ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করায় গ্রেপ্তার করা হয়েছেন সাংবাদিক প্রশান্ত কানোজিয়া। গত শনিবার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন প্রশান্ত। স্বামীর গ্রেপ্তারের বিষয়ে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র কাছে মুখ খুললেন তার স্ত্রী জগীশা অরোরা।
জগীশা জানান, শনিবার সকালে এক বন্ধুর ফোনে ঘুম ভাঙে কানোজিয়া দম্পতির। ফোনে তিনি বলেন, সাদা পোশাকের দুই ব্যক্তি সকালে থেকেই প্রশান্তের নাম ধরে এলাকায় খোঁজ খবর করছে। এরপরেই দুপুরে সাদা পোশাকের দুই ব্যক্তি এসে আটক করে প্রশান্তকে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় তাকে।
প্রশান্তের স্ত্রীর ভাষায়, ‘ভালো করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটে গেল পুরো ব্যাপারটা। বাড়ির নিচে ওদের সঙ্গে কথা বলার পর মিনিট পাঁচেক পরে প্রশান্ত ওপরে এসে বলেন, পোশাক পাল্টে তাকে যেতে হবে অচেনা ওই দুই ব্যক্তির সঙ্গে।’
দিল্লি পশ্চিমের বিনোদ নগরের বাড়ি থেকে দুই ব্যক্তি প্রশান্তকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পরেই তাকে গ্রেপ্তার করে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। বর্তমানে লক্ষ্ণৌর জেলেই আছেন ২৬ বছরের এই সাংবাদিক।
প্রশান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি টুইটারে আপত্তিকর মন্তব্য পোস্ট করেছেন যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রাতে লক্ষ্ণৌর হজরতগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সাব ইন্সপেক্টর। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রশান্তের বিরুদ্ধে এই সাব ইন্সপেক্টরের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, কানোজিয়া একটি ভিডিও টুইটার ও ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, এক নারী যোগী আদিত্যনাথের অফিসের সামনে সংবাদমাধ্যমের সামনে জানাচ্ছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।
জগীশা এ বিষয়ে জানান, ‘লাখনৌ থানার পুলিশ গতকাল রাত সাড়ে দশটার সময় ফোনে প্রশান্তের সঙ্গে কথা বলিয়েছেন। প্রশান্ত জানিয়েছেন, জেলে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তার। জগীশাকেও তিনি নিশ্চিন্তে থাকার পরামর্শ দেন।’
একই সঙ্গে তিনি জানান, ছেলের গ্রেপ্তারির খবর পাওয়ার পরেই ভেঙে পড়েছেন প্রশান্তর মা-বাবা। তাদেরকে তিনি আশ্বস্ত করে বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে আগের মতো।
এদিকে পুরো ঘটনাকেই অনৈতিক এবং আইনবিরোধী বলে ব্যাখ্যা করেছেন কংগ্রেস নেতা এবং প্রবীণ আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। তার কথা, পুরো ঘটনাই সাজানো। আইনের অপপ্রয়োগ করছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। এভাবেও কারো বাক-স্বাধীনতা বা স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষমতাকে দাবিয়ে রাখা যায় না। আলিবাগ হাইকোর্টের কাছে তিনি অনুরোধ করে বলেন, পুরো বিষয়টির খুঁটিনাটি জেনে তারপর যেন রায় দেন বিচারক।
গতকাল, প্রশান্তকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে তার পরিবারকে সমবেদনা জানায় দ্য অডিটর গিল্ড। তাদের দাবি, বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই এই পদক্ষেপ উত্তরপ্রদেশ সরকারের। এভাবেই ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন যোগী আদিত্যনাথ।