শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:০৮ অপরাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্বৈত নীতি পরিহার করুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্বৈত নীতি পরিহার করুন

সাধারণত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা জ্ঞানের আধার। বাস্তবে আমাদের দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখার পরিবর্তে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ভাগবাটোয়ারার আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রবণতা প্রবলভাবে বিদ্যমান; সাম্প্রতিক সময়ে যা সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। এরই বিষফল হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে দ্বৈত নীতিতে। এর একটি উদাহরণ হলোÑ একই অপরাধে সরকারপন্থী শিক্ষকের জন্য এক রকম আচরণ আর বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের হলে ভিন্ন আচরণ। ফলে জ্ঞানচর্চা আর পড়ালেখার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠেছে গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার চারণভূমি। বিশেষ করে দেশের প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিবেশ কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দুঃখজনক হলেও সত্যÑ ঢাবি প্রশাসনে বহু দিন ধরেই এই দ্বৈত নীতির ভূত সিন্দবাদের দৈত্য হয়ে চেপে বসে আছে। এই দ্বিমুখী অবস্থান নিয়ে নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বিগত কয়েক বছরের প্রশাসনিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটা অংশের মধ্যে নৈতিক স্খলন উৎকটভাবে দেখা দিয়েছে। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ এবং অনুশীলনের সমন্বয় অনুপস্থিত। এ কারণে এমন কর্মকাণ্ডের সাথে তারা জড়িত হয়ে পড়েন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনৈতিক সব কর্মকাণ্ড করার পরও একই ধরনের অপরাধে কাউকে সাজা, কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে। কেউ চাকরিচ্যুত হচ্ছেন, কেউবা আছেন বহালতবিয়তে। বলা যায়, সরকারদলীয় হলে ‘সাত খুন মাফ’। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনাও ধামাচাপা পড়ে যায় প্রশাসনের ইঙ্গিতে। নৈতিক স্খলন, এমফিল বা পিএইচডির থিসিস চৌর্যবৃত্তিসহ নানা কেলেঙ্কারি থাকলেও নেয়া হয় না শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। আর বিরোধীপক্ষের হলে নেমে আসে শাস্তির খড়গ। এমনও দৃষ্টান্ত রয়েছেÑ লঘু অপরাধেও দেয়া হয় গুরু দণ্ড। অনুগতদের বাঁচাতে এমন দ্বৈত নীতিই অবলম্বন করছে ঢাবি প্রশাসন।
একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলার কথা ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী। ওই অধ্যাদেশের ৫৬(৩) উপধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছেÑ ‘নৈতিক স্খলন, অদক্ষতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও চাকরিবিধি পরিপন্থী কাজের সাথে যুক্ত থাকার অপরাধে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা যেতে পারে।’ তাই নিয়ম কারো জন্য আছে, কারো জন্য নেই, কারো জন্য খণ্ডিতÑএমন হওয়া উচিত নয়। অবশ্যই এটি সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হতে হবে। কিন্তু পছন্দের লোকদের ক্ষেত্রে আইন সমভাবে প্রয়োগ না করায় নানা মহলে ঢাবি প্রশাসন তীব্রভাবে সমালোচিত হচ্ছে। এর পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একচোখা নীতিতে বিব্রত নয় বলেই মনে হয়।
আমরা মনে করি, ঢাবি প্রশাসনের এমন আচরণ কারো কাম্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার জন্য একই রকমভাবে আইনের সম প্রয়োগ বাঞ্ছনীয়। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ন্যায়বিচার হবেÑএটিই সবার প্রত্যাশিত। সেই প্রত্যাশা খর্ব করার অধিকার কারো নেই। কেউ গুরুতর অপরাধ করলে তিনি পার পেতে পারেন না। শাস্তি তাকে পেতেই হবে। তা না হলে কোনো প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সে জন্য সব কিছু দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা না করে নিরপেক্ষভাবে প্রশাসন চালাতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে অদূরভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে, তা সহজেই অনুমেয়। এটি বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার পড়ে না। তাই সবার প্রত্যাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ণধাররা দ্বৈত নীতি পরিহার করে ন্যায়নীতির ওপর দাঁড়িয়ে প্রশাসন চালাবেন। তাহলেই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877