বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিরাপদ বাহন হিসেবে রেলকে বিবেচনা করা হয়। অথচ আমাদের দেশে ঠিক এর বিপরীত চিত্র। রেলপথে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, নাট-বল্টুর ত্রুটি এখন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রেল কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, পুরনো রেলপথ ও রেলসেতুর কারণে এ সমস্যা হতেই পারে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকারের গত দুই মেয়াদে বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রেল বিভাগে। বর্তমানে ২৮ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এতে ৩ হাজার ২৭৪টি ছোট-বড় সেতু রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় মেরামত করার কথা। তাই এখন জরাজীর্ণ রেলপথ ও রেলসেতু থাকার সুযোগ কম। বরং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবার গত ১০ বছরে রেলের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাত মিলে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা। সে অনুযায়ী অগ্রগতি সামান্যই।
রেলপথ, রেলসেতু ও ইঞ্জিন-বগির জরাজীর্ণ দশা এখনো কাটেনি। বরং এ সময়ে ৩ হাজার ৪৮৩টি দুর্ঘটনা ঘটে রেলে। প্রাণহানি ঘটে অন্তত ৩২৪ জনের। সংশ্লিষ্টদের মতে, ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কুলাউড়া ট্রেন দুর্ঘটনাও এমনি এমনি হয়নি। নাজুক অবস্থা বিদ্যমান ছিল এবং সংশ্লিষ্ট কারও কাছেই তা গোপন ছিল না। তাই ঝুঁকি দূর করায় গাফিলতির জন্য জবাবদিহি চাওয়া উচিত।
দুঃখজনক বিষয় হলো, এসব ক্ষেত্রে কখনই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই। রেলের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করা নিয়েও বছরের পর বছর আমরা অনেক বড় বড় কথা শুনছি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার রেলের উন্নয়নে বরাদ্দ দিলেও তা একশ্রেণির রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দুর্নীতি এবং উদাসীনতার কারণে এতে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে না। সরকারের এই উন্নয়ন কাজ যদি সংশ্লিষ্ট খাতে দায়িত্বশীলরা বাস্তবায়ন না করে, তবে কোনোদিনই উন্নতি হবে না। শর্ষের ভেতর ভূত থাকলে সেই ভূত তাড়ানো যায় না। এ ভূত তাড়াতে সরকারের কঠোর অবস্থান নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। অর্থ বরাদ্দ হবে, সে অর্থের সদ্ব্যবহার হবে না, তা চলতে দেওয়া যায় না।
রেলকে আধুনিক এবং যুগোপযোগী করে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যারা প্রতিবন্ধক হয়ে আছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রেলপথের যে দুর্দশা অর্থাৎ চলমান ঝুঁকিপূর্ণ দুর্দশা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে দূর করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।