নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. সেলিনা আইভী বলেছেন, এখানে (জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে) কেউ আমার চেয়ে বড় আবার কেউ আমার চেয়ে ছোট। ভুলত্রুটি আমার হতেই পারে কারণ রাজনীতি আমি এখানে শিখতে এসেছি। আপনাদের কাছেই শিখেছি ও শিখব। যে সম্মেলনটা করবেন সেটা যেন ইউনিয়ন থেকে থানা পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে হয়। তাদের যখন ব্যালট আর সম্মেলন দেওয়া হবে তখন দলের কর্মীদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশে উৎসাহের সৃষ্টি হবে।
শনিবার বিকেলে নগরীর ২নং রেলগেট এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই।
সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে নিজের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে মেয়র আইভী বলেন, যখন উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে তখন আমি যেতে চেয়েছি কিন্তু মেয়র হিসেবে বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে যেতে পারি নাই। আবার অনেকে যাওয়াটা পছন্দ করেন নাই। কারণ নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে যেই বিভক্তি তৈরী হয়ে আছে। যার জন্য অনেকে পক্ষপাতিত্ব করা হয় বলে মেয়র হিসেবে নৌকায় ভোট চাইবো সেটাও অনেকে চান নাই। চাইলেও আন্তরিকতা ছিল না তাই যাই নাই। কিন্তু সব খবর রেখেছি।
সোনারগাঁয়ের উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের বক্তব্যেও সূত্র ধরে মেয়র আইভী বলেন, মোশারফ হোসেন যে কথাটা বলেছেন এটা কিন্তু সত্য। কেন্দ্র থেকে উপজেলা নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যারা দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বা অব্যাহতিও দিবে। এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের কড়াকড়ি করা উচিত। এখন কিন্তু সবাই আওয়ামী লীগ করি। বিরোধী দল খুঁজেই পাওয়া যায় না। সবাই ডুকতাছে। সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে।
পূর্বের যারা রাজনীতি করছে তারাই শুধু করবে তা কিন্তু নয় নতুনদের ও সুযোগ করে দিতে হবে। পুরাতন যারা আছে তারা আমাদের অভিভাবক হয়ে আমাদের পরিচালিত করবে। নারায়ণগঞ্জ বিখ্যাত জেলা। এখানের অনেক বড় বড় নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। ঢাকার পাশেই হওয়ায় বঙ্গবন্ধু এসে মিটিং করেছিলেন। বিভিন্ন কারণে হয়ত সেই সেই ঐতিহ্য আমরা ধরে রাখতে পারি নাই। সেটা আমরা চাইলেই সেটা আবার উজ্জীবিত করতে পারি।
যেটা আমাদের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু তার বক্তব্যে বারবার বলেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বিভিন্ন প্রোগ্রামকে সামনে রেখে আমরা বড় একটা প্রোগ্রাম করতে পারি কিনা। সেটা আপনারা যেভাবে করতে চান আমি আপনাদের সাথে একমত। তবে আমার সিটি করপোরেশনকেও দিক নিদের্শনা দেয়া আছে জন্মশতবার্ষিকী বার্ষিকী পালন করার। আমাদের মধ্যেও একটা প্রতিযোগিতা থাকে সেখানেও আমি করব। আমি দুইটাতেই আপনাদের সাথে থেকে কাজ চাই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে মেয়র আইভী প্রস্তাব জানিয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জের পাইক পাড়ার মিউচ্যুয়াল ক্লাবে আওয়ামী লীগের প্রথম সভাটি হয়েছিল যেটা বায়তুল আমানে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারি করায় সেদিনের মিটিংটি হয়নি। যখন বঙ্গবন্ধুসহ অনেকেই সৈয়দপুরের দিকে রওনা দিয়েছিলেন বশির উদ্দিন সরদারসহ অনেকেই তাদের মন্ডল পাড়ার পুলে পাইকপাড়ার সামনে থামিয়ে দেয়। তখন তারা মিউচ্যুয়াল ক্লাবে গিয়ে প্রথম সভা করেন।
সেই সভাতে ঠিক হয় প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি কে হবে। এর তিন দিন পরে ঢাকার রোজ গার্ডেনে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সব সময় বলে আসছি আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। পাইক পাড়ার মিউচ্যুয়াল ক্লাবকে সামনে রেখে আমরা অনুষ্ঠান করতে চাই।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমরা ইতিমধ্যেই মিউচ্যুয়াল ক্লাবকে সংরক্ষণের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। বঙ্গবন্ধু সহ জাতীয় চার নেতার ছবি, আরো অনেক ছবি দিয়ে কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় সেই ব্যবস্থা করছি। আপনারাও সেখানেও প্রোগ্রাম করেন। আপনাদের সাথে আমি আছি।
মেয়র আইভী দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, আমাদের বর্ধিত সভায় যত কথাই হোক না সে কথা একজনের বিরুদ্ধে হলেও সেটা আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতদিন নেতৃত্ব দিবেন ততদিন আওয়ামী লীগ টিকে থাকবে। ২০০২ আমি যখন নিবার্চন করি আমি কিন্তু আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কোন নেতাকেই পাইনি। কাউকেই খুঁজে পাইনি। গুটি কয়েক আত্মীয়-স্বজন নেতা নিয়ে নির্বাচন করেছি। কি ছিল সেই ভয়াবহ সময় আমার মনে আছে। দাঁড়ানোর জায়গা পাই নাই। জোট সরকারের ভয়ে তখন কেউ ছিল না।
নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ অনেকেই বের হইছে। এগুলো ভুলে গেলে চলবে না। আমরা চাই আমাদের দল আজীবন টিকে থাকুক কিন্তু এরজন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের কিছুতেই নিজেদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা যাবে না। সম্মেলনে মারামারি করা যাবে। একটু সমস্যা থ্কাবেই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। আগের যারা সিনিয়র নেতারা আছেন তাদেরকেই ছোটদের নির্দেশনা দিতে হবে। নাসিকের বাজেট অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানান মেয়র আইভী।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড.আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলের সঞ্চালনায় বর্ধিত সভায় নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সাংসদ এড. হোসনে আরা বাবলী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের অন্যতম সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু, আব্দুল কাদির, আরজু রহমান ভূঁইয়া, এড. আসাদুজ্জামান আসাদ, আদিনাথ বসু, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, ইকবাল পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুন্দর আলী, মীর সোহেল আলী