুপুরে টঙ্গীর শ্রমিক অধ্যুষিত বিসিক এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে উন্ডি গ্রুপের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কাছে ভোট চাওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, উন্ডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে টঙ্গী বিসিক এলাকায় ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের নেতৃত্বে নৌকার পক্ষে গণসংযোগ করা হয়।
প্রশাসনের বিরূপ আচরণের অভিযোগ
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী গাজী আতাউর রহমানের নির্বাচনী প্রচারে প্রশাসন বিরূপ আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এমএ হানিফ সরকার। এর প্রতিকার চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গতকাল দুপুরে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস পেয়ে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে নির্বাচনী প্রচারে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা বিধিবহির্ভূতভাবে তাদের জরিমানা করে সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এমন ঘটনায় তাদের কর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
আিভযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ১৪ মে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বড় ব্যানার টানানোর দায়ে ৫ হাজার টাকা, ১৭ মে একই অভিযোগে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ হাজার টাকা, ১৯ মে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে মাইকিংয়ের অনুমতিপত্র দেখাতে দেরি করায় ৩ হাজার টাকা, একই দিন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ২০ মে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে নামাজের জন্য মসজিদে গেলে সেখানে তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং ২১ মে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারকালে গাড়ি থামিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। প্রার্থীকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।