রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১০:৫৯ অপরাহ্ন

জ্বর হলেই দৌড় হাসপাতালে!

জ্বর হলেই দৌড় হাসপাতালে!

স্বদেশ ডেস্ক: দিনাজপুরের গৃহবধূ মিশু আক্তার হাসপাতালে রয়েছেন সাত দিন ধরে। তার ডেঙ্গু হয়নি, হয়েছে তার সদ্য ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণ ছেলের, যে ঢাকায় একটি হোস্টেলে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য কোচিং করছিল।

মিশু আক্তার বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “ছেলের জ্বর হয়েছে শুনেই দিনাজপুর থেকে চলে এসেছি। তারপর পরীক্ষা করার পর ডেঙ্গু ধরা পড়লো। তারপর থেকে, গত সাত দিন ধরে এই হাসপাতালেই রয়েছি”।

এখানেই তার থাকা, খাওয়া আর ছেলের পাশে মেঝেতে ঘুমানো।

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে গিয়ে অনেকগুলো খাটের ওপরে দেখা গেলো সাদা রঙের মশারি টাঙ্গানো।

সেবিকা তাসলিমা জানালেন, এরা সবাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলছেন, বিশটা বেড আছে, সবগুলোয় রোগী আছে।

বুধবার দুপুরে এই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখতে পেলাম একজনের মাথায় পানি ঢালছেন তার স্ত্রী।

মিরপুর থেকে আসা সোনিয়া আক্তার বলছেন, ১৮ তারিখে তার স্বামীর জ্বর শুরু হয়। এক শ’ চার থেকে এক শ’ পাঁচ ডিগ্রি জ্বর। পরে জ্বর ভালো হলেও শরীরে র‍্যাশ দেখা যায়। এরপর তারা নিজেরাই ডেঙ্গু পরীক্ষা করে ডেঙ্গু হয়েছে দেখতে পান। তারপর এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

তাদের সবার গল্পই অনেকটা একই রকম। কয়েকদিন জ্বর, গায়ে র‍্যাশ ওঠা, ব্যথা। পরীক্ষা করতে গিয়ে ডেঙ্গু সনাক্ত হয়েছে, এরপর তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরপর থেকে কেউ চারদিন, কেউ পাঁচদিন ধরে হাসপাতালে রয়েছেন।

দশ বছরের সুমির জ্বর পাঁচ দিন ধরে। হাসপাতালে আসার পর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। এখন তার সঙ্গে হাসপাতালে রয়েছে তার মা, বাবা, খালাও।

বিছানায় রোগীর চারদিকে মশারি রয়েছে, তবে তাদের থাকতে হয় বিছানার পাশে মেঝেতে মাদুর পেতে।

হাসপাতালের পরিচালক উত্তম কুমার বানু বলছেন, ”এখন কারো এক দিন জ্বর হলেই সেও ডেঙ্গু আতঙ্কে হাসপাতালে চলে আসছে। তবে আমরা কাউকে ফেরাচ্ছি না। বিছানা না থাকলেও যেভাবেই হোক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসা দিচ্ছি”।

সেই চিত্র দেখা গেলো হাসপাতালের প্রবেশ মুখেই। অনেকে সেখানে ফ্লোরে বিছানা পেতে শুয়ে আছেন। সবাই জ্বরের রোগী, কারো কারো হাতে স্যালাইন লাগানো।

জ্বর হওয়ার পর ডেঙ্গু আতঙ্কে তারা হাসপাতালে এসেছেন। এখানে আসার পর তাদের পরীক্ষানিরীক্ষা দেয়া হয়েছে, তবে তার ফলাফল এখনো আসেনি। তাই তারা অপেক্ষা করছেন।

সাভার থেকে আসা রাবেয়া আক্তার বলছেন, ”আমার স্বামীর তিন দিন ধরে জ্বর। একদিন বমির সাথে রক্ত দেখা যাওয়ার পরে তাড়াতাড়ি এখানে নিয়ে এসেছি। ডাক্তাররা বলেছেন, টেস্টের ফলাফল দেখে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

মনোয়ার হোসেন বলছেন, ”আমার ভাইয়ের কিছুদিন আগে ডেঙ্গু হয়েছিল। এরপর আমার জ্বর হওয়ার আর দেরি করিনি। চলে এসেছি।”

বুধবার এই হাসপাতালে ১৩২ জন রোগী ভর্তি ছিল।

চিকিৎসক সানজিদা আইরিন বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ তিনগুণ বলে মনে হচ্ছে। আর এবার বর্ষা মৌসুমটা শুরুও হয়েছে একটু আগে ভাগে। ফলে আমরা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকেই ডেঙ্গু রোগী পেতে শুরু করেছিলাম।

“সরকারি হাসপাতালে আমরা রোগী নিতে বাধ্য থাকি। তাই চাপ হলেও, বিছানা না থাকলেও রোগী ভর্তি করতে হচ্ছে। তাই দেখতে পাচ্ছেন রোগীদের বারান্দাতে থাকতে দিতে হচ্ছে। আর ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে আমরা আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি”।

তিনি বলছেন, ”এবার অনেক রোগী আতঙ্কে এক দিনের জ্বর নিলেও চলে আসছেন।”

অন্যান্য রোগীদের তুলনায় ৪০/৫০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছেন বলে তিনি জানান।

তবে চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সাধারণত আমরা জ্বর হলে কয়েক দিন বাসায় বসে দেখি যে, এমনিতেই ভালো হয়ে যায় কিনা। কিন্তু এখন এই মৌসুমে সেটা করা ঠিক হবে না। বরং দ্রুত হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেয়াই ভালো। না হলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলছেন, জ্বরের সঙ্গে র‍্যাশ, গায়ে ব্যথা, বমি ভাব ইত্যাদি হলে আর দেরি না করেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলছেন, “জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৭৭৬৩জন মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭৩ জন”।

তাদের হিসাবে মারা গেছেন পাঁচজন। যদিও বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ বছর মৃতের সংখ্যা বলা হচ্ছে অন্তত ২৬জন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন।

সচেতনতা তৈরি, মশার আবাস নষ্ট করা, ওষুধ ছিটানোর মধ্যেই এসব কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রয়েছে।

সেই সঙ্গে ঢাকার হাসপাতাল গুলোয় প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের ওয়ার্ড ছাপিয়ে তাদের বারান্দাতেও আশ্রয় নিতে হচ্ছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877