স্বদেশ ডেস্ক:
ডেঙ্গু প্রতিদিন যেভাবে বাড়ছে তাতে মানুষরে মধ্যে এখন ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে আলাদা ওয়ার্ড তৈরি করেও চাপ সামলাতে পারছে না। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে আক্রান্তরা।
চলতি বছরের ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ৭৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা বলছে, মশা নিধনে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। লার্ভা নিধনে নামকাওয়াস্তে অভিযান ও প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বাস্তবিক অর্থে মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী।
সরেজমিনে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
শিশু হাসপাতালে ঘুরে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় দেখা যায়।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, চলতি মাস অক্টোবরে প্রথম ১২ দিনে ১১৯ শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে। তেমনি ঢাকা মেডিক্যাল, মুগদা জেনারেলসহ কয়েকটি হাসপাতালে রোগীরা শয্যা সঙ্কটে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির বলেন, দিন দিন ডেঙ্গু যেভাবে বাড়ছে তাতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। ডেঙ্গু চিকিৎসার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমরা আরো বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে ঢাকার বাইরেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করছেন ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মানুষেরা। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে মারা যাচ্ছে আক্রান্তরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সবুর খান বলেন, ডেঙ্গু বিস্তার সাধারণত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি কমে আসে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্য রকম মনে হচ্ছে, অক্টোবর মাস এখন প্রকোপ বাড়ছে। যা উদ্বেগজনক দিকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এবার ডেঙ্গু প্রকোপ নভেম্বর মাঝামাঝি বা মাসের শেষ পর্যন্ত থাকতে পারে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরে প্রতিনিয়ত কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে। ড্রামসহ বিভিন্ন কৌটা আর খানাখন্দে পানি জমে। এগুলো খুব বেশি তদারকি হয় না। ফলে ওই সব স্থানে ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি হয়। সিটি করপোরেশন বাসাবাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন। কিন্তু কনস্ট্রাকশনের জায়গাগুলো তো টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। সেখানে সাধারণ মানুষ যায় না, সিটি করপোরেশনও যায় না। যে কারণে সবসময় ডেঙ্গু মশা আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২২ হাজার ৫১৭ জন। যা গত বছর ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন, ২০২০ সালে ছিল ১ হাজার ৪০৫ জন। তবে সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৯ সালে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী অফিসার (সিইও) অতিরিক্ত সচিব সেলিম রেজা বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের বছরব্যাপী অভিযান অব্যাহত আছে। এখন ডেঙ্গু সিজন সেজন্য আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। আমরা আশা করছি এ মাসের মধ্যেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অতিরিক্ত সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা হার্ট লাইনে আছি, অভিযানে অনেক বাড়ির মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের অভিযানের পাশাপাশি সকলকে আরো সচেতন হতে হবে। সচেতন থাকলে ডেঙ্গুর জন্ম হবে না।
সূত্র : ইউএনবি