স্বদেশ ডেস্ক:
নিউইয়র্কের বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশীয় ইমিগ্রান্টদের বড় বাজার জ্যাকসন হাইটসে প্রতিবছর চাঁদরাতে যেভাবে কেনাকাটা শুরু হয়, মেহেদি আঁকা হয় এবং সম্প্রতিকালে যোগ হওয়া গান বাজনা, নাচ এবং আতশবাজী তা এখন আর কারোরই চোখ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নিউইয়র্ক টাইমসের মত বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালী পত্রিকারও চোখ এড়ায়নি। বৃহস্পতিবার রাতের এই চাঁদরাতের মেলার প্রধান আকর্ষণ কেনাকাটা নয়, হাতে মেহেদি রাঙানো নয়, প্রধান আকর্ষণ আনন্দ। হাজারো মানুষের বাঁধভাঙা আনন্দের উল্লাস। এই এলাকার কাউন্সিলম্যান শেকার কৃষ্ণান নিউইয়র্ক টাইমসকে যথার্থই বলেছেন, It’s a reflaction of the vibrancy, power and presence of our South Asian Muslim community in Jackson Heights, our Bangladeshi community in particular.
নিউইয়র্ক টাইমস লিখছে জ্যাকসন হাইটসের এই চাঁদরাতের মেলার মূল জায়গা ডাইভারসিটি প্লাজা। আর ছিল ৭৩ স্ট্রিট। সেখানে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। ছিল নাচ ও গান। চাঁদরাতের মেলায় নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টারের দেখা হয় মূলধারার পপ আর্টিস্ট বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত অনিক খানেরও। অনিক খান থাকেন এস্টোরিয়ায় কিন্তু প্রতি বছর চাঁদরাতে জ্যাকসন হাইটসে আসেন- জানান টাইমসকে।
টাইমস লিখছে, রুমানা আমরিন নামে এক তরুণী হেনা আর্টিস্টের কাছ থেকে মেহেদি আঁকার জন্য দীর্ঘ লাইন। অনেকে জানান তারা ঘন্টাধিক সময় লাইনে অপেক্ষা করছেন। রুমানা একটি টেবিলে বসে মেহেদি আঁকছিলেন। পরে তিনি টাইমসকে জানান তিনি ভোর ৩টা পর্যন্ত মেহেদি এঁকেছেন।
টাইমস লিখছে, Eid Mubarak লেখা পতাকা ও বান্টিং ছিল সর্বত্র। গাড়ির জানালা খুলে ফুল ভল্যুমে বাজছিল বাংলাদেশসহ অন্য (মুসলিম) দেশের জাতীয় সংগীত। ভেন্ডররা টেবিল সাজিয়ে বিক্রি করছিল সালওয়ার কামিজসহ সোনার গহনা। ফায়ার ওয়ার্কসে আকাশ মাঝে মাঝেই ঝলমল করে উঠছিল।
টাইমস বলছে, রাত সাড়ে নটায় শিল্পীরা মঞ্চে ওঠেন ক্লাসিকেল গাইবার জন্য। তারপর শুরু হয় বাংলা ফোক গান। তাদের গানের সাথে দর্শকরাও সমস্বরে গাইছিলেন। গানের পর্ব শেষ হয় মমতাজ বেগমের গান ‘মরার কোকিলে’ গাওয়ার মধ্য দিয়ে।
সাদিবা হাসান এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশী ইমিগ্রান্টদের সাথেই কথা বলেছেন। শেকার কৃষ্ণান ব্যতিক্রম, কারণ তিনি কাউন্সিলম্যান। তিনি ফোনে জ্যামাইকায় আয়োজিত হিলসাইড এভেন্যুতে চাঁদরাতের মেলায় একজন হেনা আর্টিস্টের সাথেও কথা বলেন।
উল্লেখ্য নিউইয়র্ক টাইমস চাঁদরাতের জমজমাট স্বতঃস্ফূর্ত মেলার খবর প্রকাশিত হওয়ায় বাংলাদেশীরা আনন্দিত। অনেকে খবরটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের এই প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ লেখা সাইনের ছবিসহ অনেকগুলি ছবি ছাপা হয়েছে। পপ শিল্পী অনিক খানের ছবিও।
চাঁদরাতে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় বাংলাদেশ স্ট্রিটে তার আয়োজক ছিল জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসী। এই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট শাকিল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক জেড আলম নমি। শাকিল মিয়া সাপ্তাহিক বাঙালীকে জানান, চাঁদ দেখা যাওয়ায় মাগরিবের নামাজের পর আমরা অনুষ্ঠান শুরু করি। বাংলাদেশ স্ট্রিটে নির্মিত মঞ্চে পর্যায়ক্রমে গান করেন শাহ মাহবুব, কৃষ্ণা তিথি, শশী, কামরুজ্জামান বকুল, ত্রিনিয়া হাসান, রানো নাওয়াজ, শামীম সিদ্দিকী, চন্দ্রা রায় প্রমুখ। রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত গান চলে। শাকিল মিয়া জানান, আমাদের অনুমতি ছিল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। কিন্তু রাত দশটাতেও অনেক শিল্পী ছিলেন। মানুষে ভরা ছিল স্ট্রিট। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ করতে হয়, যদিও কেনাবেচা এবং মেহেদি আঁকা চলে ভোররাত পর্যন্ত।