স্বদেশ ডেস্ক:
দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরস্পরের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক করলে সেটিকে কোনোভাবেই ধর্ষণ বলা যায় না বলে রায় দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্ট। আজ বুধবার এক ধর্ষণ মামলায় রায় দিতে গিয়ে এমন তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শম্পা দত্ত পাল। ১৪ বছর আগের এ মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে বলেন, সম্পর্কে টানাপোড়েন হলেই এই ধরনের বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
মামলার সূত্র দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার ডানকুনি থানা এলাকায় দুই মুসলিম পাত্র-পাত্রীর পারিবারিকভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত হয়। দুই পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু শারীরিক মেলামেশার পর হবু পাত্র অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে তার কর্মস্থল গোয়াতে বসবাস শুরু করে।
এদিকে, যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেই পাত্রী ডানকুনি থানায় ওই ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন।
মামলার আসামিদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের ৪১ ধারায় নোটিশ পর্যন্ত দেয়নি। সোজা পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ৩৭৬ এবং অন্যান্য ধারায় মামলা রুজু করে। ওই পাত্রের বাবাকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। যদিও পরে তিনি নিম্ন আদালতে জামিন পান। পরে পাত্রীর করা মামলার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে পালটা রিট মামলা দায়ের করে পাত্রের পরিবার।
আজ শুনানিতে আবেদনকারীর আইনজীবী আশিসকুমার চৌধুরী বলেন, পাত্রীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। কারণ দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক। সেক্ষেত্রে দুজনের সম্মতিতেই শারীরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এটাকে ধর্ষণ বলে গণ্য করা যায় না। দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে এবং মেয়ে নিজেদের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্ক করে, সেক্ষেত্রে ছেলের পরিবারের সদস্যদের কোনোভাবেই দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।
যদিও ওই নারীর পরিবারের আইনজীবী আদালতে জানান, অভিযুক্ত ছেলের পরিবার ধর্ষণে মদদ দিয়েছে এবং মিথ্যা প্রতিশ্রতি দিয়ে মেয়েটির সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
উভয়পক্ষের আইনজীবী বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি শম্পা দত্ত পাল নির্দেশ দেন, ওই নারীর পক্ষ থেকে যে অভিযোগ থানায় করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন, তার কোনো আইনি বৈধতা নেই। ছেলের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বাতিল করে দেন তিনি।
এ সময় বিচারপতি পর্যবেক্ষণ দেন, দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও মেয়ে নিজেদের সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে সেটা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয় না।