শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৭ অপরাহ্ন

কাঠগড়ায় অঝোরে কাঁদলেন পরীমনি, পড়ে গেলেন রাস্তায়

কাঠগড়ায় অঝোরে কাঁদলেন পরীমনি, পড়ে গেলেন রাস্তায়

স্বদেশ ডেস্ক:

মাদক আইনের মামলায় ঢাকাই সিনেমার আলোচিত ও সমালোচিত নায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তৃতীয় দফায় এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।  আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম শুনানি শেষে এ রিমান্ডের আদেশ দেন।

পরীমনিকে রিমান্ড শুনানির জন্য আদালতের কাঠগড়ায় ওঠানোর পর তাকে কাঁদতে এবং হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়। অন্যদিকে রিমান্ড শুনানির পর তাকে হাজতখানায় হুড়োহুড়ি করে দ্রুততার সঙ্গে নেওয়ার সময় হাজতখানার সামনের রাস্তায় তাকে পড়ে যেতে দেখা গেছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক (নি.) কাজী গোলাম মোস্তফা গত ১৬ আগস্ট পরীমনির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তৃতীয় দফা রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, পরীমনিকে রিমান্ডে নিয়ে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের শেষ দিকে এ আসামি মামলার ঘটনা ও ঘটনার নেপথ্যে মূল হোতাদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার দেওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পরীমনিকে ইতিপূর্বে আদালতের আদেশে পুলিশ রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদে যে সকল তথ্য দিয়েছে, তা সঠিকতাসহ মাদক ব্যবসার মূল হোতাদের গ্রেপ্তার, মাদক দ্রব্যের মজুদ উদ্ধারসহ মাদক ব্যবসার পেছনে অর্থের যোগানদাতাদের খুঁজে বের করার জন্য পুনরায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।

আবেদনে আরও বলা হয়, তাকে (পরীমনি) রিমান্ডে পাওয়া গেলে মাদক ব্যবসায়ী মূল হোতাদের গ্রেপ্তার, মাদক দ্রব্যের অবৈধ উৎসসহ অপরাপদের সন্ধান পাওয়া সম্ভব হবে। পরীমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্তরালে বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছে মর্মে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জামিন নামঞ্জুর ও রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করে বলেন, ‘পরীমনির কাছ থেকে বিদেশি মদ, এলএসডি, মাদক আইস, ব্রট পাওয়া গেছে। সিআইডি তার পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে। তদন্তের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা আবশ্যক। তার রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।’

এরপর আদালতে উপস্থিত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, আসামিকে এর আগে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার কাছ থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে সেসব তথ্যসূত্র বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কারা মাদক ব্যবসায়ী, কারা এসব আমদানি করে তাদের বিষয়ে মামলার তদন্তের স্বার্থে জানা  প্রয়োজন।

এরপর পরীমনির পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. মজিবুর রহমান রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিন চেয়ে বলেন, এটি মাদক মামলা। এর আগে তাকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে কী জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। সে কি সন্ত্রাসী বাহিনীর ক্যাডার না কি আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান চক্রের সদস্য? যে ধারায় মামলা, এতে তার সর্বোচ্চ ৫ বছরের সাজা হতে পারে। তারপরও কেন বারবার তাকে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। তাকে আবার রিমান্ডে নিয়ে জোর করে স্বীকারোক্তি আদায় করানো হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সে একজন চলচ্চিত্র নায়িকা, ১০টি ছবিতে তার কন্ট্রাক্ট রয়েছে। কারাগারে থাকায় এসব ছবির শুটিং করা যাচ্ছে না। সহ-শিল্পী, কলাকুশলী, বিনিয়োগকারী এরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাননীয় আদালত, আপনি জানেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী ও নারীদের আইকন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ভূমিকায় তার অভিনয় করার কথা। সরকারি অনুদানের ছবি এটা, তাকে জামিনে মুক্তি না দিলে এই ছবির শুটিং করা যাচ্ছে না। একজন চলচ্চিত্র নায়িকা অনেক কষ্ট করে সে তার ক্যারিয়ার তৈরি করে। তাকে (পরীমনি) এভাবে বারবার রিমান্ডে নিয়ে তার মানসিক শক্তি শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। তাকে এভাবে রিমান্ড দিয়ে তার ক্যারিয়ার শেষ করে দেবেন না। জামিন পেলে তিনি পালাবেন না। যেকোনো শর্তে আমরা তার জামিন চাই। দয়া করে রিমান্ড বাতিল করে তাকে জামিন দিন।’

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নাকচ করে তার এক দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। আগামি তিন দিনের মধ্যে এই রিমান্ড আদেশ কার্যকরের আদেশ দেওয়া হয়।

আদালত রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেওয়ার পর আইনজীবী আদালতে উপস্থিত শতবর্ষী নানা শামসুল হককে পরীমনির সঙ্গে কাঠগড়ায় দেখা করার অনুমতি চাইলে আদালত ৫ মিনিট কথা বলার অনুমতি দেন। এরপর নানা শামসুল হক কাঠগড়ার বাইরে থেকে ভেতরে থাকা পরীমনির সঙ্গে কথা বলেন।  ওই সময় পরীমনি নানাকে বলেন, ‘নানা ভাই তুমি এ শরীর নিয়ে কেন আসলা।’ নানা বললেন, ‘তোকে দেখার জন্য আসলাম। তুই হতাশ হইস না। তোর জন্য দেশবাসী আছে।’ কথা বলার সময় নানার পাশে ছিলেন পরীমনির দুই খালাতো ভাই।

এদিকে, নানার সঙ্গে কথা বলা শেষ করার পর পরীমনিকে কাঠগড়া থেকে নামিয়ে সিএমএম আদালতের সামনের রাস্তা দিয়ে হাজতখানায় নেয়।  এ সময় হাজতখানার সামনের রাস্তায় পরীমনি পড়ে যান। মিডিয়াকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির জন্য পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে তাকে নেওয়ার কারণেই মূলত পরিমনি পড়ে যান।

এর আগে আজ সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে পরীমনিকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। এরপর রিমান্ড আবেদনের শুনানির জন্য বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। কাঠগড়ায় উঠেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন পরীমনি। বারবার তাকে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে দেখা যায়।

গতকাল বুধবার পরীমনির পূর্বনির্ধারিত জামিন আবেদনের শুনানির জন্য  নথি উপস্থাপিত হলে ওই সময় বিচারক বলেন, মামলাটিতে গত ১৬ আগস্ট এ আসামির ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। এর শুনানি আজ বৃহস্পতিবার ধার্য্য হয়। তাই বুধবারের জামিন শুনানি বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে গত ১৩ আগস্ট বেলা পৌনে ১২টার দিকে পরিমনি ও তার ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দীপু এবং রাজ ও তার ম্যানেজারকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয়। ওই দিন শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে পরীমনি ও তার ম্যানেজারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ৫ আগস্ট পরীমনি ও রাজ এবং তাদের ম্যানেজারদের মাদক মামলায় চারদিন করে ও গত ১০ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় দুই দিন করে রিমান্ডে পাঠান আদালত।

উল্লেখ্য, গত ৪ আগষ্ট  বিকেল ৪টার পর পরই বনানীর ১২ নম্বর রোডের পরীমনির বাসায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এ সময় বাসা থেকে ১৮.৫ লিটার বিদেশি মদ, চার গ্রাম আইস, এক স্লট এলএসডি এবং একটি পাইপ জব্দ করা হয়। ওই ঘটনায় র‌্যাব-১-এর কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান মাদক আইনে একটি মামলা করেন।

পরীমনির মামলায় বলা হয়, পরীমনি এসব মাদকদ্রব্য কবির নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করে বাসায় রাখতেন। মামলায় কবিরের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা উল্লেখ নেই। একই মামলায় আবার র‌্যাব দাবি করে, চিত্রনায়িকা পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করতেন। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যে ধারায় পরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারলে তার সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

গত জুনে রাজধানীর আশুলিয়ায় অবস্থিত বোট ক্লাবের ঘটনায় আলোচনায় আসেন নায়িকা পরীমনি। আশুলিয়ার এ ক্লাবে গভীর রাতে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গত ১৪ জুন তিনি ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার সহযোগী পরিমণির বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমি গ্রেপ্তার হন এবং সম্প্রতি নাসির উদ্দিন আহমেদ জামিন পেয়েছেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877