শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
এক পা নিয়েই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সাহাব উদ্দিন

এক পা নিয়েই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সাহাব উদ্দিন

স্বদেশ ডেস্ক:

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন সাহাব উদ্দিন। তবে অন্য দশজন প্রতিবন্ধির মতো নিজেকে গুটিয়ে রাখেননি। অদম্য ইচ্ছা আর প্রবল মনোবলের জোরে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ আম্পুচি ফুটবল দলে। শুধু স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে খেলে চলছেন দুর্দান্ত। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ৬০ মিটারের মাঠ। এক পা নিয়ে খেলা এ ফুটবলে ভুলক্রমে ক্র্যাচে বল লাগলেই হবে ফাউল। স্ক্র্যাচে বল না লাগিয়েই এ চ্যালেঞ্জিং ফুটবল দুর্দান্ত খেলে যাচ্ছেন সাহাব উদ্দিন। তার স্বপ্ন এক পায়ের ফুটবলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের পতাকাকে তুলে ধরা।

প্রকৃতির সাথে পাঞ্জা লড়ে বেড়ে উঠা সাহাব উদ্দিন মনেই করেন না তিনি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধি। অন্য ১০ জন স্বাভাবিক মানুষের মতোই প্র্যাকটিস করেন দৌড়-ঝাঁপ, সাইক্লিং। ছোটবেলা থেকেই তার নেশা ছিলো খেলাধুলার প্রতি। স্কুলজীবনে নিয়মিত প্র্যাকটিস করতেন ক্রিকেটও। খেলার পাশাপাশি পরিচালনা করতেন বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। কিন্তু ক্রিকেটের দুর্দান্ত খেলোয়াড় সাহাব উদ্দিন অবশেষে তার ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফুলবলকে।

জন্মগতভাবেই একটি পা নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন সাহাব উদ্দিন। শরীরের এ চরম পঙ্গুত্ব নিয়েও তিনি সচল থাকেন সর্বক্ষণ। তিনি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ১৩ নং মায়ানী ইউনিয়নের মোল্লাপাড়ার সারেং বাড়ির মজিবুল হক ও জাহেদা বেগমের ছোট সন্তান। ২০২১ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বাছাই পর্বে উত্তীর্ণ হয়ে নিজের ক্যারিয়ারে যুক্ত করেন ফুটবল। এর আগে ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত তিনি স্ট্যান্ডিং ক্রিকেট ও হুইল চেয়ার ক্রিকেট খেলতেন।

আন্তর্জাতিক আম্পুচি ফুটবল ২০২২ এ সাহাব উদ্দিন বাংলাদেশের হয়ে খেলেছে ইন্দোনেশিয়া, জাপান ও মালয়েশিয়ার বিপক্ষে। অল ফুটবল টিমের ব্যবস্থাপনায় ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এ খেলায় স্বাগতিক দেশ ছিলো বাংলাদেশ। সাহাব উদ্দিনের স্বপ্ন বাংলাদেশ আম্পুচি ফুটবলের হয়ে আন্তর্জাতিকভাবে খেলবেন। খেলবেন এশিয়া কাপে।

সাহাব উদ্দিন বলেন, আমার এতোদূর আসার পেছনে পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি সবচেয়ে বেশি। অলসতা আমার পছন্দ নয়। আর কোনো কাজকে আমি ছোট করে দেখি না। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে আমি বাজারে তরকারির ব্যবসা করেছি। ফুটবল যখন প্রফেশনালী শুরু করছি তার প্রথম দিকে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছিলো। ভালো মাঠ পাইনি। ছিলো না স্ক্র্যাচ। এখন অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমি নিজে প্রতিবন্ধি। আমি বুঝি প্রতিবন্ধি মানুষদের কষ্ট। ভবিষ্যতে আমি ডিজেবল মানুষদের নিয়ে কাজ করব। সেজন্য আমি সমাজের বিত্তবানদের পাশে চাই।

সাহাব উদ্দিন অভিযোগ করেন, তাদের বাড়ির রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে চলাফেরা করতে অনেক কষ্ট হয়। তাই স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসনের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো যেন আমাদের চলাচলের রাস্তাটি কার্পেটিং করা হয়।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এত ঘাত প্রতিঘাত বাঁধা বিপত্তি নিয়ে থেমে নেই সাহাব উদ্দিনের পড়াশোনা। আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। বর্তমানে তিনি ফেনী সরকারী কলেজে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র।

১৩নং মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী বলেন, আমি সাহাব উদ্দিনকে শুরু থেকে সহযোগিতা করে আসছি। ভবিষ্যতেও আমার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

সাহাব উদ্দিনের বাড়ির রাস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো এবং রাস্তাটি কার্পেটিংয়ের ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাবরিনা রহমান লিনা বলেন, সাহাব উদ্দিন মিরসরাইয়ের গর্ব। সে প্রতিবন্ধি হয়েও জাতীয়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি সে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান বলেন, সাহাব উদ্দিনকে যে কোনো সময় সহযোগিতা করবো। সে আমাদের গর্ব। আম্পুচি ফুটবল খেলে সাহাব উদ্দিন অনেক দুর এগিয়ে যাবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877