সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১০:৪৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চন্দ্র জয়ের অর্ধশত বার্ষিকী উদযাপনে নতুন পরিকল্পনা

চন্দ্র জয়ের অর্ধশত বার্ষিকী উদযাপনে নতুন পরিকল্পনা

২০ জুলাই ১৯৬৯। আর দশটি দিনের মতোই একটি দিন। বিশেষ কারণে এই দিনটি মানব ইতিহাসে ঐতিহাসিক দিন হিসেবে জায়গা করে নেয়। কারণ এই দিনে চাঁদের মাটিতে পৃথিবীর মানুষ প্রথমবারের মতো পা রাখে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদে প্রথম মানুষ অবতরণের ৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার লোক।

১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশযান অ্যাপোলো ১১ থেকে চন্দ্রযান ঈগল চাঁদের ট্রাঙ্কুইলিটি বেইস অবতরণ করে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সময় ৯টা ৫৬ মিনিটে নিল আর্মস্ট্রং প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের বুকে পা রেখে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

এর আগে ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ৪৫ মিনিটে তিনজন তাদের ব্রেকফাস্ট সারেন। এরপর নভোচারীর পোশাক পরেন। পেছনে ফিরে সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে ধীরে ধীরে রকেটের ভেতর প্রবেশ করেন। গোটা দুনিয়ার মানুষ টেলিভিশনে এই দৃশ্য সরাসরি দেখে। সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে ৭৬ লাখ পাউন্ড জ্বালানি ভরা নাসার ‘স্যাটার্ন ৫’ রকেটের ইঞ্জিনের অংশ প্রজ্বলিত হয়। এরপর উড়াল দেয় মহাকাশের দিকে।
চাঁদের মাটিতে পৌঁছাতে তাদের সময় লেগেছিল চার দিন। ২০ জুলাই চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণের পর এই উপগ্রহের মাটিতে নামেন তিন মহাকাশচারী। প্রথম পা রাখেন মার্কিন মহাকাশচারী নিল আর্মস্ট্রং। তার পরে এডুইন অলড্রিন। তাদের সঙ্গে নভোযানে ছিলেন মাইকেল কলিন্স।

চাঁদের বুকে মানুষের পায়ের স্পর্শের ঘটনার ৫০ বছর পূর্ণ হলো গত ২০ জুলাই শনিবার। যদিও ১৬ জুলাই মঙ্গলবার ছিল সেই ঐতিহাসিক ‘চন্দ্র ভ্রমণের’ শুরু। ১৯৬৯ সালের এই দিনটাতে ‘স্যাটার্ন-৫’ রকেটে চেপে চাঁদে পাড়ি দিয়েছিল ‘অ্যাপোলো-১১’। দিনটি স্মরণে অ্যাপোলো-১১ এর অভিযাত্রী দল হাজির হয়েছিল রকেট উৎক্ষেপণস্থলে।
৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে কেনেডি স্পেস সেন্টারে আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে কমান্ড মডিউল চালক মাইকেল কলিন্স বলেছিলেন, ‘আমরা অভিযাত্রীরা আমাদের কাঁধে পৃথিবীর ওজন অনুভব করছিলাম, আমরা জানতাম প্রত্যেকেই আমাদের প্রত্যক্ষ করছে, বন্ধু-শত্রু প্রত্যেকে।’
কলিন্স এবং চান্দ্র অবতরণযানের চালক এডুইন অলড্রিন জুনিয়র এখনো পৃথিবীতে জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে বেঁচে আছেন। তাদের দলপতি নিল আর্মস্ট্রং, যিনি প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের বুকে পা রেখেছিলেন, ২০১২ সালে ৮২ বছর বয়সে মারা যান।
ফেরার সময় একটি ব্যাগে নমুনা হিসেবে সাড়ে ২১ কিলোগ্রাম চাঁদের মাটি এবং পাথর ভরে ফিরে এসেছিলেন তারা। পরে জানা গিয়েছিল, সেই ব্যাগটি হারিয়ে ফেলেছিল নাসা। তবে ২০১৩ সালে সেটির খোঁজ পাওয়া যায়।

যে রকেটে চেপে উড়েছিল অ্যাপোলো-১১, তার উচ্চতা ছিল ৩৬৪ ফুট। ওজন ছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৭২৫ কিলোগ্রাম। আর অ্যাপোলো-১১ এর ওজন ছিল ৪৫ হাজার ৭০২ কিলোগ্রাম। পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ এবং ফের পৃথিবীতে অবতরণ, এই মিশনটা সম্পন্ন হতে মোট সময় লেগেছিল ৮ দিন ৩ ঘণ্টা ১৮ মিনিট। তবে এই অভিযান বিতর্কমুক্ত থাকেনি। অনেক মহল থেকে এই অভিযান ও চাঁদে পা রাখার বিষয়টাতে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
ওই চন্দ্রাভিযান নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন, এ বছর সারা বিশ্বই ওই অভিযানের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপনে নানা আয়োজন করেছে।

তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ‘আগামী পাঁচ বছরে আমেরিকার মহাকাশচারীদের চাঁদে ফিরিয়ে আনতে’ অঙ্গীকার করেছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, ২০ শতকে যেমন তারা চন্দ্র অভিযান করেছেন। ২১ শতকেও তাদের মহাকাশচারীদের চাঁদে পাঠানোর ক্ষেত্রে তারা প্রথম হবেন।

এই অনুষ্ঠানে আরেকটি বিষয়ও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়। আর তা হলো নাসার পরবর্তী মিশন। ২০২৪ সালে আবার চাঁদে যেতে চায় নাসা। এবারেরটি হবে আর্টেমিস প্রকল্প। নামটি এসেছে গ্রিক পুরাণের অ্যাপোলোর যমজ বোনের নাম থেকে। চাঁদে একটি ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা করছে নাসা।

তবে সমালোচকদের মতে, নির্ধারিত সময়ে নাসার এ লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে। এখন পর্যন্ত রকেট, ক্রু ক্যাপসুল, ল্যান্ডার, অর্বিট স্টেশন কিছুই প্রস্তুত নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য চাঁদ নয়, মঙ্গলে সরাসরি মানববাহী মিশন পাঠাতে বেশি আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র চীন, রাশিয়ার হুমকি ও ক্রমাগত প্রতিযোগিতার মধ্যে মহাকাশে আধিপত্য নিশ্চিত করতে মহাকাশবিষয়ক বাহিনীর কার্যক্রম জোরেশোরে শুরু করেছে। এ বাহিনীর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে তার প্রভাব বজায় রাখবে বলেই তাদের ধারণা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877