স্বদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশে একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ’ নির্বাচনের ঘোষিত লক্ষ্যে সহযোগিতা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা নয়। কে দেশ চালাবে তা স্বাধীনভাবে নির্বাচন করতে জনগণকে সহযোগিতা করাই তাদের লক্ষ্য।
রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, ‘আমরা লক্ষ্যের সমর্থনে প্রায়শই কথা বলি।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে মর্যাদার সাথে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে সেজন্য মিয়ানমারে সেই পরিবেশ তৈরি নিশ্চিত করা সমগ্র বিশ্বের সম্মিলিত দায়িত্ব।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের সুরক্ষিত রাখা দরকার, শিক্ষিত করা দরকার এবং তারা যেখানে বাস করছে সেখানে তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা দরকার।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, মিয়ানমারের পদক্ষেপের জন্য রোহিঙ্গাদের শাস্তি দেয়া উচিত নয় এবং তাদের প্রতি কোনো বৈষম্য ছাড়াই ভালো আচরণ করা উচিত।
রাষ্ট্রদূত হাস মিয়ানমারের ক্রমাগত সম্মিলিত চাপের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই সঙ্কটের সমাধান এত সহজ নয়।
তিনি বলেন, তারা পুনর্বাসনের বিকল্পের বিষয়েও ভাবছেন, তবে এ সুযোগ খুবই সীমিত। এটি কেবল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকদের জন্য।
এ সময় রাষ্ট্রদূত গণহত্যার জন্য ব্যক্তিদের দায়ী করার গুরুত্বও তুলে ধরেন।
তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেন। তা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতো বলে মনে করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উপলক্ষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শান্তি দিবসের সারমর্ম হলো আমাদের বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শান্তির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মনে করিয়ে দেয়া।’
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) প্রো-ভিসি অধ্যাপক আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী, অনুষদ ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ১ হাজার ২০০ জন উপস্থিত ছিলেন।
এনএসইউ’র চেয়ারম্যান ও বোর্ড অব ট্রাস্টি জাভেদ মুনির আহমেদ সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, শান্তি এখন একটি সংঘাতপূর্ণ বিশ্বে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) -এর সমন্বয়কারী ড. আব্দুল ওহাব গবেষণা, সংলাপ ও সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে শান্তি, টেকসই ও কূটনীতি প্রচারে সিপিএসর ভূমিকা তুলে ধরেন।
একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় নিবেদনের কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাস। এ সময় রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বৈশ্বিক শান্তি প্রচেষ্টায় শিক্ষা ও ডিজিটাল সম্পদে সজ্জিত তরুণদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেন।
পররাষ্ট্র নীতিতে হাস সামরিক পদক্ষেপের চেয়ে কূটনীতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদারের তাগিদ দেন।
উপরন্তু, তিনি ভারত-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির আস্থা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপের উপর ফোকাস করার কথা উল্লেখ করেছেন।
অধিবেশনের সভাপতি অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, স্থিতিশীল দেশগুলোও উল্লেখযোগ্য বৈষম্য এবং রাজনৈতিক বিভাজনের মুখোমুখি। তাই, যুদ্ধ, সংঘাত ও বাস্তুচ্যুতির ব্যাপক প্রভাবের কারণে বিশ্বের জরুরিভাবে শান্তি প্রয়োজন।
এনএসইউ’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান একটি জলপাই গাছ রোপন করেন, যা পরিবেশগত স্থায়ীত্বের প্রতি এনএসইউ’র প্রতিশ্রুতিকে আরো দৃঢ় করে। একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ও একটি সমৃদ্ধ গ্রহের মধ্যে সমান্তরাল পরিবেশ বজায় রাখে।
সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের (এসআইপিজি) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অফিস অব এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স (ওইএ) যৌথভাবে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস পালনের জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এবারের শান্তি দিবসের ইভেন্টের থিম হলো ‘অ্যাকশন ফর পিস : আওয়ার অ্যাম্বিশন ফর দ্যা ‘গ্লোবালগোলস’।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে এই প্রতিপাদ্য মনে রাখার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত হাস।
তিনি বলেন, ‘আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সৃজনশীলতা এবং সংকল্প বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শান্তির পক্ষে, গণতান্ত্রিক আদর্শের জন্য বাহিনী, সংযোগের চ্যাম্পিয়ন ও সমৃদ্ধির দূত হোন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনার কর্মের মাধ্যমে, আপনি আমাদের বিশ্বকে আরো শান্তিপূর্ণ, সংযুক্ত ও সবার জন্য সমৃদ্ধ স্থান করতে সাহায্য করতে পারেন।’
সূত্র : ইউএনবি