উচ্চ আদালতের রায় মেনে নিয়ে অবিলম্বে ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথ আয়োজনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, ‘অবিলম্বে উচ্চ আদালতের রায় মেনে নিয়ে শপথ আয়োজনের ব্যবস্থা করুন। আর এটি আপনাদের প্রতি শেষবারের মতো আহ্বান।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিএসসিসির প্রধা কার্যালয় নগর ভবনে ইশরাক হোসেনকে মেয়রেরর বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আদালতের রায় পাওয়ার পরও সরকারের কিছু উপদেষ্টা আমার ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। তাদের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। অবিলম্বে সর্বোচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করে শপথ আয়োজন করতে হবে স্থানীয় সরকার বিভাগকে। অন্যথায় উচ্চ আদালতে আদালত অবমাননার বিচার চাওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারকে শেষবারের মতো আহ্বান জানাই। অবিলম্বে শপথ আয়োজন করুন, অনথ্যায় নগরবাসীকে সাথে নিয়ে আন্দোলন বেগবান করা হবে।’
এর আগে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে নগর ভবনে যান ইশরাক হোসেন। এসময়, নগর ভবনে আন্দলোনকারী ‘ঢাকাবাসী’ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। ‘ইশরাক হোসেনের আগমন, শুভেচ্ছার স্বাগতম’, ‘নগর পিতা ইশরাক ভাইকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা’সহমুহুর্মুহু স্লোগানে মুখরিত হতে থাকে নগর ভবন এলাকা। লালগালিচা বিছিয়ে ইশরাক হোসেনকে বরণ করে নেন নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নগরবাসী, আন্দোলনকারী এবং নগর ভবনে আগতদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন ইশরাক হোসেন।
আজ সকাল থেকেই তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে অবস্থান কর্মসুচি পালন করছেন ঢাকাবাসী। টানা ১৫ দিনের মতো একই দাবিতে নগর ভবনের সামনে অবস্থান করছেন তারা।
ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসবে আজ সকাল থেকেই নগর ভবনের সামনে এসে জমায়েত হতে থাকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নগর ভবনে এসে জড়ো হতে থাকেন ঢাকাবাসী। অনেকে আবার বৃষ্টিতে ভিজেই এসে উপস্থিত হয়, ছাতা, তিরপল মাথায় নিয়ে বৃষ্টির মাঝেই বিক্ষোভ করেন তারা।
পরে ডিএসসিসির প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে ইশরাক হোসেনের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। ‘অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে শপথ দাও, দিতে হবে’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে ন ‘, ‘এক দুই তিন চার, আসিফ তুই গদি ছাড়’, ‘আসিফের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’সহ প্রভৃতি স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে নগর ভবন এলাকা।
একই দাবিতে সকাল সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে ঢাকাবাসীর আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন নগর ভবনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। টানা ১৪ দিন ধরেই নগর ভবনের প্রত্যেকটা ফটকেই তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অবস্থান কর্মসুচি পালন করছেন তারাও। একইসঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত এই আন্দলোন চালিয়ে যাবেন তারা।
অবস্থান কর্মসুচিতে অংশ নেওয়া ওয়ারীর হাজী আনোয়ার বলেন, ‘আমরা ইশরাকঅকে হাসিনার সঙ্গে লড়াই করে ভোট দিয়েছি, মাগার হাসিনা তাকে সেই চেয়ারে বসবার দেয় নাই।এখন আদালতের রায় নিয়ে আসছি, এই সরকার হাসিনার মতোই আমাগো জনতার মেয়রকে আবার বসবার দিচ্ছে না। তামশা শুরু করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি আন্দোলন করে আমাগো মেয়র আমাদের জন্য শপথ পড়াতে বাধ্য করব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাগার বাড়ি যামু না।’
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ষাটোর্ধ কালাম হাজী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘এই বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এই আন্দোলনে আসছি।আর সরকার আমাগো নিয়ে মশকরা শুরু করেছে। এইসব তামাশা কিন্তু আমরা মানব না। তাড়াতাড়ি আমাদের দাবি মেনে নেন, না হলে ঢাকা অচল করে দিব।’
শ্রমিক ককর্মচারী ইউনিয়নের এক কর্মচারী মোহন বলেন, ‘আমাদের দাবি একটাই ইশরাক হোসেনকে মেয়র দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।নাইলে এই নগর ভবনের একটা পাতাও নড়ছে না।আমরা কোনো কাজই করব না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মেয়ের ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কেউ কোনো কার্যক্রমে অংশ নিব না।’
‘ঢাকাবাসী’র সমন্বয়ক, সাবেক সচিব মশিউর রহরমান বলেন, ‘এই আন্দোলন আমাদের যৌক্তিক। আমাদের দাবি একটাই, মেয়র ইশরাককে তার প্রাপ্য দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটা নিয়ে নাটক শুরু করেছে। আমারা কোনো নাটকের ধার ধারি না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।’ একইসঙ্গে আজকের কর্মসূচি থেকেও উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগ দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
গত ১৪ মে থেকে ইশরাক হোসেবকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা অবস্থান কর্মসুচি পালন করে যাচ্ছেন ঢাকাবাসী। এ দাবিতে গেল সপ্তাহে দুই দিন যমুনার সামনেও অবস্থান কর্মসুচি পালন করেন তারা।
গত ২৭ মার্চ ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও ঢাকা ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালত। ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে ইশরাক হোসেনকে সেই গেজেট বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। আজ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ ইশরাক হোসেনের শপথ না পড়ানো নিয়ে করা খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের পুর্নাঙ্গ বেঞ্চ।