স্বদেশ ডেস্ক: উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। বিভিন্ন স্থানে নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ। ভেঙে পড়ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদিপশু-পাখি নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বানভাসিরা।
চট্টগ্রাম: বর্ষণ আর ত্রিপুরার ইছামতি ও হালদা নদী বেয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার হাটহাজারী, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, রাউজান, ফটিকছড়ি ও সীতাকু- উপজেলার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় সাতকানিয়া উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের প্রায় সবকটি ইউনিয়ন জলমগ্ন। চার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
সিলেট: সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নতুন করে পানি বাড়ায় প্লাবিত হচ্ছে নিাঞ্চল। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন জনসাধারণ। অনেক রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে সিলেটের ১৩ উপজেলায় নতুন নতুন এলাকাও প্লাবিত হচ্ছে। সুরমার পানি কিছুটা কমলেও কুশিয়ারার পানি বেড়ে যাওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
লালমনিরহাট: বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে পাঁচ উপজেলার নদীসংলগ্ন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। বন্যাদুর্গতরা জানান, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদিপশু-পাখি নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও মিলছে না চিকিৎসাসেবা।
মৌলভীবাজার: মনু, কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ১৫ জুলাই ভোরে নতুন করে ধলাই নদীর কমলগঞ্জের রামপাশায় আরও একটি ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ধলাই নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে চারটি। এসব ভাঙনে অন্তত ১১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাক্রান্ত হয়ে প্রায় ৮০০ পরিবার। ঢলের পানিতে নিমজ্জিত থাকায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর-কুলাউড়া ও শমশেরনগর-তারাপাশা সড়ক যোগাযোগে বিঘ ঘটে।
হবিগঞ্জ: উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল আর বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ভেঙে পড়ছে ঢাকা-সিলেট পুরনো মহাসড়ক। এ কারণে ঝুঁকি নিয়ে ওই সড়কে চলাচল করছে যানবাহন। এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এরই মধ্যে সড়ক বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে ধসে পড়া স্থানে মেরামত কাজ করেছে।
গাইবান্ধা: ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ২৫ ইউনিয়নের ১৩৫ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ফলে ওইসব এলাকার ঘরবাড়িসহ ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এতে বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় চার উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের জন্য ৬৩ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
নেত্রকোনা: বর্ষণ অব্যাহত থাকায় সোমেশ্বরী, কংস, ধনু ও উব্ধাখালীসহ সব নদনদীতে বাড়ছে বন্যার পানি। এ দিকে নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, বন্যায় জেলায় ২০ হেক্টর জমির আউশ ধান, ৬০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ও ১২০ হেক্টর জমির সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
দিনাজপুর: জেলার তিনটি প্রধান নদীর পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। সদর উপজেলার ২নং সুন্দরবন ইউনিয়নের টুটিরঘাট এলাকার বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় বন্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধের ফাটল ঠেকাতে বাঁশের বেড়া দিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শহরের পার্শ্ববর্তী মাঝাডাঙ্গা, লালবাগ গোরস্তান, হঠাৎপাড়াসহ নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম: সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬ নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নদীতীরবর্তী এলাকায় বৃদ্ধি পাচ্ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। নিাঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় লোকজন উঁচু বাড়ি, বাঁধ বা রাস্তায় আশ্রয় নিচ্ছেন। পানিতে নলকূপগুলো তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। বন্যার পানিতে তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। জেলায় ৭৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৬০ ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়েছে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জ: বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। চরাঞ্চলের বন্যাকবালিত এলাকার প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী। বর্তমানে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও হেডকোয়ার্টার রনজিৎ কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, উজানের ঢল ও টানা বর্ষণে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যমুনা তীরবর্তী সিরাজগঞ্জের চৌহালী, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, কাজিপুর, বেলকুচি ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকার অধিকাংশ কাঁচা ও পাকা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।