স্বদেশ ডেস্ক:
তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, গত সোমবারের ভূমিকম্পে ধসে যাওয়া অনেক ভবনের নির্মাণ কাজের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১১৩টি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তুরস্কের পুলিশ এরই মধ্যে ভবন নির্মাণ ঠিকাদারসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে দক্ষিণ তুরস্কে বিক্ষোভের কারণে অনেক এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় এই ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
বহু বছর ধরেই বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছিলেন যে ব্যাপক দুর্নীতি ও সরকারি নীতির কারণে তুরস্কে নতুন যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলো মোটেই নিরাপদ নয়।
যেসব ঠিকাদার ভবন নির্মাণের নিয়ম-কানুন না মেনে কাজ করেছে, তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল এই সরকারি নীতির আওতায়। এর উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কের নির্মাণ খাত যেন ভালো ব্যবসা করতে পারে। তুরস্কের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলেও এটা করা হয়েছিল।
কিন্তু ভূমিকম্পে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ে। এরপর প্রশ্ন উঠে, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এত বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হলো কি না।
প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান ক্ষমতায় আছেন প্রায় ২০ বছর ধরে। কিন্তু তুরস্কে এখন একটি নির্বাচন আসন্ন। এবং এই ঘটনায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান তোপের মুখে আছেন।
এরদোগান তার সরকারের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু দুর্যোগকবলিত এলাকায় এক সফরের সময় তিনি এই বিপর্যয়ের জন্য ভাগ্যকেই দোষারোপ করেন। ‘এরকম ঘটনা সবসময় ঘটেছে, এটি নিয়তির অংশ,’ বলেন তিনি।
এদিকে ভূমিকম্পের ছয় দিন পর তুরস্কে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে।
শনিবার হাতাই প্রদেশে দুটি অজ্ঞাতনামা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের পর সেখানে জার্মান ও অস্ট্রিয়ান উদ্ধারকর্মীদের কাজ বন্ধ রাখতে হয়।
অস্ট্রিয়ান উদ্ধারকর্মী দলের লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিয়ের কুগেলওয়েইস বলেন, ‘সেখানে এখন যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তার মধ্যে কারো জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ।’
তুর্কি সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় সেখানে আবার উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। দক্ষিণ তুরস্ক ও উত্তর সিরিয়া জুড়ে লাখ লাখ মানুষ এখনো গৃহহীন। প্রতিরাতেই সেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যাচ্ছে।
জাতিসঙ্ঘ বলছে, দুর্যোগকবলিত এলাকায় আট লাখের বেশি মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। অন্যদিকে সেখানে কর্মরত জাতিসঙ্ঘের ত্রাণ সংস্থার কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন যে এই ভূমিকম্পে শেষ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা এখনকার দ্বিগুণে পৌঁছাতে পারে।
সিরিয়ায় এখন নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজার। তবে শুক্রবারের পর আর নতুন করে নিহতের সংখ্যা জানানো হচ্ছে না। নতুন কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা কমছে। যদিও এরই মধ্যে বেশ কিছু অবিশ্বাস্য উদ্ধার অভিযান সফল হয়েছে।
শনিবার গাজিয়ানটেপ প্রদেশে একটি পরিবারের পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে হাতাই প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের নিচে ১৩২ ঘণ্টা আটকে থাকার পর সাত বছরের এক মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।
জাতিসঙ্ঘের ত্রাণ সংস্থার প্রধান এই ভূমিকম্পকে ওই অঞ্চলে গত এক শ’ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প বলে বর্ণনা করেছেন। শনিবার তিনি তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।
বিবিসির লিস ডুসেটকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তা মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ‘আমার মনে হয় এটি আমার দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এবং যে ধরনের আন্তর্জাতিক সাড়া আমরা পেয়েছি সেটাও খুব অসাধারণ।’
গ্রিফিথস এই দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য আঞ্চলিক রাজনীতি আপাতত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। মনে হচ্ছে, তার এই আহ্বানে কিছুটা সাড়া মিলছে। তুরস্ক ও আর্মেনিয়ার মধ্যে সীমান্ত গত ৩৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম খুলে দেয়া হয়েছে, যাতে করে এই সীমান্ত পথে ত্রাণ সাহায্য পাঠানো যায়।
সূত্র : বিবিসি