বিশ্বস্ততার কারণে চাকরিজীবনে অসংখ্যবার ভিভিআইপি ফ্লাইট করেছেন বিমানের বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিনিয়র পাইলট ও চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। ছিলেন বিতর্কের ঊর্ধ্বে। বুধবার (৫ জুন) হঠাৎ একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন পাসপোর্ট ছাড়া দোহা গিয়ে। অনিচ্ছাকৃত এই ঘটনায় জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ।
শুক্রবার বেলা দেড়টায় তিনি কাতারের দোহার ক্রাউন প্লাজা হোটেল থেকে টেলিফোনে জাগো নিউজের মাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট করতে আসার সময় এভাবে পাসপোর্ট রেখে আসা অনিচ্ছাকৃত হলেও এই দায় আমার নিজের। আমি আমার এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ভবিষ্যতে এই ঘটনা আমার জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।’
বিমানের নিয়মনীতির প্রতি শ্রদ্ধা ও রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ফজল মাহমুদ বলেন, ‘আমার অনিচ্ছাকৃত ভুলটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনায় নিয়ে আমাকে ভিভিআইপি ফ্লাইটে বহাল রাখতে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’
নিজেকে শতভাগ সুস্থ ও স্বাভাবিক দাবি করে তিনি বলেন, ‘ত্রিশ বছর বিমানে চাকরি করছি, প্রতিনিয়ত ভিভিআইপি ফ্লাইট করেছি। কোনোদিন ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্বে অবহেলা করিনি।’
এর আগে তিনি দাবি করেন তাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। ভুলবশত সঙ্গে পাসপোর্ট না নেয়ায় তিনি বিমানবন্দরের ট্রানজিট হোটেল অরিস এয়ারপোর্টের একটি কক্ষ ভাড়া নেন। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে যাওয়া পাসপোর্টটি নিয়ে সহজভাবে ইমিগ্রেশন পার হয়ে বিমান নির্ধারিত ক্রাউন প্লাজা হোটেলে গিয়ে ওঠেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হোটেল থেকে ফোনে জাগো নিউজকে অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার বর্ণনা দেন বিমানের সিনিয়র ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন দেখলাম আমার সঙ্গে পাসপোর্টটি নেই, সঙ্গে সঙ্গে আমি ইমিগ্রেশনে না গিয়ে ট্রানজিট পয়েন্টের অরিস এয়ারপোর্ট হোটেলে গিয়ে উঠি। গতরাত (বৃহস্পতিবার) সোয়া এগারোটার দিকে বিমানের স্টেশন ম্যানেজার ইলিয়াসের কাছ থেকে পাসপোর্ট গ্রহণের পর ক্রাউন প্লাজা হোটেলে চলে আসি। ঘটনা এইটুকুই। অথচ প্রকৃত ঘটনা না জেনে আমার দেশের মিডিয়া কাল্পনিক কথাবার্তা প্রচার করে যাচ্ছে। আমি স্বাভাবিক আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভুলবশত পাসপোর্ট সঙ্গে না থাকলে ইমিগ্রেশন কোনো ক্রুকে আটক করা হয় না। বরং তখন পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্টস নিয়ে আসার জন্য বলা হয়। আমাকেও তাই বলতো। আমি পাসপোর্ট না থাকায় ইমিগ্রেশনে না গিয়ে হোটেলে চলে যাই।’
এদিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিবের নির্দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ফজল মাহমুদকে ভিভিআইপি ফ্লাইট থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে পাঠানো হচ্ছে ক্যাপ্টেন আমিনুলকে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা পাঁচ মিনিটে বিমানের দোহাগামী নিয়মিত ফ্লাইট বিজি-০২৫ তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগ।
এর আগে পাসপোর্ট না নিয়ে দোহায় যাওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদের পাসপোর্ট নিয়েছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দোহাগামী ফ্লাইট পাসপোর্টটি বহন করে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, বিদেশ সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনতে বুধবার (৫ জুন) রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের একটি ড্রিমলাইনার দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যায়। বিমানটির পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ। তিনি পাসপোর্ট ছাড়াই কাতার যান, যেটি ধরা পড়ে সে দেশের ইমিগ্রেশনে।
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, পাসপোর্ট ছাড়া কারও দেশত্যাগ কিংবা অন্যদেশে প্রবেশের সুযোগ নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দেশে সরকারি সফরের অংশ হিসেবে বর্তমানে ফিনল্যান্ডে অবস্থান করছেন। ৮ জুন দোহা বিমানবন্দর হয়ে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তাকে বহন করতে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের ড্রিমলাইনার বর্তমানে কাতার অবস্থান করছে। ফজল মাহমুদের ফ্লাইটটি নিয়ে আসার কথা ছিল।