শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ডলার সঙ্কটে বেকায়দায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

ডলার সঙ্কটে বেকায়দায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

স্বদেশ ডেস্ক:

সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সার, ডিজেল, বৈদ্যুতিক সারঞ্জামসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপন (এলসি খোলা) করতে সরকারি ব্যাংকগুলোর ওপর অনেকটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারি ব্যাংকগুলোতেও এ বাধ্যবাধকতার কারণে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হচ্ছে। কিন্তু এসব এলসির দায় পরিশোধে পর্যাপ্ত রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় না পাওয়ায় ডলার সংস্থান করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আংশিক সহায়তা করা হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর বকেয়া এলসির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল বুধবার সোনালী ব্যাংকের ২৭৮ মিলিয়ন ডলার চাহিদার বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সহায়তা করা হয়েছে মাত্র ১২.২৪ মিলিয়ন ডলার। বাকিটা সোনালী ব্যাংক পরিশোধ করতে পারেনি। এভাবে পণ্য আমদানির পুঞ্জীভূত বকেয়া ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে এক দিকে ব্যাংকের সুনাম নষ্ট হচ্ছে, তেমনি যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় জরিমানা গুনতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক সূত্র গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, প্রতিদিনই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কেনাকাটার জন্য ডলার সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী ডলার সংগ্রহ করতে না পারায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদার এক পঞ্চমাংশও সরবরাহ করছে না। যেটুকু পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়েই এলসির দায় পরিশোধ করা হচ্ছে। আর যে অংশ অবশিষ্ট থাকছে তার সাথে পরের দিন নতুন এলসির দায় যুক্ত হচ্ছে। এভাবে সোনালী ব্যাংকের পুঞ্জীভূত বকেয়া এলসির দায় বেড়ে হয়েছে গতকাল পর্যন্ত আড়াই শ’ মিলিয়ন ডলার। এতে ব্যাংকটি দুইভাবে লোকসান গুনছে। প্রথমত, এলসির দায় যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারায় বিদেশী ব্যাংকগুলোর কাছে সোনালী ব্যাংকের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এতে ভবিষ্যতে সোনালী ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিদেশী ব্যাংক সহজেই এলসি খুলতে চাইবে না। পাশাপাশি এলসির ঋণ বকেয়া হলে বকেয়া ঋণের বিপরীতে বাড়তি চার্জ পরিশোধ করতে হয়। এতে বেড়ে যায় ব্যাংকের ব্যয়। ইতোমধ্যে বড় অংকের জরিমানা গুনতে হয়েছে সোনালী ব্যাংককে।

এ দিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ ডলারের চাহিদাপত্র দেয় তার প্রায় সমপরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা সংরক্ষণে রাখতে হয়। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায় চাহিদার এক পঞ্চমাংশও সরবরাহ করা হয়নি। অথচ দিনের শুরুতে জানা গেলে ওই অর্থ অলস বসিয়ে না রেখে কলমানি মার্কেটে একদিনের জন্য ধার দিলেও বেশ কিছু মুনাফা পাওয়া যেত। তা না হওয়ায় একদিকে মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অপর দিকে দিন শেষে কাক্সিক্ষত ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এতে গুনতে হচ্ছে ডেমারেজ।

সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এখনো সোনালী ব্যাংক যেসব বিদেশী ব্যাংকের পণ্য আমদানির দায় পরিশোধ করতে পারছে না তার কোনো কোনোটি ইতোমধ্যে ৬ বার ডেফার্ড হয়েছে। এ দায় দিন দিন বেড়েই চলছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি সরকারি ব্যাংকগুলোর স্থানীয় মুদ্রারও সঙ্কট বেড়ে যাচ্ছে। এতে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলো। গতকাল শুধু অগ্রণী ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে ১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা ধার করেছে। এর মধ্যে ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে ৬০২ কোটি টাকা এবং ৬৪০ কোটি টাকা কলমানির মাধ্যমে। এতে প্রতি ১০০ টাকায় অগ্রণী ব্যাংকের ব্যয় করতে হয়েছে কলমানির জন্য পৌনে সাত এবং রিভার্স রেপোর জন্য সাড়ে ৭ শতাংশ সুদ। অনুরূপভাবে জনতা ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ সুদে ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে ৮৩০ কোটি টাকা ধার করেছে।

এ দিকে নগদে ডলার কিনতে গিয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও নগদ টাকার সঙ্কটে পড়েছে। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নগদে ডলার কিনতে হচ্ছে। অপর দিকে, নানা ছাড়ের কারণে যারা ঋণ নিয়েছেন তাদের বড় একটি ভাগ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছেন না। অপর দিকে, কাক্সিক্ষত হারে আমানত আসছে না। সবমিলেই ব্যাংকগুলো নগদ টাকার সঙ্কটে পড়েছে। আর এভাবেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো লোকসান গুনছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877