বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
একনেকে ৮ হাজার কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন যু্ক্তরাষ্ট্রের সেতু দুর্ঘটনা, বিশ্বজুড়ে প্রভাবের আশঙ্কা ৫ ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ করছেন পোশাকশ্রমিকরা ভুল হলে শুধরে দিবেন : বিএসএমএমইউ নতুন ভিসি বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ খণ্ডালেন ওবায়দুল কাদের পণবন্দী জাহাজ ও ক্রুদের মুক্ত করার প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত যেকোনো দিন কাওরান বাজার স্থানান্তরের কাজ শুরু
সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণের ১ বছর : বিচার, ক্ষতিপূরণ, অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন কাটেনি

সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণের ১ বছর : বিচার, ক্ষতিপূরণ, অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন কাটেনি

স্বদেশ ডেস্ক:

রোববার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এই এক বছরের মধ্যে ডিপো এলাকা পুনরায় আগের চিত্রে ফিরলেও এখন পর্যন্ত উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন আহতদের কয়েকজন। আবার বিচার নিয়েও হতাশ হতাহতের স্বজনরা।

গত বছরের ৪ জুন রাতে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১৩ জন দমকলকর্মীসহ ৫১ জন নিহত এবং দু’শতাধিক আহত হন। যাদের অনেককে পঙ্গু হয়ে গেছেন। পরে আশেপাশের জেলার মোট ২৫টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট সেই সাথে সেনাবাহিনী, ও নৌ বাহিনীর চেষ্টায় ৮৬ ঘণ্টায় ডিপোর আগুন নেভানো হয়।

ওই ঘটনার পেছনে ডিপোর মালিক-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠলেও প্রাথমিক পর্যায়েই কর্তৃপক্ষকে দায়মুক্তি দিয়ে সেখানকার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারাও সম্প্রতি দায়মুক্তি পেয়েছেন। ফলে অর্ধশত মানুষ নিহতের পেছনে কারা দায়ী সেটি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিএম ডিপো বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

ক্ষতিপূরণ
বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনে হতাহতদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ এবং সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মালিকপক্ষ। ডিপো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এ পর্যন্ত নিহত ৪৩ জনের পরিবার এবং ১৮২ জন আহত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে এ কাজ করার কথা জানান তারা।

বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক মাঈনুল আহসান জানান, তারা নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ১৫ লাখ, বিএম ডিপোতে কর্মরত ও সাধারণ নিহতদের ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন। অন্যদিকে যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তারা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী হলে ১০ লাখ টাকা সেইসাথে বেতন বোনাস, তাদের আত্মীয়দের চাকরি দেয়া হয়েছে। পঙ্গু হয়ে যাওয়া ডিপোকর্মী ও সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ছয় লাখ এবং সাধারণ আহতদের ৪ লাখ টাকা করে দেয়ার কথা জানান তিনি।

তবে আহতদের অনেকে এখনো প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম যুব ট্রেড ইউনিয়ন নেটওয়ার্ক।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজের প্রোগ্রাম অফিসার ফজলুল কবির মিন্টু জানান, গত বছর ১৮ অক্টোবর আহতদের মধ্যে ৩৬ জন ক্ষতিপূরণ পেতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন। জেলা প্রশাসক তালিকাটি ডিপো কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠালেও এখন পর্যন্ত অনেক আহত শ্রমিকই প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ পাননি। বিএম ডিপোর সরাসরি শ্রমিক বিশেষ করে মালিকের গ্রাম বাঁশখালির লোকজন ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। যে ৩৬ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে সেখান থেকে বেছে বেছে মালিকের গ্রামের বাড়ির লোকজনকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ডিপোর সরাসরি শ্রমিক না কিন্তু ঠিকাদারিতে কাজ করে, যেমন রেস্তোরাঁর কর্মী, এমন ১৫ থেকে ১৬ জনকে তারা ক্ষতিপূরণ দিতে গড়িমসি করছে। তবে বাকিদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক মাঈনুল আহসান।

কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলেও বার বার সময়ক্ষেপণ ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

এক বছর আগের ওই ঘটনায় নূর হোসেন এক চোখের দৃষ্টি, এক কানের শ্রবণশক্তি এবং এক পায়ের চলনশক্তি হারিয়েছেন। কিন্তু ক্ষতিপূরণের জন্য এখনো তাকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি ডিপোর রেস্টুরেন্টে নয় বছর ধরে কাজ করতাম। আগুন লাগার পরে আমরা পানি দিচ্ছিলাম। হঠাৎ একটা বিস্ফোরণে আমি দূরে গিয়ে পড়ি। কোনোভাবে নিজের জীবন বাঁচাই। এখন আমরা ক্ষতিপূরণের জন্য এক বছর ধরে ঘুরছি, কিন্তু তারা দিবে দিবে বলে দেয় না। ইদানীং আমাদের ডিপোতে ঢুকতে দেয় না।’

অথচ শ্রম আইনের ১২৩(২) ধারা অনুযায়ী, শ্রমিকদের চূড়ান্ত পাওনা বা ক্ষতিপূরণ সর্বোচ্চ ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ বাধ্যতামূলক। এছাড়া আইএলও কনভেনশন ১২১ ধারা অনুসারে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বেতন-বোনাস দেয়ার কথা বলা আছে। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী কোনো শ্রমিক যদি কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ২০ বছরে মারা যায় তাহলে তার ৬০ বছর আয়ু ধরে বাকি ৪০ বছরের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। সেইসাথে পঙ্গু ব্যক্তির ক্ষেত্রে আজীবন আয়ের সাথে তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

এদিকে ডিএনএ টেস্টে সঠিকভাবে পরিচয় চিহ্নিত না হওয়ায় তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার প্রক্রিয়াটি ঝুলে আছে। পুলিশ বলছে, অন্তত আটজনের লাশের নাম-পরিচয় শনাক্ত হয়নি। তাদের লাশ কেউ দাবি করতে আসেনি। এভাবে প্রায় ১০ মাস চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে লাশগুলো পড়ে থাকার পর গত ২০ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে নগরীর একটি কবরস্থানে ওই আটটি লাশ দাফন করা হয়।

বিচার
বিস্ফোরণের ঘটনার তিন দিন পর গত ৭ জুন সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ বিএম ডিপোর আট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় মামলা করে। দায়িত্বে অবহেলার কারণে বিস্ফোরণের সূত্রপাত বলে ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়।

সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ প্রথমে মামলাটি তদন্ত করলেও পরে তদন্ত ভার পায় চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এর প্রায় এক বছর পর গত মাসে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। ওই প্রতিবেদনে, এ ঘটনায় কারও দায় খুঁজে পাওয়া যায়নি উল্লেখ করা হয়। আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে। ফলে এ ঘটনায় হওয়া মামলায় বিএম ডিপোর যে আট কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছিল তারা সবাই অব্যাহতি পেয়ে যান।

পুলিশের দাবি, এটি একটি নিছক দুর্ঘটনা। এজন্য কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনো দায় পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ বলেন, আমরা মামলার কেবল ফৌজদারি দিকটি দেখেছি। আমরা তদন্তে দেখেছি যে আসামিরা কোনো ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ করেছে কি না, আসামিদের কোনো ‘ইল মোটিভ’ ছিল কি না। কিন্তু তদন্তে আমরা এমন কিছু পাইনি। তবে বিস্ফোরণের আরো কারণ থাকতে পারে। বিভিন্ন সংস্থা এ নিয়ে তদন্ত করেছে, এর কোনোটা পুলিশের তদন্তের অংশ ছিল না।

অথচ মামলার এজাহারে কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়, প্রথমত, ডিপো কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ না নিয়ে ডিপোতে বিপদজনক রাসায়নিক পদার্থ সংরক্ষণ করেছিল। দ্বিতীয়ত, অগ্নিকাণ্ডের পর উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের রাসায়নিক মজুদ থাকার বিষয়টি অবহিত করা হয়নি। তৃতীয়ত, এই মজুদ রাসায়নিক পদার্থের কারণেই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে মৃত্যু ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তদের অবহেলায় জানমাল ও সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে।

এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি ওই সময় বলেছিল, মালিকপক্ষ এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। তবে ডিপো মালিকদের বাদ দিয়ে সেখানকার কর্মচারীদের মামলার আসামি করার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা তাদের হাতে ডিপোর কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্ব থাকলেও প্রতিষ্ঠানের ‘সেফটি-সিকিউরিটি’ বাস্তবায়নের কোনো ক্ষমতা ছিল না।

অগ্নি নিরাপত্তা
বিএম ডিপোতে শুরুতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকলকর্মীরা পানি ছিটিয়ে তা নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় একের পর এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ। কম্পন পাঁচ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত অনুভূত হয় এবং এর প্রভাবে আশপাশে ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

তবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের চট্টগ্রাম শাখার উপ-পরিচালক মো: আবদুল হালিম বলেন, বর্তমানে বিএম ডিপোর অগ্নি নিরাপত্তায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। অগ্নি নিরাপত্তা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা যে সমস্ত উপাদান স্থাপন করতে বলেছি, ডিপো কর্তৃপক্ষ তা শতভাগ নিশ্চিত করেছে। তারা বিশ্বমান বজায় রেখেছে। তাই আশা করছি ভবিষ্যতে এই ডিপোতে এ ধরনের আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে না।

বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক মাঈনুল আহসান জানান, ফেব্রুয়ারিতে অগ্নি নিরাপত্তার সব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এখানে ফায়ার হাইড্রেন্ট ও আধুনিক ডিটেকশন সিস্টেমের পাশাপাশি পুরো ২৪ একর ডিপোকে মাত্র ১৮ মিনিটে অ্যালকোহল রেজিস্টেন্স ফোম দিয়ে ঢেকে দেয়ার ব্যবস্থাও আছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ফায়ার ডিজি অগ্নি নিরাপত্তা পরিদর্শনে এসে একে বিশ্বমানের বলেছেন। অথচ এক বছর আগেও ভিন্ন চিত্র ছিল এই ডিপোর। দুর্ঘটনার পর একাধিক সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসে তাদের নিরাপত্তা ঘাটতিসহ নানা গাফেলতির চিত্র।

অগ্নিকাণ্ডের পর বিভিন্ন সংস্থার পরিদর্শনে ওই ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকার বিষয়টি উঠে আসে। পরিবেশ অধিদফতরসহ প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে বলা হয়, ওই রাসায়নিক ছিল ডিপোতে বিস্ফোরণের প্রধান কারণ।

বিএম কন্টেইনারে এ ধরণের রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থ মজুদের কোনো অনুমোদন ছিল না বলে জানিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক অধিদফতর ও পরিবেশ অধিদফতর ।

কন্টেইনার ডিপোগুলোকে অরেঞ্জ-এ, অরেঞ্জ-বি এবং রেড এই তিন ক্যাটাগরির লাইসেন্স দেয়া হয়। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বা কোনো রাসায়নিক পদার্থ মজুদের জন্য রেড লাইসেন্স লাগে। আর এই রেড লাইসেন্স পেতে হলে ফায়ার সার্ভিস এবং বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমতিপত্র নিতে হয়। ওই অনুমতিপত্রের ভিত্তিতে সে প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ অধিদফতর রেড লাইসেন্স দিয়ে থাকে। কিন্তু ডিপো কর্তৃপক্ষ এমন কোনো লাইসেন্স পায়নি বলে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল আলম ও সময় জানিয়েছিলেন। এছাড়া আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগে থেকে কনটেইনার ভর্তি ভয়াবহ রাসায়নিক পদার্থের বিষয়ে জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক মাঈনুল আহসান জানান, শুরু থেকেই সব ধরণের রাসায়নিক মজুদের ছাড়পত্র ছিল। এছাড়া প্রতিটি কন্টেইনার কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স নিয়েই ছাড় পেয়েছে। এছাড়া আগুন লাগার সময় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ কল দিয়ে তারা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকার কথা জানিয়েছিলেন। তদন্তে আমাদের দায় পায়নি বলেই ফৌজদারি মামলায় খালাস পাওয়া গেছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা বিএম ডিপোতে ছিল। পোর্টে সব ধরনের পণ্য খালাসের লাইসেন্স আমাদের ছিল। তাছাড়া এটি কাস্টমস নিয়ন্ত্রিত এলাকা। কাস্টমসের লিখিত ছাড়পত্র ছাড়া কোনো কন্টেইনার বিএম ডিপোতে ঢুকতে পারে না। তারপরও দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেকোনো বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানেও দুর্ঘটনা ঘটে।

২০১১ সালে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুই কোম্পানির যৌথ বিনিয়োগে বেসরকারি এই ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটি (আইসিডি) গড়ে তোলা হয়। বিভাগীয় কমিশনারের গঠিত তদন্ত কমিটি বলেছিল, ওই ডিপোতে দুর্ঘটনার সময় মোট ৩৭টি কন্টেইনারে সাড়ে ৭ লাখ লিটারেরও বেশি পরিমাণ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল। প্রতি কন্টেইনারে মোট ৬৮০টি রাসায়নিক ভর্তি জেরিকেন এবং প্রতি জেরিকেনে ৩০ লিটার করে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল। এরমধ্যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ভর্তি মোট ২৫টি কন্টেইনার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা অবহেলাজনিত ঘটনা, কোনো দুর্ঘটনা নয়। অন্যদিকে তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বেসরকারি ওই কনটেইনারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মালিকপক্ষ এবং তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো দায় এড়াতে পারে না। এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে কমিটির পক্ষ থেকে ২০টি সুপারিশের কথা তুলে ধরা হয়।

১৯৮৫ সালে চট্টগ্রামে বেসরকারি ডিপো ব্যবস্থা যাত্রা শুরু হয়। চার দশকে ২১টি আইসিডি গড়ে উঠলেও বিএম ডিপোর দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত মাত্র তিনটিতে অগ্নি নিরাপত্তা কার্যকর করা হয়। তবে বিএম ডিপো দুর্ঘটনার পর তারা অনেকটাই নড়েচড়ে বসেছে। ডিপোগুলোতে দাহ্য পদার্থসহ বিপদজনক মালামাল রাখার ক্ষেত্রেও বাড়তি নিরাপত্তার দিকে জোর দেয়া হচ্ছে।

জানা যায়, গত বছর ১৪টি আইসিডিতে সেফটি প্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কাজ শুরুর অপেক্ষায় আরো তিনটি।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877