স্বদেশ ডেস্ক:
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা, সংসদ সদস্য ও মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজ নিজ এলাকায় থাকার কথা। শারীরিক অসুস্থতা কিংবা দলীয় আয়োজনের কারণে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকায় ঈদ করেন বলে জানা গেছে। কোভিডকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার জানিয়েছেন, ঈদের দিন বিচারপতিবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিকবৃন্দ, সিনিয়র সচিব, সচিব ও সমপর্যায়ের বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন শেখ হাসিনা। গত বুধবার দলীয় এক আয়োজনে মুঠোফোনে যুক্ত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এ সময় তিনি দলের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে গিয়ে তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, আনন্দ ভাগাভাগি করার পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের কাছে যাওয়ারও নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে বিগত সময় আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উন্নয়ন কর্মকাÐ করেছে সে সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার নির্দেশ দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার ভাষ্য- সরকারের উন্নয়নেরও ভ্রান্ত ধারণা দিচ্ছে দেশের কিছু রাজনৈতিক দলের নেতা। জনগণের মধ্যে কোনো ভ্রান্তি থাকলে সঠিক তথ্য দিয়ে তা দূর করার নির্দেশ দেন তিনি।
আমির হোসেন আমু: আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দলটির উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু রাজধানীর ইস্কাটনের বাসায় ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন। ইতোমধ্যে নিজ এলাকা ঝালকাঠিতে গিয়ে ঘুরে এসেছেন।
তোফায়েল আহমেদ: উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য তোফায়েল আহমেদ ঈদ করেন রাজধানী ঢাকাতেই। ঈদের দিন বনানীর বাসায় ছিলেন। তিনিও নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে এসেছেন বলে জানা গেছে।
ওবায়দুল কাদের: আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদ করেন ঢাকায়। তবে নোয়াখালীতে নিজের নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখছেন।
মতিয়া চৌধুরী: আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরীও ঈদ করেন ঢাকায়। ঈদের আগে নির্বাচনী এলাকায় আসা-যাওয়া করেন তিনি।
আবদুর রাজ্জাক : সভাপতিমÐলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ঈদ করেন ঢাকায়। তবে ঈদের আগে তিনি নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইলে ঘুরে এসেছেন। ঈদের পরেও নিজ এলাকায় যাবেন তিনি।
সভাপতিমÐলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান ও জাহাঙ্গীর কবির নানকও ঈদ করেন ঢাকায়। তবে সভাপতিমÐলীর আরেক সদস্য আবদুর রহমান ঈদ করেন নিজ এলাকা ফরিদপুরে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ঈদ করেন নিজ নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে। আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ঈদ করছেন দেশের বাইরে। ঈদের আগেই তিনি নিজ এলাকা কুষ্টিয়ায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। মাদারীপুরে ঈদ করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি ইতোমধ্যে তার নিজ এলাকা ঘুরে এসেছেন।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের অনেকে তাদের নিজ নিজ এলাকা ঘুরে এসেছেন, আবার কেউ কেউ ঈদ বাড়িতে করছেন। এ ছাড়া দলের সংসদ সদস্য ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রমজান মাসজুড়েই নিজ এলাকায় ঈদসামগ্রী নিয়ে সরব ছিলেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান, তিনি ২৩ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত নিজ এলাকা জয়পুরহাটে অবস্থান করবেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জনগণের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় এবং গণসংযোগ ও ছোট ছোট সভার মধ্য দিয়ে নেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও মানবকল্যাণে সাফল্যগাথা প্রচার করব।’
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এবং তার স্ত্রী যুব ও মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল তাদের নিজ এলাকা আটপাড়া ও কেন্দুয়ায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিএনপি নেতারা
বিএনপির অনেক নেতা ঢাকা ছেড়ে এলাকায় গেছেন। নিজ নিজ এলাকায় নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেবেন তারা। রাজধানীতেও ঈদ উদযাপন করেন অনেকে। জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ ঢাকায় ঈদের নামাজ আদায় করে এলাকায় যান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় ঈদ করেন। ঈদের পর তার নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করার কথা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামের নিজ এলাকায় ঈদ করেন।
ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান ঢাকায় আছেন। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের ঈদের দিন নিজ এলাকা নরসিংদীতে যান। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর এবং সালাউদ্দিন আহমেদ ভারতে আছেন।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাড়ে চার মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ অনেকে ঢাকায় ঈদ করেন।
ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু নোয়াখালীতে, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বরিশালে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরে নিজ এলাকায় ঈদ করেন। কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহের নিজ এলাকা থেকে ঘুরে এসেছেন। ঢাকায় ঈদ করে তিনি আবারও নিজ এলাকায় যাবেন।
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদের নিজ এলাকা মুন্সীগঞ্জে যান। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল নিজ এলাকা জামালপুরের মেলান্দহে, আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, তাবিথ আউয়াল ও প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ঢাকায় ঈদ করেন। ঢাকা মহানগরের আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনু নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করেন।
রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে অনেক নেতা এলাকায় যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছেন। এ কারণেও অনেক নেতা ঢাকায় ঈদ করেন বলে জানিয়েছেন। মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি নিজ এলাকা ল²ীপুরে ঈদ করেন।
(ঈদের আগে ঢাকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী)