রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন

আমেরিকায় আবারও কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার অভিযোগ, দেশজুড়ে শোরগোল

আমেরিকায় আবারও কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার অভিযোগ, দেশজুড়ে শোরগোল

স্বদেশ ডেস্ক:

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবারও পুলিশের বিরুদ্ধে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার  অভিযোগ  উঠেছে। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শোরগোল সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, এবার হত্যার শিকার আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিস কুলার্সের চাচাতো ভাই কিনান অ্যান্ডারসন।

লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এলএপিডি) ৩ জানুয়ারি পুলিশ কর্মকর্তার বডি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ করেছে। সেখানে অ্যান্ডারসনকে বলতে শোনা যায়, “তারা আমাকে জর্জ ফ্লয়েড বানানোর চেষ্টা করছে।”

 

এ সপ্তাহে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, অ্যান্ডারসন ফুটপাতে শুয়ে আছে এবং অফিসাররা তাকে ধরে রেখেছে।  এসময় অ্যান্ডারসনকে প্রতিরোধ বন্ধ করতে বলছে পুলিশ। উল্টো চিৎকার করে কর্মকর্তাদের কাছে সাহায্য অনুরোধ করছিলেন অ্যান্ডারসন। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

৩১ বছর বয়সী কিনান অ্যান্ডারসন একজন শিক্ষক। সান্তা মনিকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে ডিজিটাল পাইওনিয়ার্স একাডেমি নামে এক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন অ্যান্ডারসন। ৬ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে তার।

মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটের এক গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৮০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি সহিংসতায় ৩০ হাজার ৮০০ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ মৃত্যুর খবর দেশটির সরকারি নথিতে উঠে আসেনি।

এদিকে ২০২৩ সালের প্রথম কয়েকদিনে লস অ্যাঞ্জেলসে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এলএপিডি) হাতে তিনটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তারা হলেন- ৪৫ বছর বয়সী স্মিথ, অ্যান্ডারসন আর ৩৫ বছর বয়সী অস্কার সানচেজ।

বুধবার তিনটি ঘটনার বডি ক্যামেরা ফুটেজ প্রকাশ করে এলএপিডি প্রধান মিশেল মুর বলেছেন, এসব মৃত্যুর ঘটনায় তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিষয়গুলো আরও ভালভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে অ-হিস্পানিক কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর ওপর পুলিশি সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি।

এ ঘটনায় ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিস কুলার্স বলেছেন, এখনও বেঁচে থাকার যোগ্য কিনান। তার সন্তানের বাবার কাছে বেড়ে ওঠার অধিকার রয়েছে।

পুলিশ বলছে, স্থানীয় সময় ৩ জানুয়ারি বেলা ৩ টা ৩৫ মিনিটে লস অ্যাঞ্জেলেসের ভেনিস এলাকায় একটি ট্র্যাফিক দুর্ঘটনার জন্য অ্যান্ডারসনকে ডেকেছিল পুলিশ।

অ্যান্ডারসন দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিল অন্যান্য গাড়ি চালকরা। একইসঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন।

ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, অ্যান্ডারসনের কাছে যখন পুলিশ পৌঁছান তখন তিনি যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। প্রধান কর্মকর্তাকে বলছেন, “কেউ আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে,” যদিও ক্যামেরায় কোনও দৃশ্যমান হুমকি দেখা যায়নি।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, অ্যান্ডারসনকে “দেয়ালের সাথে উঠতে” নির্দেশ দেন একজন অফিসার। অ্যান্ডারসন তা মেনে ফুটপাতে উঠে হাঁটু গেড়ে বসেন, মাথার পেছনে হাত দিয়ে চাপ দেন। পুলিশের নির্দেশ মতোই কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু আরও পুলিশ আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি উঠে যান। এবং তাকে থামানোর অনুরোধ উপেক্ষা করে রাস্তায় দৌড়ে দেন।

এরপর পুলিশ যখন অ্যান্ডারসনের কাছে পৌঁছায় এবং তাকে বিভিন্নভাবে শান্ত করার চেষ্টা করে এবং আটক করার চেষ্টা করে, তখন তিনি প্রাথমিকভাবে চিৎকার করার আগে অনুনয় করে বলেন, “দয়া করে সাহায্য করুন, তারা আমাকে জর্জ ফ্লয়েড করার চেষ্টা করছে!”

বডি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশের সময় পুলিশ কর্মকর্তা মুনিজ দাবি করেছেন, অনেকটা উত্তেজিত ছিল আন্ডারসন। সে পুলিশকে অসহযোগিতা করেছিল একইসঙ্গে কর্মকর্তাদের প্রতিহতের চেষ্টা করেছে।

আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, অ্যান্ডারসনের পিঠের উপর শুয়ে আছেন একজন কর্মকর্তা, আর এক পুলিশ তাকে হাতকড়া পড়াচ্ছেন।

ঘটনাস্থলে অ্যান্ডারসনকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার ডিপার্টমেন্ট। এরপর তাকে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সান্তা মনিকা হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

অ্যান্ডারসন ওয়াশিংটনে বসবাস করলেও লস অ্যাঞ্জেলেসে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। সূত্র: সিএনএন, আল জাজিরাফক্সনিউজ

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877