শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
প্রেমিকার জন্য ধর্ম ত্যাগ : বেঁচে নেই তাসলিমা!

প্রেমিকার জন্য ধর্ম ত্যাগ : বেঁচে নেই তাসলিমা!

স্বদেশ ডেস্ক: ‘মনে করেছিলাম আমার মনের মানুষ পেয়ে গেছি। পরিবার পরিজন এমনকি ধর্মও ত্যাগ করলাম তাসলিমার জন্য। সেই তাসলিমা এভাবে আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না। গ্রামপুলিশ কয়ছর চাচা বাসার দরজা খুলতে বলে, তখন দরজা খুলে তাসলিমা বলেছিলো- ‘আমরা বিয়ে করতে চাই।’ সেই তাসলিমা হার্ট অ্যাটাক করতে পারে না। ওরা তাসলিমাকে মেরে ফেলেছে’, বলেই কান্না সংবরণ করার চেষ্টা করেন নওমুসলিম আব্দুল আজিজ।

প্রেমিকার জন্য হিন্দু থেকে মুসলিম হওয়া আজিজ জানান, সে পেশায় কাঠমিস্ত্রী। কাজের সুবাদে তাসলিমাদের বাড়িতে যাতায়াত এবং ঘনিষ্টতা। সেই সুযোগে গত ২ বছর যাবৎ তাসলিমার সাথে প্রেমের মন দেওয়া নেওয়া। এরই সাথে আব্দুল আজিজের সাথে ক্রমে তাসলিমাদের পরিবারের সদস্যদেরও সখ্যতা গড়ে উঠে। তাসলিমার প্রেমে আসক্ত আব্দুল আজিজ ৬ মাস আগে অর্থাৎ গত মাঘ মাসে হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হন। মুসলিম হওয়ার সবচেয়ে বেশি অবদান তাসলিমার আপন চাচা সবুজের। তিনি তাকে মুসলমান হতে উদ্বুদ্ধ করছে সব চেয়ে বেশি। তাই কুলাউড়া আলালপুর বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হন আজিজ। তিনি জানান, তাসলিমার মা মারা যাওয়ার আগে ৪দিন উনার সাথে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ছিলেন। তাসলিমার বাবা জহুর উদ্দিন স্ত্রীর মৃত্যুর পর দেশে ফিরে হƒদরোগে আক্তান্ত হলে আব্দুল আজিজ তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। চিকিৎসা ব্যয়ভারও বহন করেন। তার কাছ কয়েক ধাপে ২৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছে তাসলিমার বাবা। তাসলিমার সাথে আব্দুল আজিজের সম্পর্কের বিষয়টি জেনে জহুর উদ্দিন (প্রেমিকার বাবা) দু’জনকে মারপিটও করেন। এরপর থেকে উভয়ের দেখা স্বাক্ষাৎ কমে যাওয়ায় ঘটনার দিন অর্থাৎ ০৪ জুলাই তাসলিমা কালামিয়ার বাজারে যান আব্দুল আজিজের সাথে দেখা করতে।

এদিকে তাসলিমার মৃত্যুর পর হতাশ আব্দুল আজিজ জানান, আমি হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছি তাসলিমার জন্য। তাসলিমার পরিবার বলতে বাবা খুবই উগ্র। এতে তিনি খুব আতঙ্কে আছেন। তবে তসলিমার বড়বোন ফাতেমা বেগম ও ভাই হাবিবুর রহমান রাহাতকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেই মৃত্যুর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। এখন তাসলিমাও নেই কি করবেন? জবাবে আব্দুল আজিজ জানান, আল্লাহর উপর তার বিশ্বাস অটুট। তিনি মুসলমানই থাকবেন। বাকি জীবন মুসলমান হিসেবেই কাটাতে চান। তবে যেখানে তাসলিমা নেই অর্থাৎ বরমচাল ছেড়ে দুরে কোথায়ও চলে যাবেন। আব্দুল আজিজের ব্যাপারে তাসলিমার বাবা জহুর উদ্দিন জানান, আব্দুল আজিজ তাদের বাড়িতে কাজ করতো বলে তিনি তাকে চেনেন। তবে ৪ জুলাই কালামিয়ার বাজারে কি ঘটেছে তা তিনি জানেন না। তিনি বাড়িতে ছিলেন না বলে জানান।

উল্লেখ্য, কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী কুলসুমা বেগম তাসলিমা (১৭) স্থানীয় কালামিয়ার বাজারের পাশে প্রেমিক নওমুসলিম আব্দুল আজিজের সাথে দেখা করতে আসেন। এসময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজন মিলে তাদের আটকে রাখে। পরে পরিবারের লোকজনের কথামত গ্রাম পুলিশ কয়ছর মিয়া তাসলিমাকে বাড়ি পৌঁছে দেন। কিন্তু বিকেলে রহস্যময় হার্ট অ্যাটাকে মারা যান তাসলিমা, এমন খবর সবর্ত্র ছড়ায় তাসলিমার পরিবার। তবে প্রেমঘটিত কারণে পরিবারের লোকজনের হাতে নির্মমভাবে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে এমনটাই দাবি করছে এলাকার মানুষ। অন্যদিকে একাধিকসূত্র নিশ্চিত করে, নিহত তাসলিমার গালে একটা আচড় এবং গলায় আঙ্গুলের চিহ্ন সু-স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশের পর উপজেলা জুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। কুলাউড়া থানা পুলিশও বিষয়টি নিয়ে নতুন করে তদন্ত কাজ শুরু করেছে বলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877