তানভির আহমেদ: দাম্পত্য জীবনে রাগ-অভিমান বা ঝগড়া হবে না, এটা সম্ভব না। দুনিয়াতে এমন কোনো দম্পতি নেই যারা ঝগড়া বিবাদ করেনি কখনো। অনেকে তো বলেই বসেন যে ঝগড়া ছাড়া কোনো দাম্পত্যকে সম্পূর্ণই বলা যাবে না। ঝগড়া কেন হয় আসলে? যদি কোনো অভিযোগ, অভিমান থাকে তবেই হয়। যেখানে কোনো অভিমান বা অভিযোগ নেই, সেই দাম্পত্য যেন প্রাণহীন, তাতে কোনো গতিই নেই। বরং রাগ-অভিমান-ঝগড়ায় মোড়া দাম্পত্যই অনেক অনেক বেশি কাম্য। এতে করে যেন ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়। টান আর আকর্ষণ আরও মজবুত হয়।
কীভাবে বুঝবেন?: অনেক সময়ে দেখা যায়, জেদ বা রাগের বশে প্রায় জোর করেই একজন আরেকজনকে কষ্ট দেন। আবার কখনো বা নিজেকেই কষ্ট দিয়ে বসেন। এটা কিন্তু অতিরিক্ত ভালোবাসা থেকেই হয়। এর ফলে যখন মান অভিমান ভাঙানোর পর্ব আসে, তখন বোঝা যায় ভালোবাসা কিভাবে জমে ছিল মনের মধ্যে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, রাগ আর ক্ষোভের বশে একে অন্যকে অপমান অপদস্ত করে বসে। এতে তুমুল পর্যায়ে ঝগড়াও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু অভিমান কেটে গেলেই শুরু হয় অনুশোচনা। তখন দেখা যায় সঙ্গীকে অপমান করে নিজেরই অপরাধবোধ শুরু হয়ে যায়। একটা ছোট্ট সরি বলেই ফিরে যাওয়া যায় আগের ভালোবাসায়। হয়তো কোনো কটূ কথা বা খারাপ ব্যবহার করেও অনেক সময়ে চটিয়ে দেওয়া হয় সঙ্গীকে। কখনো ইচ্ছা করে, কখনো ইচ্ছা না করে। কখনো বা কোনো কারণ ছাড়াই। মনে করা হয় এটাও অনেকটা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। অনেক সময় দেখা যায় যদি সঙ্গী প্রত্যাশা মতো কাজ করেনি, বা কথা দিয়ে কোনো কথা রাখেননি বা কোনো কথা ভুলে গেছে। এতে করে প্রথমে আস্তে আস্তে ঝামেলা শুরু হয়, পরে ঝামেলা বড় আকারে পৌঁছে। এর কারণ কি? ভালোবাসার মানুষের কাছে প্রত্যাশা বরাবরই বেশি থাকে। আর তাই অতি সামান্য বিষয়েও মন কষাকষি হয়ে বসে। কেউ সঙ্গীর ওপর রাগ করে বেরিয়ে গেলেন বাসা থেকে, অভিমান করে খাওয়া ঘুমানো বন্ধ করে দিলেন। এতে করে তার সঙ্গীই তাকে সবচেয়ে বেশি মিস করবে, খোঁজাখুঁজি করবে, মন খারাপ করে কান্নাকাটি করবে।
আসলে মাঝে-মধ্যে পরস্পরকে একটু-আধটু কষ্ট দিলে মজবুত হয় সম্পর্ক। অনেকটা অ্যাসিড টেস্টের মতো। কারণ যে কষ্ট দিচ্ছে এবং যে কষ্ট পাচ্ছেÑকষ্ট দুজনেরই সমান হচ্ছে। সেই সঙ্গে মুঝে নিতে পারছে যে দুজন দুজনের কত প্রয়োজনীয়, কতটা ভালোবাসা লুকিয়ে আছে প্রত্যেকের মাঝে। এটাই দাম্পত্য, এটাই ভালোবাসা।
ত্রুটি বড় করে না দেখা: এক সাথে থাকতে গেলে অনেক সময় ছোটখাটো অভ্যাসগুলো অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন হয়ত সব সময় মোজা খুলে বিছানায় রেখে দেন। অপরজন টুথপেস্টের ঢাকনা লাগাতে যান ভুলে। অনেক পরিবারে এ সব ছোটখানো বিষয় নিয়ে অযথা ঝগড়া শুরু হয়। তাই এই সব বিষয়গুলো এড়িয়ে চললে জীবন কিন্তু অনেক মধুর হতে পারে।
স্বীকৃতি: সব মানুষই মাঝে মধ্যে তার কাজের স্বীকৃতি চায়, এমনকি সংসারের কাজের ক্ষেত্রেও। তাই মাঝে মধ্যে একে অপরকে সে কথা জানান। আরো রোম্যান্টিক হয়, যদি কথাটা জানানো যায় ছোট্ট একটি নোট লিখে অথবা এসএমএস-এর মারফত। দেখবেন পরের দিন কাজের আগ্রহ তো বাড়বেই, তার সঙ্গে আপন মানুষটিকে মনে হবে আরো কাছের।
প্রশংসা: অনেক দিন এক সাথে থাকার ফলে সব কিছুই কেমন যেন সাধারণ ব্যাপার হয়ে যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন, নতুন পোশাক বা হেয়ার স্টাইলে আপনার সঙ্গীকে সুন্দর লাগছেÑ এ কথা বলতে একদম সংকোচ করবেন না। আসলে এমন ছোটখাটো প্রশংসার ‘এফেক্ট’ কিন্তু অনেক বড় হয়। অর্থাৎ ‘প্রশংসা ছোট তবে তার এফেক্ট বড়’।
ভালোবাসার স্পর্শ: ভালোবাসা গাছের মতো, যত যত করা যাবে ততই বাড়বে। ভালোবাসার স্পর্শে ডালপালা ফলে-ফুলে ভরে যায়, আর অযতেœ যায় শুকিয়ে। অনেক দম্পতি মনে করেন, ‘ভালোই তো আছি, আবার ভালোবাসা দেখাতে হবে কেন? অথচ ভালোবাসা দেখালে দাম্পত্য জীবন হতে পারে মধুময়। ঠিক গাছের মতোই যতœ নিন। হঠাৎ করেই ফুল বা ছোটখাটো উপহার দিয়ে আপনার প্রিয়া বা প্রিয়তমকে দিন চমকে।
শখ: মাঝে মধ্যে কখনো নিজেরা এক সাথে এমন কিছু করুন, যাতে অন্য ধরনের গল্প বা আলোচনা হতে পারে। এক সাথে সাইকেল চালাতে বা হাঁটতে যেতে পারেন। খোলা আকাশের নিচে প্রাণ খুলে হাসুন বা কথা বলুন। একে অপরের সঙ্গে সব কিছু ভাগাভাগি করার নামই যে বন্দুত্ব, আর সেটাই তো দীর্ঘ ও সুখী দাম্পত্যের আসল কথা।
রাগ পুষে রাখতে নেই: রাগ, অভিমান ছাড়া কি দাম্পত্য জীবন মধুর হয়? রাগ, দুঃখ, অভিমান তো থাকবেই। কিন্তু তাই বলে রাগ যেন বেশিক্ষণ না থাকে। দিনের শেষে রাগ ভুলে অপরের কাছে এগিয়ে যান। রাগ বা মান ভাঙানোর উত্তম সময় সেটা। তা না হলে দুজনকেই হয়ত না ঘুমিয়ে সারাটা রাত কাটাতে হবে, যার প্রভাব পড়বে পরেও।
কিছুটা দূরত্ব: মাঝে মধ্যে দাম্পত্য জীবনের সব কিছুই একঘেঁয়েমি মনে হতে পারে। তাই স্বামী তার সহকর্মী বা পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কখনো আড্ডায় যেতে পারেন। স্ত্রী তার ছেলেবেলার বন্ধু-বান্ধবী বা কাছের কোনো মানুষের সঙ্গে শপিং বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। এতে নিজেদের অনেকটা হালকা মনে হবে। মাঝে মধ্যে একটু দূরত্ব কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একে-অপরকে কাছে পাওয়ার আনন্দ বাড়িয়ে দেয়।