সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০১:০৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়

রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়

খেলাপি ঋণ নিয়ে সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতির কমতি নেই। বর্তমান অর্থমন্ত্রী তার দায়িত্বভার পাওয়ার একপর্যায়ে বলেছিলেন, আর এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়তে দেয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে তার সে প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি। বরং খেলাপি ঋণের অঙ্ক কেবলই বেড়ে চলেছে। এ নিয়ে সমস্যা সময়ের সাথে আরো জটিল আকার ধারণ করছে। খেলাপি ঋণ নিয়ে কার্যত ব্যাংক খাতে দেখা দিয়েছে অশনিসঙ্কেত।
গতকালও একটি জাতীয় দৈনিক খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজনক খবর প্রকাশ করেছে। এর আগেও কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন দৈনিকে এ নিয়ে আশঙ্কাজনক খবর প্রকাশিত হয়েছে। উদ্বেগটা হচ্ছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ তো কমছেই না বরং তা বেড়েই চলেছে। গতকাল প্রকাশিত এ সম্পর্কিত এক খবরে একটি পত্রিকা জানিয়েছেÑ বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো হু-হু করে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। নানা পদক্ষেপ নেয়া ও খেলাপিদের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার পরও আসছে না কোনো ইতিবাচক ফল। এই সময়ে ব্যাংক খাতে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১২ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে বছরের প্রথম খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যমান পরিস্থিতি ব্যাংকিং খাতের জন্য এক অশনি সঙ্কেতÑ এ মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ায় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ সমস্যার সমাধানে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা খুবই জরুরি। নয়তো উচ্চ ঋণখেলাপিদের বেড়াজাল থেকে বের হওয়া কোনো মতেই সম্ভব হবে না। এ সম্পর্কে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, এটি ব্যাংক খাতের জন্য হুমকিস্বরূপ। সে জন্য ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের দৃশ্যমান শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
আমাদের দেশে খেলাপি ঋণ আদায়ে অনেক আইন আছে। কিন্তু এগুলোর প্রয়োগ নেই। সে কারণেও ঋণখেলাপি হওয়ার প্রবণতা কমানো যাচ্ছে না। তাই এসব আইন প্রয়োগে সরকারকে কঠোর হতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধাটা হচ্ছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আন্তরিকভাবে আসছে না। যে কারণে ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবেই মূলত খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটে চলেছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ঋণখেলাপিদের যে নীতি-সহায়তা দেয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি গেছে ঋণখেলাপিদের পক্ষে। এ নীতিতে ভালো গ্রাহকদের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।
আমরা আবারো জোর দিয়ে বলতে চাই, খেলাপি ঋণ সমস্যার মূল বাধা রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব। সরকার যদি এই অঙ্গীকার নিয়ে আন্তরিকভাবে খেলাপি ঋণ আদায়ে পদক্ষেপ না নেয়, তবে কোনো দিন খেলাপি ঋণ সমস্যার সমাধান প্রত্যাশা করা যায় না। অতএব প্রত্যাশা, এবার অন্তত সরকার সেই অভাবটুকু পূরণে আন্তরিক ভূমিকা পালন করবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877