শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন

প্রাথমিকে আট হাজার স্কুল বন্ধ, শিক্ষার্থী কমেছে ১৪ লাখ

প্রাথমিকে আট হাজার স্কুল বন্ধ, শিক্ষার্থী কমেছে ১৪ লাখ

স্বদেশ ডেস্ক:

এক বছরের ব্যবধানে দেশে প্রাথমিক স্তরের প্রায় আট হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি করোনাকালীন সময়ে প্রাথমিক স্তরের ১৪ লাখ শিক্ষার্থী কমে গেছে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের করা বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারিতে (এপিএসসি) উঠে এসেছে।

সম্প্রতি করোনার সময় প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনের ক্ষতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে এপিএসসিতে এ তথ্য পাওয়া গেছে।’

ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘এটা আসলে করোনাকালীন সময়ে চিত্র। ওই সময় কিন্ডারগার্ডেন টাইপের স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ছিল না। ভাড়া বাড়িতে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলে। শিক্ষার্থী না থাকায় তাদের কোনো উপার্জনও ছিল না। ফলে তারা চালাতে পারেনি। তবে কোনো সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় কিছু কিছু চালু হচ্ছে।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর বাইরে প্রাথমিকে আরো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিবছর প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারি করা হয়। সে অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল এক লাখ ১৮ হাজারের কাছাকাছি। ২০২২ সালের শুমারিতে এর সংখ্যা এক লাখ ১০ হাজারের নিচে নেমে এসেছে, মানে আট হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর নেই। ২০২১ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির তথ্যে দেখা যায়, ওই বছর কিন্ডারগার্টেনসহ সব মিলিয়ে দেশে মোট ১৪ হাজার ১১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কমেছিল। কিন্ডারগার্ডেন জাতীয় বিদ্যালয়গুলোই মূলত কমছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের করা ২০২১ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনাকালে যেসব খাতের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে, তার মধ্যে একটি হলো শিক্ষা। করোনা সংক্রমণ শুরুর দু’বছর পর এখন ওই চিত্র উঠে আসছে। তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে এক বছরের ব্যবধানে প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থী কমেছে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে আট লাখের বেশি শিশু শিক্ষার্থী কমেছে। অথচ প্রতি বছর শিক্ষার্থী বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। সারাদেশে প্রাথমিক স্তরে বিদ্যালয়ের সংখ্যাও কমেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার হার নতুন রিপোর্টে একটু বদলাচ্ছে। ২০২২ সালের সমীক্ষা রিপোর্ট আগামী ২৩ মে প্রকাশ করা হবে। সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা একটু বাড়ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী কওমি মাদরাসায় চলে গিয়েছিল, তারা আবার ফিরে আসছে।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাহী সভাপতি ঢাকা ফার্মগেটের ইসলামিয়া সমিতি বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহিদুর রহমান, ‘খুব বেশি ঝরে পড়েছিল, এমনটা বলা যাবে না। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছিল, সেগুলোর শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে গেছে। বিশেষ করে কওমি মাদরাসায় বেশি গেছে। সেখান থেকে তাদের আনা যাচ্ছে না। আবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনেকেই তাদের সন্তানকে পড়াতে চান না। তারা মনে করেন যে বাসার কাজের মেয়ে যে স্কুলে পড়ে, তার সন্তানও একই স্কুলে পড়বে এটা তো হয় না। ফলে তারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে নিয়ে যায়। তবে যারা স্কুলে আসা বন্ধ করেছিল, তাদের কিছু কিছু ফিরছে।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে পুরোপুরি ঝরে পড়েনি। যেসব শিক্ষার্থী অভাবে পড়েছে তাদের কওমি মাদরাসাগুলো থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে সেখানে নিয়ে গেছে। এখন সেখান থেকে কিছু কিছু ফিরে আসছে। তবে সবাই আসছে না। তবে গ্রামাঞ্চলে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তাদেরও ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সরকার কাজ করছে।’

সূত্র : ডয়চে ভেলে

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877