স্বদেশ ডেস্ক: বিচারব্যবস্থায় গতি আনতে হবে, একথা যেমন ঠিক, তেমনই এও বোঝা প্রয়োজন যে বিচার সঠিক পথে হতে হবে। কোনও পরিস্থিতিতেই তা যেন কোনও চাপের মুখে পড়ে প্রতিহিংসামূলক বা তাৎক্ষণিক না হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখা প্রয়োজন। হায়দরাবাদ, উন্নাওয়ের ঘটনায় বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর আজ এ নিয়ে মুখ খুলে এই ব্যাখ্যা দিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে। যোধপুরের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি একথা বলেছেন।
হায়দরাবাদে গণধর্ষণ, খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ৪ জন পুলিশের এনকাউন্টারে মৃত্যুকে সঠিক বিচার বলে মনে করছেন অধিকাংশ দেশবাসী। তাঁদের মতামত প্রায় একইরকম। যেখানে সন্দেহভাজন, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারির পর্যায় পেরিয়ে অপরাধী প্রমাণের পর শাস্তিদান – এই পদ্ধতি এতটা দীর্ঘ হয়, সেখানে এই পুলিশের এই তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ স্বাগত, যথাযথ। অর্থাৎ বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতাতেই তাঁরা ক্ষুব্ধ বলে এনকাউন্টারকে সমর্থন করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
রাজস্থানের যোধপুরের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে এস এ বোবদের মন্তব্য, ‘প্রতিহিংসা যেন কোনও বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত না করে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলিতে পুরনো বিতর্কই নতুনভাবে ঘুরেফিরে আসছে। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে ফৌজদারি মামলায় বিচারের দৃষ্টিভঙ্গি পালটানো দরকার। এই ব্যাপারে খুব বেশি সময় নেওয়া যায় না। কিন্তু আমি মনে করি যে বিচার একেবারেই তাৎক্ষণিক হওয়া উচিত নয়। কোনও প্রতিহিংসার জায়গা থেকেও তা হয়নি অনুচিত। যদি এমনটা হয়, তাহলে তা আর ন্যায়বিচার থাকে না। বিচারব্যবস্থা নিজের চরিত্র হারিয়ে ফেলে।’
তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, জনগণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, দাবি থেকে দ্রুত বিচারের পথে হাঁটলে অনেক ফাঁকফোকর থেকে যায়, যা অনভিপ্রেত। অর্থাৎ বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারানো মানুষজনকে বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি এই প্রক্রিয়াও যে ত্বরান্বিত করতে হবে, সেই প্রয়োজনীয়তার কথাও মানলেন দেশের প্রধান বিচারপতি।
অমুসলিমদের ভারতে ৫ বছর থাকলেই নাগরিকত্ব!
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে আরও সহজ হবে অমুসলিম নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া। মাত্র পাঁচ বছর আগে ভারতে আসলেই নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন তাঁরা। সূত্রের খবর, আগামী সোমবার সংসদে যে নাগরিকত্ব বিল পেশ হতে চলেছে, তাতেই নতুন শর্ত আরোপ করা হচ্ছে। আগে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে কোনও শরণার্থীকে অন্তত ১১ বছর এদেশে থাকতে হত। গত বছর সেই সময়সীমা কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছিল। এবছর তা আরও কমানো হবে।
সূত্রের খবর, নতুন বিলে শর্ত দেওয়া হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বা তার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যে সমস্ত অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ, আপনি যদি হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি বা জৈন ধর্মের লোক হন, এবং ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকে ভারতে বসবাস করে থাকেন, তাহলেই আপনি নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেই এই নতুন সংশোধনী আনা হচ্ছে। ১৯৫৫ সালের আইন অনুযায়ী, শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পেত ১১ বছর থাকার পর। কিন্তু, নতুন বিল বলছে মাত্র ৫ বছর ভারতে থাকলেই নিঃশর্তে নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে অমুসলিমরা। এক্ষেত্রে, শুধুমাত্র নিজেকে অমুসলিম বলে হলফনামা জমা দিলেই কাজ মিটে যাবে। কোনওরকম কাগজপত্রে জোগাড়ের ঝামেলাতেও পড়তে হবে না
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব পেতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেজন্যই এমন নিয়ম আনতে চাইছে বিজেপি। এতে রাজনৈতিকভাবে বেশ খানিকটা সুবিধা পেয়ে যাবে গেরুয়া শিবির। বিশেষ করে এরাজ্যে হিন্দুদের যাতে কোনওরকম সমস্যায় পড়তে না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কয়েকবার কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থও হয়েছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। সেকারণেই হয়তো, বিশেষ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা গেরুয়া শিবিরের।