স্বদেশ ডেস্ক:
পুরনো ঢাকার তাঁতী বাজারে বহুদিনের পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করছেন ঢাকা স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক সংঘের কার্যকরী সদস্য বাবুল দাস। তিনি বলছেন, গত এক মাসে তাদের কাছে কাজের অর্ডার একদম আসেনি বললেই চলে। তার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, “এত ঘন ঘন স্বর্ণের দাম বাড়ছে যে অনেকেই ভাবতেছে একটু কমে আসুক দেখি। কমলে বানাবে। কিন্তু বরং দাম বেড়েই চলেছে।”
তিনি বলছেন, পাকা সোনার বদলে গিনি সোনার দাম বাড়ছে – তাই তারা অবাক হচ্ছেন। বিষয়টি তিনি তুলনা করলেন, “ঘি এর থেকে তেলের দাম বাড়ার মতো হল বিষয়টা। পাকা সোনার চেয়ে খাদ দেয়া স্বর্ণের দাম বাড়ছে। কিন্তু হওয়ার কথা উল্টোটা। গিনি সোনার দাম কম হওয়ার কথা।”
বাংলাদেশে গহনার জন্য সবচাইতে জনপ্রিয় ধাতু হচ্ছে স্বর্ণ। সব মিলিয়ে এই বছরের শুরু থেকে সাতবার স্বর্ণের দাম বাড়ল। জানুয়ারি মাসে যে স্বর্ণের দাম ভরি প্রতি ৪৮ হাজার ৯৮৮ টাকা ছিল, সোমবার থেকে ভরি প্রতি সেজন্যে আপনাকে প্রায় সাত হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হবে। আজ থেকে ভরি-প্রতি স্বর্ণের দাম পড়বে ৫৬ হাজার ৮৬২ টাকা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বা বাজুস রোববার রাতে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এই বছর জানুয়ারি মাসে দু’দফায় স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিল এই সমিতি। নতুন অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণার পর দাম বাড়ানো হয়েছে কয়েক দফা।
স্বর্ণের দাম আবারো কেন বাড়ানো হচ্ছে?
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বা বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার আগরওয়ালা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম বাড়ছে তাই তাদেরও দাম বাড়াতে হচ্ছে।
তিনি দাম বৃদ্ধির একটি ধারণা দিয়ে বলছেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে বছরের শুরু থেকে পর্যায় ক্রমে আউন্স প্রতি স্বর্ণের দাম বেড়েছে আড়াইশ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক একুশ হাজার টাকা। ভরি প্রতি আট হাজার টাকা। কিন্তু আমরা একবারে না বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে বাড়াচ্ছি।”
তিনি বলছেন, বাংলাদেশে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বর্ণ আমদানি শুরু না হলেও যারা লাগেজে করে স্বর্ণ আনেন, তারাও তো আন্তর্জাতিক বাজারের দরেই সেটি কিনে আনেন।
তিনি বলছেন, যারা রিসাইকেল করা স্বর্ণ কিনছেন তারাও ওই আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুসরণ করেন।
চীনের-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব?
মি. আগরওয়ালা দাবি করছেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে তার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণের বাজারে। অতএব বাংলাদেশের স্বর্ণের বাজারের তার প্রভাব পড়েছে। কিন্তু সেটি কিভাবে কাজ করে?
তিনি বলছেন, “চীনের নানা ধরনের পণ্যের উপর ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলো, তখন চীন ডলার ছেড়ে দিয়ে স্বর্ণের রিজার্ভ বাড়িয়ে দিল। ডলারের রেট ফল করে [দরপতন হয়]। যার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের ক্রাইসিস [সংকট] হয়ে দাম ঊর্ধ্বগতি হয়ে গেছে।”
তিনি আশংকা প্রকাশ করছেন স্বর্ণের দাম সামনে কমার কোন লক্ষণ তারা দেখছেন না। তিনি বলছেন, এর ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
স্বর্ণ ব্যবসায় সরকারী নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা
বাংলাদেশে স্বর্ণ ব্যবসার উপর সেই অর্থে সরকারের এখনো কোন নিয়ন্ত্রণ নেই বলে অভিযোগ আছে। দেশে কী পরিমাণে স্বর্ণ রয়েছে তার কোন সঠিক হিসেবও তাদের কাছে নেই। বাংলাদেশে সরকার সম্প্রতি একটি স্বর্ণ নীতিমালা করেছে। অপ্রদর্শিত স্বর্ণকে বৈধ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বর্ণের ডিলার নিয়োগ দিয়ে স্বর্ণ আমদানির কথাও বলা হচ্ছিল। সেসব বিষয়ে যদিও খুব একটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, “এর সাথে কিছু সম্পর্কে আমি দেখতে পাচ্ছি। স্বর্ণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারেতো আগেও বেড়েছে। কিন্তু এখন তারা দামের সামঞ্জস্য করতে হচ্ছে বলছে কেন?”
তিনি বলছেন, “সরকার এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার চেষ্টা করছে। এর সাথে নিশ্চয়ই কিছু আর্থিক বিষয় জড়িত। অবৈধ পথে আসলে অনেক টাকা ফাঁকি দেয়া যায়। এখন তারা সেই আর্থিক তারা সেই খরচ মিনিমাইজ করার চেষ্টা করছে বলে আমি মনে করি।” সূত্র : বিবিসি।