গত ১৫ জানুয়ারি এক কিশোরীকে গণধর্ষণের পর ৪ ধর্ষক উল্লাস করে তা ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করেছিল। শুক্রবার রাতে ওই ৪ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে র্যাব। আমরা মনে করি এদের শুধু যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করাই যথেষ্ট হবে না, অপরাধ সংঘটনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের যে বিকৃত মানসিকতা ও অপরিণামদর্শিতার প্রকাশ ঘটেছে, তা নিয়েও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।
বুধবার বিকালে এক বান্ধবীর সহায়তায় ওই চার বন্ধু জন্মদিনের কথা বলে কৌশলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকার একটি বাসায় ওই কিশোরীকে ডেকে নিয়ে যায় ও জন্মদিনের কেক কেটে সবাই মিলে আনন্দ উল্লাস করে। একপর্যায়ে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ওই কিশোরীকে এনার্জি ড্রিংসের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে পান করিয়ে অজ্ঞান করে। পরে পাশের একটি ঝোপের ভেতর নিয়ে কিশোরীর হাত, পা ও মুখ বেঁধে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে।
বলার অপেক্ষা রাখে না বিকৃত মানসিকতার ধর্ষকের সংখ্যা এই সমাজে নেহাত কম নয়। ধর্ষণকা- এখন প্রতিদিনের সংবাদ। সরকারকে এখন এদিকে নজর দিতে হবে। ধর্ষণের বিচার প্রক্রিয়ার দুর্বলতা ও বাধাগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। দ্রুত ধর্ষণ মামলা নিষ্পত্তি করতে বেশি বেশি ট্রাইব্যুনাল ও বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।
নারী ও শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো বলছে, পুলিশ থেকে শুরু করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না বলে ধর্ষণের মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয় এবং অপরাধীদের শাস্তি হয় না। ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ থেকে শুরু করে মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় পুলিশের অদক্ষতা, আন্তরিকহীনতা, দুর্নীতি প্রবণতা, ধর্ষকের রাজনৈতিক পরিচয়, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি কারণে অধিকাংশ ধর্ষণ মামলায় আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হয় না বলে ধর্ষক ছাড়া পেয়ে যায়। ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত বিচার ও ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এত বেশিসংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারত না। আমরা বারবার বলছি, বিলম্বিত বিচার ও বিচারহীনতার পরিবেশ ধর্ষণ প্রবণতা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। অপরাধীরা ধরা পড়েছে, তাদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকরা সাজা পাচ্ছেÑ এটা আমরা দেখতে চাই।