শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৬ অপরাহ্ন

অতিরিক্ত গরমে আক্রান্ত হতে পারেন হিট স্ট্রোকে

অতিরিক্ত গরমে আক্রান্ত হতে পারেন হিট স্ট্রোকে

স্বদেশ ডেস্ক:

প্রখর রোদে পরিবেশ তেতিয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করে কাজ করলে তাপদাহে ত্বকে হতে পারে ঘামাচি। ঘটতে পারে তাপজনিত পেশি সংকোচন, তাপজনিত চরম পরিশ্রান্তি, তাপজনিত মুর্ছা যাওয়ার মতো ঘটনা। তবে প্রচণ্ড তাপদাহে মারাত্মক যে অবস্থা সৃষ্টি হয়, তার নাম হিট স্ট্রোক। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে পরিণতি হতে পারে মারাত্মক।

তাপাহতের উপসর্গ : অতিরিক্ত তাপদাহে দেহের কার্যক্ষমতা কমে যায়। তপ্ত আবহাওয়ায় মেজাজ খিটখিটে ও নেতিয়ে পড়ে। তাপাহত হলে শরীরে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়। শরীরের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। অনেক সময় তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট অতিক্রম করে। গা পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। বন্ধ হয়ে যায় ঘর্মগ্রন্থি। প্রথমদিকে অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে পানি ও খনিজ পদার্থ বের হয়। এতে শরীরের পানি ও লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে শরীরে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। ঘাম শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে। শরীর ঠাণ্ডা হতে চায় না। বসা থেকে দাঁড়ালে যদি মাথা চক্কর দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে বা চোখমুখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি উষ্ণতাজনিত চরম পরিশ্রান্তির শিকার। এর সঙ্গে শুরু হতে পারে মাথাব্যথা, ক্ষুধামন্দা, শ্রান্তি, ক্লান্তি, শারীরিক দুর্বলতা, মাংসপেশির ব্যথা এবং পেশিতে খিল লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। প্রথমদিকে ঘাম নিঃসরণ বেড়ে গেলে ও পরে এটি সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শরীরের তাপমাত্রা তখন হু-হু করে বাড়তে থাকে। নেমে আসে মানসিক বিপর্যস্ত, এলোমেলো আচরণ, মতিভ্রম, কথাবার্তায় আড়ষ্টতা, খিঁচুনি। একপর্যায়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি : হিট স্ট্রোকে বয়স্ক ও শিশুরা আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি। শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হলে তৃষ্ণার অনুভূতি জাগে। এ অনুভূতির কেন্দ্র মস্তিষ্কে। বয়স্কদের তৃষ্ণার অনুভূতি কমে যায়। ফলে পানিশূন্যতা তৈরি হলেও পানি গ্রহণের অনুভূতি না থাকায় সংকট তৈরি হয়। যারা পেশাগত কারণে দীর্ঘসময় বাইরে অবস্থান করেন, তারাও অত্যন্ত ঝুঁকিতে থাকেন। বিশেষ করে ক্রীড়াবিদ, সামরিক বাহিনীর সদস্য, খেতখামারে কর্মরত শ্রমিক। এছাড়া স্থূলকায় ব্যক্তিরাও ঝুঁকিতে অবস্থান করেন। তাদের ত্বকের নিচে রয়েছে চর্বির পুরু স্তর। এ স্তর ভেদ করে অনেক সময় তাপক্ষয় হয় না। কিছু কিছু ওষুধ ও অ্যালকোহল হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

প্রতিরোধে করণীয় : হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রয়োজন পানিশূন্যতা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। এ সময় প্রতি ১০-১৫ মিনিট পর পর পানি পান করুন। অতিরিক্ত ঘাম হলে লবণ, লেবুর শরবত গ্রহণ করুন। বাইরে বেরোলে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। এ সময় সুতি কাপড়ের পাতলা ঢিলেঢালা জামা পরিধান করুন, যাতে জামা-কাপড়ের ভেতর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়। হালকা রঙের জামা গরম আবহাওয়ায় স্বাস্থ্যবান্ধব। জুতা, মোজা এ সময় পরিহার করুন। তপ্ত গরমে কাজের ভেতর থাকলে মাঝেমধ্যে ছায়াঘন স্থানে বিশ্রাম নিতে হবে। কম আর্দ্রতাযুক্ত ঠাণ্ডা পরিবেশে অবস্থান করে বিশ্রাম নিতে হবে। পারলে ফ্যানের নিচে অবস্থান করতে হবে। কোনো কারণ না থাকলে অযথা উষ্ণ তাপমাত্রায় দীর্ঘসময় বাইরে না থাকা ভালো। অ্যালকোহল, কফি, অতিরিক্ত চা পান করা থেকে বিরত থাকুন। যেসব খাবার পানিশূন্যতা তৈরি করে, সেসব খাবার পরিহার করুন। অতিরিক্ত আমিষ, চিনি এবং লবণাক্ত স্ন্যাকস জাতীয় খাবার পানিশূন্যতার জন্য দায়ী। তীব্র রোদে গাড়ি রাখলে গাড়ির ভেতরে ভীষণ গরম হয়ে ওঠে। এমন গরমে শিশু বা বৃদ্ধকে বসিয়ে রাখলে সহজে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর প্রায় শখানেক শিশু এমন দুর্ঘটনায় মারা যায়।

লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877