স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য ইনসাফ কায়েম, বৈষম্য দূর ও মানুষের ন্যায্য অধিকার সুনিশ্চিত করা।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) আ’লীগ সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ ইসলামী ছাত্রশিবিরেরর রাজশাহী মহানগরী শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আলী রায়হানের নামাজে জানাজা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা বুক চিতিয়ে যুদ্ধ করেছে যেসমস্ত যুব সমাজ বৈষম্য থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সেই ছাত্র-যুব সমাজের যে প্রত্যাশা, এদেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা, আমার এবং আমাদের দলের একই প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা হচ্ছে দেশে ইনসাফ কায়েম করা। বেইনসাফি দূর করা, বৈষম্য দূর করা এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার সুনিশ্চিত করা।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের যেসমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে পাহাদার বসিয়ে দিয়েছি। গত তিনদিন ধরে তারা দিবারাত্রি পাহারা দিচ্ছে। তাদের মধ্যে থেকে বা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে থেকে কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতা ফিল করে তাদের সাহায্যের জন্য আমরা হেল্প লাইন ওপেন করেছি। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য কমিটি ফরমেশন করেছি। প্রথম দিন থেকে বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে আমি জাতিকে আহ্বান জানিয়েছি, আমরা বিশৃঙ্খলা করতে দেব না। প্রশাসনের সাথে এরই মধ্যে বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে আমাদের স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের মিটিং হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়া হয়েছে তারা যদি দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসেন আমরা তাদেরকে পাহারা দেব।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আমূল সংস্কার প্রত্যাশা করি। যুদ্ধ শুরু হয়েছে সংস্কারের। এটি শেষ হয়নি। এই যুদ্ধে আমরা আছি এবং আমরা থাকব ইনশাআল্লাহ।
এর আগে ঐতিহাসিক রাজশাহী কলেজ মাঠে শহীদ আলী রায়হানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজে ইমামতি করেন আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান। জানাজাপূর্ব সমাবেশেও বক্তব্য রাখেন ডা. শফিকুর রহমান।
এ সময় তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে জালেম সরকারের হাত থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে। এখন যদি কেউ আবারো বাংলাদেশে দুর্নীতি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তাহলে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ। জনগণ যাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করতে পারে, বিশ্বাসঘাতকতা করলে তাদেরকে দেশ ছাড়াও করতে পারে। যারা জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে তাদের রক্তের দাগ না শুকাতেই অন্য একটি অপশক্তি লুট ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে শুরু করেছে, তাদেরকে আমরা ঘৃণা করি। এমন কোনো অন্যায় দেখলে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান জামায়াতের আমির।
এতে অন্যদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগরী আমির মাওলানা ড. কেরামত আলী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, জামায়াতের রাজশাহী মহানগরী সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল, শহীদ আলী রায়হানের বাবা মোসলেরম উদ্দিন, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক, বিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হক মিলন, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ হাজারো মানুষ নামাজে জানাজায় অংশ নেন।
জানাজা শেষে শহীদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার মঙ্গলপুর গ্রামে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
আলী রায়হান রাজশাহী কলেজের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর আলুপট্টি এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে শিক্ষার্থীরা রাজশাহীর মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস-সংলগ্ন স্বচ্ছ টাওয়ারের কাছে পৌছলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন রাজশাহী মহানগর শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী রায়হান। পরে তিন দিন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার মারা যান তিনি।
রামেক হাসপাতালের আইসিইউ’র ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে অপারেশন করা হলেও তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। অবস্থার আরো অবনতি হলে বুধবার থেকে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মারা যান তিনি।