স্বদেশ ডেস্ক:
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর। কারবালার ইতিহাস উপস্থাপন করে শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যে পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা। প্রথম প্রহরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে এসে যোগ দেন। এতে অনুসারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ হাজার।
সেই সমাগমে হঠাৎ পর পর তিনটি বোমা বিস্ফোরণে আহত হয় শতাধিক লোক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজ্জাদ হোসেন নামের এক কিশোর এবং জামাল উদ্দিন নামে একজন ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। হামলার দুদিন পর অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ। তবে চার বছরেও মামলাটির বিচারকাজ সম্পন্ন করতে পারেননি ট্রাইব্যুনাল। এখনো তা আটকে আছে সাক্ষ্যগ্রহণেই।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে থাকা এ মামলায় সর্বশেষ গত বছর ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৬ সাক্ষীর মধ্যে কেবল ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গত এক বছর আর কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। যদিও ওই সময়ের মধ্যে মামলায় পাঁচটিরও বেশি তারিখ ধার্য ছিল।
এ বিষয়ে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম সঠিকভাবেই চলছিল। কিন্তু গত বছর এ মামলায় কারাগারে থাকা আসামি জাহিদ হাসান ওরফে রানার আইনজীবী দাবি করেন- মামলায় চার্জশিট দাখিল হওয়ার সময় তার আসামির বয়স ছিল ১৭ বছর। আইনানুযায়ী সে শিশু হওয়ায় তার বিচার শিশু আদালতে হতে হবে। তখন ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের নির্দেশ দেন। তাই ধার্য তারিখে সাক্ষী এলেও সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি ওই সম্পূরক চার্জশিট দাখিল হয়েছে। এ সমস্যা কেটে যাওয়ায় এখন নিয়মিত সাক্ষ্যগ্রহণ করা যাবে।’
এদিকে মামলাটি তদন্তের এক বছরের মধ্যে ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ইন্সপেক্টর মো. শফিউদ্দিন শেখ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তে জেএমবির ১৩ জনের সম্পৃক্তার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে তাদের মধ্যে তিনজন ডিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ায় তাদের বাদ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৩১ মে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে মহানগর দায়রা জজ আদালত তাদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন। পরে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়।
মামলার আসামিদের মধ্যে নেত্রকোনার কলমাকান্দার লেংগুড়া মধ্য পাড়ার ওমর ফারুক মানিক, একই উপজেলার হাফেজ আহসান উল্লাহ মাসুদ, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বড়ইতলী গ্রামের শাহজালাল মিয়া এবং গাইবন্ধার সাঘাটার ডিমলা পদুম শহরের চান মিয়া জামিনে রয়েছেন।
অন্যদিকে সাঘাটার কচুয়া দক্ষিণপাড়ার কবির হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিক, বগুড়ার আদমদীঘির কেশরতা গ্রামের মাসুদ রানা মাসুদ ওরফে সুমন, রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব, দিনাজপুর কোতোয়ালির ঘাসিপাড়ার আবু সাঈদ রাসেল ওরফে সোলায়মান ওরফে সালমান ওরফে সায়মন, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম ইব্রাহিমনগর বালুরমাঠ এলাকার আরমান ওরফে মনির, কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুরের জাহিদ হাসান ওরফে রানা ওরফে মুসায়াব ও দিনাজপুরের রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব ওরফে সুমন কারাগারে রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে জাহিদ, আরমান, রুবেল ও কবির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।