শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ অপরাহ্ন

ট্রাম্প-বাইডেন লড়াই, ফ্যাক্টর কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা

ট্রাম্প-বাইডেন লড়াই, ফ্যাক্টর কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা

স্বদেশ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবারও কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনিরা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। নির্বাচনে তারাই অনেকটা নির্ধারণ করেন জয়-পরাজয়। কিন্তু এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণাবাদী অসমতার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা। বিশেষ করে কয়েকজন কৃষ্ণাঙ্গকে পুলিশ হত্যা করার পর দেশজুড়ে কয়েক মাস ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। এতে দেশে বর্ণবাদী ন্যায়বিচার ও পুলিশে সংস্কার দাবি জোরালো হয়েছে। এই অস্থিরতার দিকে দৃষ্টি দিতে বাধ্য হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট জো বাইডেন। তারা জটিল এই ইস্যু নিয়ে এবার পরস্পরের মুখোমুখি।

এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

এখন নির্বাচনের বাকি দু’মাসেরও কম সময়। করোনা ভাইরাস মহামারির মাঝামাঝি অবস্থানে দেশ। রেকর্ড সংখ্যক বেকারত্বের হার। এর মধ্যে ভোটে কৃষ্ণাঙ্গরা গতি আনবেন কিনা তা অস্পষ্ট। তারা ভোট দিতে যাবেন কিনা তা কেউ হলফ করে বলতে পারছেন না। ফলে নির্বাচনের ফল নির্ধারণে তারা হয়ে উঠতে পারেন মূল ফ্যাক্টর।
সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তাকে পিছনে ফেলে অনেক বেশি এগিয়ে গেছেন জো বাইডেন। তাকে সমর্থন করছেন শতকরা ৭৮ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার। কৃষ্ণাঙ্গদের ঐতিহাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বলে পরিচিত হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্যাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ার ও প্রফেসর রবি পেরি বলেছেন, বেশির ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার সমর্থন করছেন জো বাইডেনকে। তবে তাদের আগ্রহের মধ্যে পার্থক্য আছে। বেশির ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ নারী এই মুহূর্তে অধিক হারে সমর্থন করছেন জো বাইডেনকে। অনেক তরুণ যুবকও তাকে সমর্থন করছেন।
এই মাসে উইসকনসিন রাজ্যের কেনোশা সফর করেছেন দুই প্রার্থীই। এই রাজ্যটি ব্যাটলগ্রাউন্ড বলে পরিচিত। কারণ, এখানে প্রকৃত ভোটের লড়াই হয়। সম্প্রতি কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জ্যাকব ব্লেককে পুলিশ যেখানে গুলি করে এবং তারপরে টালমাটাল হয়ে পড়ে পরিস্থিতি, সেই এলাকাও সফর করেছেন দুই প্রার্থী। উল্লেখ্য, শ্বেতাঙ্গ এক পুলিশ কর্মকর্তা পিছন থেকে সাতটি গুলি করেছে জ্যাকব ব্লেককে। এখনও তিনি জীবিত আছেন। তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। জ্যাকব ব্লেক ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর কেনোশার স্থানীয় একটি চার্চে জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে বর্ণবাদী ব্যবস্থা টিকে আছে তার বিরুদ্ধে মার্কিনিদের লড়াই করতে সহায়ক হবে সর্বশেষ এসব ঘটনা। অন্যদিকে জ্যাকব ব্লেকের নাম উল্লেখ করেননি ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বর্ণবাদী ব্যবস্থার কথা প্রত্যাখ্যান করেন। উল্টো তিনি বিক্ষোভকারীদের সমালোচনা করেন। আইন প্রয়োগকারীদের সঙ্গে তিনি অকুন্ঠ সমর্থন প্রকাশ করেন।
ডাটা বলছে, ১৯৬০ এর দশক থেকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থীদের ব্যাপকভাবে সমর্থন করে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটাররা। ওই সময় ডেমোক্রেট দল সিভিল রাইটস আইন পাস করে। এই আইনের মাধ্যমে বর্ণবাদী বৈষম্য দূর করার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ২০০৮ ও ২০১২ সালের নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট বৃদ্ধি পায়। ওই সময় তারা প্রথমবারের মতো বারাক ওবামাকে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত ও পুনঃনির্বাচিত করে। কিন্তু ২০১৬ সালে যখন হিলারি ক্লিনটন ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন, তখন তাদের এই সমর্থনে ভাটা পড়ে।
এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের কাছে তাদের দাবি জোরালো হয়েছে। বলা হচ্ছে, ২০১৬ সালে ট্রাম্প যে ফলাফলে বিজয়ী হয়েছিলেন, এবার তার চেয়ে বেশি অগ্রগতি করতে চান তিনি এবার। ২০১৬ সালে শতকরা ৮ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন ট্রাম্পকে। সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, শতকরা ১৩ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার বলেছেন, এই নির্বাচনে তারা ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার পরিকল্পনা করছেন।
অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক পোলস্টার টেরেন্স উডবারি বলেছেন তারা সম্প্রতি যেসব ডাটার সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন তাতে দেখা যায়, শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার বিশ্বাস করেন, ডেমোক্রেট পার্টিকে সমর্থন করেন। তবে তারা এবার ঘরেই অবস্থান করতে পারেন। অথবা ট্রাম্পকে ভোট দিতে পারেন। উডবারি আরো বলেছেন, রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে আমরা যা দেখেছি তা ছিল সরাসরি বক্তব্য। তারা এতে ইস্যু করেছে কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট। তার মধ্যে তারা ক্রিমিনাল জাস্টিসে সংস্কার ও বেকারত্বের ইস্যুকে সামনে এনেছে। আগস্টে কনভেনশনের প্রথম রাতেই রিপাবলিকান দলের একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ সিনেটর সাউথ ক্যারোলাইনার টিম স্কট তার ব্যক্তিগত সফলতার কাহিনী বর্ণনা করেছেন। চারদিনের এই সম্মেলনে আরো কিছু কৃষ্ণাঙ্গ বক্তব্য রাখেন। তার মধ্যে রয়েছেন এনএফএল খেলোয়াড়, নাগরিক অধিকারকর্মী। উডবারি বলেছেন, এবারের নির্বাচনে অবশ্যই কৃষ্ণাঙ্গরা ট্রাম্প কৌশলে একটি প্রান্তিক বিষয় হবেন না। তারা হবেন জয় নির্ধারক।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877