শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৭ অপরাহ্ন

বয়স চল্লিশের পরও ভালো থাকার পাসওয়ার্ড……!

বয়স চল্লিশের পরও ভালো থাকার পাসওয়ার্ড……!

স্বদেশ ডেস্ক: ‘চল্লিশে চালশে’ কথাটা কিন্তু এখন আর মোটেও খাটে না। বরং বলা ভালো লাইফ বিগিনস অ্যাট ফর্টি। মানছি বয়সের সঙ্গে শরীরে এবং মনে পরিবর্তন আসবেন। কিন্তু সেগুলো মেনে নেওয়াই তো ভালো থাকার পাসওয়ার্ড।
মাঝবয়সী, মধ্যবয়স্ক, না কি পরিণত? আমার তো শেষেরটাই পছন্দ। দেখুন বয়স তো স্বাভাবিক নিয়মেই বাড়বে। তবুও আমরা যে কেন ‘বয়স’ শব্দটাকে এত প্রাধান্য দিই বুঝতে পারি না। আর প্রত্যেক বয়সেরই তো একটা সৌন্দর্য আছে, একটা মাধুর্য আছে। সুতরাং চল্লিশে পা দিলেই গেল গেল রব তোলার সত্যিই কি কোনও প্রয়োজন আছে? বরং এখন তো আপনি অনেক বেশি পরিণত, আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি অনেক বেশি সমৃদ্ধ। আর সেই দীপ্তি তো আপনাকে আরও বেশি সুন্দর করে তুলছে। তো সেই বয়সকে লুকোনোর চেষ্টা করা কেন? বরং খোলা মনে তাকে স্বীকার করুন। মানছি বয়সের সঙ্গে আপনার শরীরও একটু একটু করে বদলাতে থাকবে। ২৫-এর তারুণ্য নাই বা থাকল, নাই বা থাকল ষোলো বছরের তরুণী চেহারাটা, কিন্তু চল্লিশের মাধুরী-ই বা কম কীসের! আর ভালো করে ভেবে দেখুন তো, চল্লিশ মানে কিন্তু অনেকটা রাস্তা আপনি পেরিয়ে এসেছেন। ছেলেমেয়ে হয়তো এখন অনেকটাই সাবালক, আপনি হয়তো আপনার কেরিয়ারের মধ্যগগনে, স্বামী-সংসার সবমিলিয়ে পরিপূর্ণ জীবন। তা হলে শুধু বয়সটা বেড়েছে বলে এত আক্ষেপ, এত অনুযোগ? কোন দুঃখে বলুন তো! আসল কথা হলো আপনার মনটাকে তরুণ রাখতে হবে। আর মেনে নিতে হবে যে বয়সের সঙ্গে বদলটা অনিবার্য। আগের চেয়ে হয়তো একটু বেশি ক্লান্ত বোধ করবেন, মুখে হয়তো একটু বলিরেখা দেখা দেবে কিংবা চুলের ফাঁকে একটা-দু’টো পাকা চুল উঁকি মারবে, কিন্তু তাতে কী? আর এমন তো নয় ৪০ বছরের জন্মদিনের কেক কাটার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো ম্যাজিকের মতো উপস্থিত হবে। তবে হ্যাঁ, এগুলো নিয়মাফিক পরিবর্তন এবং বাড়তে থাকা সময়ের সঙ্গে আস্তে আস্তে তাদের অস্তিত্ব জানান দেবে। কিন্তু এসব নিয়ে হা হুতাশ করা নেহাতই বোকামি। তার চেয়ে এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোর সম্বন্ধে জেনে নিন এবং মেনেও নিন, তা হলেই দেখবেন নিজেকে কোনওভাবেই আর ‘বুড়ি’ মনে হচ্ছে না।
ওজন অঙ্ক: জানি একটা সময় ছিল যখন মাত্র দু’সপ্তাহ কোল্ড ড্রিঙ্ক আর জাঙ্ক ফুড খাওয়া বন্ধ করে দিলেই পাঁচ কেজি ওজন কমে যেত। সেটা অবশ্য এখন আর অত সহজে হবে না। গবেষণায় দেখা গেছে ৪০-৫৫ বছরের মধ্যে মহিলাদের ওজন প্রায় ১৫ পাউন্ড পর্যন্ত বাড়তে পারে। আর এর মূল কারণ কমতে থাকা মেটাবলিক রেট ওবং মাসল লস। ৩০ বছর থেকেই আমদের শরীরে মাসল টিস্যু লস শুরু হয়ে যায়। ৪০ বছরের পরে রেস্টিং মেটাবলিজম অনেকটাই কমে যায়। ফল শরীর আগের তুলনায় অনেক কম ক্যালরি ক্ষয় করতে পারে। সুতরাং আপনি ২০ বছরেও যে ধরনের খাবার খেতেন, ৪০-এ-ও যদি সেইরকম ইটুং হ্যাবিটল বজায় রাখেন, তা হলে ওজন আপনার সঙ্গে মোটেও সহযোগিতা করবে না। বরং তাকে বশে আনতে বেজায় খাটতে হবে। তার চেয়ে খাওয়া-দাওয়ার অভ্যেস এবং নিজের লাইফস্টাইলকে একটু বদলে তো ফেলাই যায়। এক্সারসাইজ করুন, অ্যাক্টিভ থাকুন, বয়সের দোহাই দেবেন না প্লিজ। বেশি পরিমাণে অর্গ্যানিক প্রোটিন খান। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টসও খেতে পারেন। তা হলেই দেখবেন ওজন চট করে বাড়ছে না।

পিরিয়ডে বিপদ: শিরোনাম দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। মেনোপজের কথা বলছি না। মেনোপজ মোটামুটি ৫১ বছর বয়স থেকে শুরু হয় (এর ব্যতিক্রম থাকতেই পারে)। তবে চল্লিশ এবং তার পরে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। আর এর মেয়াদ ধরে নিন প্রায় ১০ বছর অর্থাৎ যত দিন না মেনোপজ আরম্ভ হচ্ছে। এই পর্যায়ে ডাক্তারি ভাষায় বলে পেরিমেনোপজ। আসলে শরীর তো একটা মেশিন। তাকেও নিজেকে নিরন্তর আপডেট করতে হয়। মেনোপজের জন্য নিজেকে আস্তে আস্তে এভাবেই তৈরি করে শরীর। রিপ্রডাক্টিভ হরমোন (ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন) যা আপনার মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলকে নিয়ন্ত্রণ করে এ সময় ফ্লাকচুয়েট করতে পারে। এদের ব্যালন্সে বদলে যেতে পারে। আর তার জন্য আপনাকে ভুগতে হতে পারে অনিয়মিত পরিয়ড, ইনসমনিয়া, মাথাব্যথা, হট ফ্লাশের মতো সমস্যায়। শরীরের কোথাও কোথাও অবাঞ্ছিত রোমও দেখা দিতে পারে। আবার যৌনমিলনে অতিরিক্ত ইচ্ছে বা অনিচ্ছা তৈরি হতে পারে। তবে সবার ক্ষেত্রে যে একই রকম উপসর্গ দেখা দেবে তা কিন্তু নয়। এর মধ্যে অনিয়মিত পিরিয়ডের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। হয়তো আগের চেয়ে তুলনায় বেশি রক্তপাত হবে বা তলপেটে বেশি ব্যথা অনুভব করবেন। আবার কোনও কোনও মাসেই হয়তো পিরিয়ড দেখলেন হলোই না। এর সঙ্গে মুড সুইং, অ্যাংজাইটি হওয়াটাও স্বাভাবিক। জানি পড়ে এতটুকু ভালো লাগছে না। কিন্তু এই বদলগুলো আপনাকে মানতে শিখতেই হবে। না হলে তো ভালো থাকাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
হাড়ে-মজ্জায়: মোটামুটি ৩৫ বছর পর্যন্ত বোন ডেনসিটি এক জায়গায় থিতু থাকে। আর তারপর প্রতি বছর ১% করে বোন ডেনসিটি কমতে থাকে। ৪০ বছর পৌঁছতে পৌঁছতে হয়তো তা আপনিও কিছুটা হলে বুঝতে পারবেন। তবে এই নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। ৬৫ বছর পর্যন্ত নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। বোন ডেনসিটি টেস্ট তখন করালেই হবে, যদি না আপনার ক্ষেত্রে অন্য কোনও রিস্ক ফ্যাক্টর যেমন হেরেডিটারি প্যাক্টর, ক্যালশিয়াম ডিপ্লিশন বা অন্য অসুখ থেকে থাকে। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় আপনি বোন লসের গতি কমাতেই পারেন। হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ওয়েট বিয়ারিং এক্সারসাইজ এবং স্ট্রেংথ ট্রেনিং করতে পারেন। এক্সারসাইজ করলে হাড় মজবুত হয়। ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেলেও উপকার পেতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন। মোটামুটি প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম আর ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খেলে উপকার হবে। ম্যাদনেশিয়ামও শরীরে ক্যালশিয়াম অ্যাবসর্ব করতে সাহায্য করে। সুতরাং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ দই, বাঁধাকপি, বিন, মটরশুঁটি, কলা, অ্যাভোকাডো জাতীয় খাবার আপনার ডায়েট তালিকায় অবশ্যই রাখুন। হাড়ের যতœ আগে থেকে নিলে অস্টিওপোরসিসের মতো সমস্যা ঠিকই ঠেকিয়ে রাকতে পারেবেন।
গ্ল্যামার কোশেন্ট: চোখের তলায় হালকা লাফ লাইনস দেখা দিচ্ছে বা চুলেও খানিকটা পাক ধরেছে। এতে কিন্তু আপনার সৌন্দর্য একটুও কমেনি। মানুষ কিন্তু তার আত্মবিশ্বাসের জোরে সুন্দর। ফর্সা রঙ, ঢেউ খেলানো চুল কিংবা নির্মেদ চেহারা সৌন্দর্যের মাপকিঠি হতেই পারে। কিন্তু আত্মবিশ্বাস না থাকলে এ সবকিছুই কিন্তু মøান হয়ে যেতে পারে। আর জানলে অবাক হবেন, চল্লিশের কোঠায় মহিলাদের আত্মবিশ্বাস কিন্তু তুঙ্গে থাকে। আর একই কারণে অন্যের উপর ভরসাও বিশেষ করতে হয় না। নিজেদের সমালোচনা করাও এই বয়সে এসে অনেকটা কমে যায় এবং কয়েক বছর আগেও হয়তো যে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতেন, তা কিন্তু অনেকটাই কমে যায়। আর যেহেতু অভিজ্ঞতা আপনাকে আরও ঋদ্ধ করেছে ফলে তার ছাপ কিন্তু আপনার ব্যক্তিত্বেও প্রভাব বিস্তার করে। আপনি এখন জানেন আপনার জীবনে ঠিক কী এবং কারা গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনি সেই মতোই কাজ করেন। নিজেকে নিজের মতো করে ভালোবাসতে শেখাও কিন্তু এই বয়সে। কারও সঙ্গে কোনও প্রতিযোগিতা নেই, সমস্ত মনোমালিন্য আপনি এখন সহজে ভুলতে পারেন। আর বয়সের সঙ্গে সহনশীলতা, ক্ষমপরায়ণতা, ঔদার্যও তো বাড়ে। আর এগুলো তো আপনাকে আরও সুন্দরই করে তোলে তাই না? এই সৌন্দর্যটা নিশ্চয় ২২ বা ৩২-এ সম্ভব নয়!
নিদ্রায় ইন্দ্রিয়: ঘাবড়াবেন না। রাতারাতি চোখ চশমা বা কানে হিয়ারিং এড পরতে হবে না। কিন্তু ৪০-এর পর অনেকেরই ভিশন একটু একটু করে বদলাতে শুরু করে। কাছের জিনিস পড়তে বা দেখতে একটু অসুবিধে হতে পারে যেমন সূচে সুতো ভরতে বা সূক্ষ্ম কোনও কাজ করতে অল্পবিস্তর সমস্যা হতে পারে। পড়ার জন্যও একটা বেশি আলোর প্রয়োজন হতে পারে। কারও ক্ষেত্রে আবার রাতের অন্ধকারে বা খুব উজ্জ্বল আলোয় গাড়ি চালানোটা একটু মুশকিল হয়ে পড়ে। রঙও গুলিয়ে ফেলেন অনেকেই। তবে এর কোনওটাই কিন্তু বিশাল সমস্যা নয়। আপনার কাজ নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো। যেহেতু একটা বয়সের পড়ে গ্লকোমা, ছানি, ম্যাকুলার ডিজেনেরেশনের মতো সমস্যার সম্বাবনা বেড়ে যায়, তাই তোখ পরীক্ষা করা একান্ত দরুরি। অপটিক নার্ভ আপ চোখের মণির অবস্থাও মাঝে মাঝেই যাচাই করে নেওয়া ভালো। প্রসঙ্গত, বলি চোখ ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়ার কোনও বিকল্প নেই। আর রোদে বেরুলে অবশ্যেই ইউভি প্রোটেকশন সানগ্লাস পড়ুন। চোখের যতœ নিলে তবেই না তা ভালো থাকবে।
এই প্রসঙ্গে স্বাদকুড়ির কথাও বলতে হয়। জানলে অবাক হবেন যে আমরা প্রায় ৯০০০ টেস্ট বাডস নিয়ে জন্মাই। এবার বয়স যত বাড়তে থাকে তত স্বাদকুঁড়ির সংখ্যাও কমতে থাকে। এর অর্থ মূলত যে স্বাদগুলোর সঙ্গে আপনারা পরিচিত বা অভ্যস্ত (ঝাল, তেতো, মিষ্টি, নোনতা) সেগুলোর প্রতি সেন্সিটিভিটিও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের মধ্যেই এই বদলটা তাড়াতাড়ি ঘটে।
মাঝের সঙ্কট: আপনি এখন জীবনের মিডপয়েন্টে। চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মাঝামাঝি পৌঁছেই পুরো ফ্ল্যাশব্যাকে মোডে চলে গেছেন আর ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, ‘কী ছিলাম আর কী হলাম।’ খালি ভাবছেন এবার তো বুড়িয়ে গেলাম, এখন আর কিছুই করার নেই। আবার আর একদল আছেন যারা আবার হঠাৎ করেই নিজেদের খুকি সাজানোর চেষ্টা করেন। ছোটখাটো পোশাক পরতে শুরু করেন, হঠাৎ করেই জিম যেতে শুরু করেন, মেক-আপের প্রলেপে নিজেকে ঢেকে রাখেন। এই হেন অবস্থাকেই বলে ‘মিডলাইফ ক্রাইসিস’। অল্পবয়সীরা শুনলে হাসাহাসি করে আর বয়স্করা ভাবেন যত্ত সব ন্যাকামো, ম্যাচিওরিটির অভাব। আর ক্রাইসিসের দোহাই দিয়ে আবার অনেকেই কেমন যেন নেতিয়ে পড়েন আর বলেন এ তো হওয়ারই ছিল। যত সব ভুলভাল কথা কিন্তু। এমনকী সাম্প্রতিক রিসার্চও দেখাচ্ছে মিডলাইফ ক্রাইসিস আদতে ভাঁওতা ছাড়া কিছুই না। যারা ১৮-২০ বছরেই খ্যাড়খ্যাড়ে, গোমড়া ছিলেন, তারা ৩০-এও অসুখী, ৪০-এও। আর যাদের মনে বরাবরই গিটারের টিউন, তারাও মাঝের ভাঁজে পড়েও একেবারে সুপারকুল। কথাটা হলো ক্রাইসিস হতেই পারে, কিন্তু ৪০ পেরোলেই টনটনে মন-মেজাজ একেবারে ভাঙা সেতার হয়ে যাবে, তাই কি হয় নাকি। সে তিরিশেও হতে পারে আবার ৫৫-তেও। আসলে সঙ্কটের দোহাই দিতে আমরা অনেকেই বড় ভালোবাসি। নিজের অবস্থাকে জাস্টিফাই করার এ কিন্তু বড় হাতিয়ার। নিজেকে অসহায় প্রতিপন্ন করার মধ্যে কিন্তু আলাদা আনন্দ আছে। এ কিন্তু মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। না হলে ভাবুন না ৩৯ বছরে দিব্যি কর্মঠ, হাসিখুশি আপনি কোনও কারণ ছাড়াই (শরীরিক বা মানসিক অসুস্থ বা পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি) হঠাৎ ৪১-এ এসে কেনই বা বেসুরো আলাপ গাইবেন? সুতরাং এসব ভুলে যান। মাঝবয়সে এসে পৌঁছেছেন বলেই জীবন শেষ হয়ে গেল এ রকম ভাবার বিন্দুমাত্র কারণ নেই। মনে খুলে স্বাগত জানান আপনার জীবনের এই নতুন অধ্যায়কে তবেই না বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারবেন আর জোর গলায় বলতে পারবেন ‘এই তো সবে শুরু!’

এজিং এবং খাওয়া-দাওয়া: জাঙ্ক ফুডের প্রসঙ্গ উঠলেই আমরা ক্যালরির হিসেব কষতে বলি, অথচ আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, এই ধরনের খাবার আর্লি এজিংয়েরও অন্যতম কারণ…
আধুনিক জীবনযাত্রায় বাড়তি ওজনের সমস্যায় নাজেহাল আমরা অনেকেই। ওজন ক্রমশ বাড়তে থাকলে শুধু যে দেখতে খারাপ লাগে তাই নয়, বাড়তি ওজনের সঙ্গে বয়স বাড়ার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে ওজন বাড়ার অন্যতম প্রধান কালপ্রিট যে জাঙ্ক ফুড তা জানতে আমাদের বাকি নেই! ওজন, বয়স, জাঙ্ক ফুড সব কেমন গুলিয়ে গেল তাই না? সহজ করে বলি। প্রথমেই জেনে রাখুন জাঙ্ক ফুড মানে ক্ষতিকর ক্যালরি তো বটেই, তা ছাড়া এই ধরনের খাবার সময়ের আগেই চেহারায় বয়সের ছাপ ফেলে। আগে যেগুলো বয়সজনিত রোগ হিসেবেই পরিচিত ছিল, এখন তিরিশ পেরোলেই সেই সব রোগ কাবু হয়ে পড়ছেন অনেকেই। বাড়তি ওজন আর জাঙ্ক ফুড আর বয়সের হিসাবটা বুঝেছেন আশা করি। কিন্তু এটাই সব নয়। সুস্থ থাকা এবং চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখার জন্য খাবার নির্বাচন যতটা জরুরি, খাবার খাওয়ার অভ্যেসও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। একটা খুব সহজ উদাহরণ দিই। আপনি হয়তো টিভি দেখতে দেখতে ডিনার করেন। কখনও ভেবেছেন এর ফলে আপনার ওজন বাড়তে পারে? খুব অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। টিভি দেখতে দেখতে খাওয়ার সময় মন থাকে টিভির দিকে। ফলে অজান্তেই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাওয়া হয়ে যায়। অনেকসয়মই পেট ভরে যাওয়ার পরও আমারা খেতেই থাকি। একে বলে ‘মাইন্ডলেস ক্যালরি কনজাম্পশন।’ এ ছাড়া সিনেমা কিংবা খেলা দেখতে দেখতে চিপস, কোল্ডডিঙ্ক, পপকর্ন খাওয়া তো আছেই। দৈনন্দিন জীবনে আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ এ রকম কিছু বিশেষ অভ্যাসের কারণে ওজন বাড়তে থাকে, দোসর হিসেবে আসে অসময়ে বলিরেখা, শুষ্ক ত্বক, ডার্ক সার্কল, পাকা চুলের মতো সমস্যা। দেয় আর্লি এজিং। অথচ খাবার নির্বাচন এবং খাওয়া-দাওয়ার কিছু অভ্যাস বদলে ফেললেই কিন্তু এই সমস্যাকে সহজেই দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব। তাই বলে ভাববেন না কঠোর ডায়েটের নিয়ম জারি করছি কিংবা বলছি কখনওই পছন্দের খাবার খাবেন না। খান, কিন্তু কখন খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন, কীভাবে খাচ্ছেন এগুলো যদি একটু মাথায় রাখেন তাহলে কিন্তু সঠিক ওজন বজায় রাখা এবং তারুণ্য ধরে রাখা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
ইমোশনাল ইটিং: কাজের জায়গায় বা বাড়িতে অতিরিক্ত মানসিক চাপ, রাগ, ডিপ্রেশন বা স্ট্রেস থাকলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। পোশাকি নাম ইমোশনাল ইটিং বা স্ট্রেস ইটিং। অতিরিক্ত স্ট্রেস থেকে কর্টিসল নামে এক ধরনের হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এই হরমোন উচ্চরক্তচাপ, দুর্বল হজমশক্তি এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেকটাই দায়ী। এর আর একটি প্রধান সমস্যা, স্ট্রেস হরমোন থেকে মিষ্টি, নোনতা এবং উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ার ক্রেভিং দেখা দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলি ফাস্ট ফুড। ফলে ওজন তো বাড়েই এবং অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলিও জাঁকিয়ে বসে শরীরে। অফিসে কাজের চাপ থাকবেই। তাই চেষ্টা করুন টিফিনের সময় ব্রেক নিতে। কাজ করতে করতে বা অফিসের ডেস্কে বসে টিফিন খাবেন না। চেষ্টা করুন ক্যানটিন বা অন্য কোথাও বসে খেতে। খাওয়ার সময়ে কাজের কথা চিন্তা না করে খাবারের দিকে মন দিন। খুব তাড়াতাড়ি খাবেন না। খাওয়াটা উপভোগ করুন। বন্ধু বা কলিগদের সঙ্গে বসে হালকা আড্ডা দিতে দিতে এক সঙ্গে খেতে পারেন। এতে খাওয়ার সময়টা ভালো কাটবে। মন হালকা হবে।
ফাস্ট ফুডের প্রতি ঝোঁক: অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড চেহারায় খুব তাড়াতাড়ি বয়সের ছাপ ফেলে। আসলে ফাস্ট ফুডে বেশি মাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট থাকে। এই ট্রান্স ফ্যাট শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। ডিপ ফ্রায়েড খাবারে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ থাকে সবচেয়ে বেশি। এই ধরনের খাবার বেশি খেলে শরীরে ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর ক্ষতি হয়, ফ্রি র‌্যাডিকেলের আধিপত্য বাড়ে যা কি না দ্রুত চেহারায় বয়সের ছাপ ফেলে। তার মানে কি ফাস্ট ফুডে ইতি! তা নয়। খান, কিন্তু বুঝেশুনে। বাইরে খেতে গেল সবসময় ভাজাভুজি না খেয়ে কখনও স্যান্ডউইচ, স্যালাড বা হেলদি র‌্যাপ খেতে পারেন। তাহলে কিন্তু সমস্যা এতটা প্রকট হয়ে উঠবে না।
মিষ্টি খাবারে আসক্তি: মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার যে ওজন বাড়ায় তা আমরা সবাই জানি। তা ছাড়া অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার ত্বকেরও নানারকম ক্ষতি করে। বিশেষ করে রিফাইন্ড শুগার থেকে দেখা দেয় গ্লাইকোসাইলেশন (মষুপড়ংুষধঃরড়হ) যার ফলে ত্বকের স্বাভাবিক মেরামত প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন ইলাস্টিন এবং কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। তাই চিনি যতটা সম্ভব কম খান। অনেকের অভ্যাস থাকে রাতে খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়ার। এটা বন্ধ করতে হবে। ব্রাউন শুগার তুলনায় কম ক্ষতিকারক। তা ছাড়া রেসিপি অনুযায়ী মধু, ফলের রস ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন।
কার্বোহাইড্রেটের আধিক্য: লক্ষ্য করে দেখবেন আমাদের খাদ্যতালিকায় কার্বের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আমাদের প্রধান খাবার ভাত, রুটি। জলখাবার মানেও রুটি, লুচি, পরোটা। তা ছাড়া তরকারি মানেই তাতে আলুর উপস্থিতি মাস্ট। ফলে আমাদের লারাদিনের ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়। কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত হলেই ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়ে শরীরে জমে থাকে। তা ছাড়া শর্করা খাবার পাকস্থলী থেকে তাড়াতাড়ি লিভারে পৌঁছয় এবং লিভার ওই শর্করাকে ফ্যাটে রূপান্তরিত করে, এতে আমাদের খিদে পাওয়ার প্রবণতা বাড়ে এবং আমরা বাড়ে বাড়ে খাই। ফলে আরও দ্রুত ওজন বাড়তে থাকে। তাই সাদা ভাত মেপে খান। চিনি, ময়দা এড়িয়ে চলুন। হাতের কাছে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স যেমন ফল, ভেজিটেবল স্যালাড, হোল হুইটের স্যান্ডউইচ, মাল্টিগ্রেন ব্রেড ইত্যাদি রাখুন। এতে খিতে পেলে জাঙ্ক খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমবে।

ব্রেকফাস্ট না করা: কথায় বলে ‘ইট ব্রেকফাস্ট লাইক আ কিং অর্থাৎ কিনা ব্রেকফাস্ট করুন পুষ্টিকর খাবার দিয়ে এবং পেট ভরে। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় অফিসের তাড়ায় কিংবা সন্তানকে স্কুলে পৌঁছতে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করাই হয়ে ওঠে না। কোনও রকমে নাকে মুখে গুজে ছুটতে হয় কাজে। ঠিকমতো ব্রেকফাস্ট না করলে কিন্তু ওজন বৃদ্ধির পথটা আরও সুগম হয়ে ওঠে। সঠিক সময়ে ব্রেকফাস্ট না করলে মেটাবলিজম প্রক্রিয়া পূর্ণ উদ্যমে কাজ করতে পারে না। ফলে ক্যালরি বার্নও হয় ধীর গতিতে। তা ছাড়া ব্রেকফাস্ট না করলে লাঞ্চে আরও বেশি খিদে পেয়ে যায়। ফলে অজান্তেই অনেক বেশি খাওয়া হয়ে যা। তাই সুস্থ থাকতে ঠিক সময়ে ব্রেকফাস্ট করুন। একান্তই হাতে সময় না খুব সহজে খাওয়া যায় যেমন, দুধ কর্নফ্লেক্স, ওটস ইত্যাদি খেতে পারেন। কিন্তু পেট খালি রাখা চলবে না।
লিক্যুইড ডায়েট: যারা ডায়েট করেন তারা অনেকসময় অনেক বেশি লিক্যুইড ডায়েট ফলো করেন। এতে যে ওজন কমবে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। কোনও কিছুই অতিরিক্ত খেলে তা পরবর্তীকালে ওজন বাড়িয়ে তোলে। এমনকী, ফলমূল বা শাকসবজির ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি। ওজন কমানোর জন্য পোর্শন কনট্রোল সবচেয়ে জরুরি। অর্থাৎ ‘কি খাচ্ছেন-এর চেয়ে কতটা খাচ্ছে সেদিকে নজর দিন। তাই ফল বা সবজির রস না খেয়ে গোটা ফল এবং সবজি খান। এতে খাবারের পরিমাণ নির্দিষ্ট থাকবে।
তাড়াতাড়ি খাওয়া: অনেকেই খেতে বসে খুব তাড়াহুড়ো করেন। খাওয়ার পেছনে সময় নষ্ট করতে চান না। এতে দুটো সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমত তাড়াতাড়ি খেলে আমরা বুঝতে পারি কতটা খেলাম। ফলে প্রযোজনের অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। অন্য দিকে তাড়াতাড়ি খাওয়ার ফলে ঠিকমতো হজমও হয় না। তাই একটু সময় নিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন। অল্প অল্প করে খাবার নিন। একবার খাওয়া হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার নেওয়ার আগে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। আমাদের পেট ভর্তি হয়েছে কি না তা বুঝতে মস্তিষ্কের এই সময়টুকু লাগে। এতে ওভার ইটিংয়ের সমস্যা কমবে, হজমও ভালো হবে।
বড় প্লেটে খাওয়া: খাওয়ার পরিমাণের ক্ষেত্রে প্লেটের আকারও ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাধারণত প্লেট ভরে খাবার নিই। তাই খাবার যদি ছোট প্লেটে পরিবেশন করি তহলে তা বেশ ভর্তি দেখাবে। অন্য দিকে বড় প্লেটে ওই একই পরিমাণ খাবার নিলেও মনে হবে কম খাবার নেওয়া হয়েছে। তাই ছোট প্লেটে খাওয়ার অভ্যেস করুন। ৮-১০ ইঞ্চি ব্যসের প্লেট লাঞ্চ বা ডিনারের জন্য উপযুক্ত। ওভার ইটিংয়ের সমস্যা কমাতে এটা দারুণ কার্যকরী।
দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা: আমাদের অনেকেরই অভ্যেস সারা দিনে তিনবার খাওয়ার। অর্থাৎ তিনটে বড় মিল এবং এক একটা মিলের মাঝে অনেকটা সময়ের ব্যবধান। ফলে আমাদের প্রতিবার খাওয়ার আগে আমাদের খুবকিদে পেয়ে যায় এবং আমরা অনেক বেশি খেয়ে ফেলি। একটা কথা আছে ‘স্কোয়ার মিলস মেক ইউ রাউন্ড’। তাই সারা দিনে ২-৩ টে বড় মিলের চেয়ে সারা দিন ধরে অল্প অল্প করে খান। এতে শরীর অনেক বেশি ক্যালরি খরচ করে এবং বারবার খিদে পাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সকালে ভারী ব্রেকফাস্ট করুন। ১-২ ঘণ্টা বাদে একটা ফল খান। দুপুরের লাঞ্চ করুন। বিকেলে ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে হালকা হেলদি স্ন্যাক্স যেমন, স্যুপ, ব্রাউন ব্রেডের স্যান্ডউইচ, মুড়ি, ড্রাই ফ্রুটস, বাদাম ইত্যাদি খেতে পারেন। রাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিনার করে নিন। ৯টার মধ্যে ডিনার করতে পারলে খুব ভালো হয়। সেটা যদি সম্ভব নাও হয় তাহলে চেষ্টা করুন বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিতে। এতে হজমও ভালো হবে।
এক্সারসাইজের পর কী খাবেন: অনেকেই ভাবেন, এক্সারসাইজ যখন করছেনই, তখন খাওয়া-দাওয়ায় আর বাধানিষেধ কেন! তবে সঠিক ওয়র্কআউটের সঙ্গে সঠিক ডায়েট প্ল্যান না গড়ে তুলতে পারলে কাক্সিক্ষত ফল মোটেও পাবেন না। ফিট থাকার জন্য ওয়র্কআউট করেন নিয়মিত? তবে খেয়াল রাখতে হবে এক্সারসাইজের পরে সঠিক খাওয়া-দাওয়ার দিকেও। জানাচ্ছেন স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ চিন্ময় রায়। লিখছেন মধুরিমা সিংহ রায়। ছিপছিপে, তরতাজা থাকতে রোজ জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাচ্ছেন! বা নিয়ম করে সকালবেলা উঠে খোলা ময়দানে দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু কাক্সিক্ষত ফল কিছুতেই যেন আর পাচ্ছেন না! আসলে, জিমে কসরত করার পরেই হয়তো খেয়ে ফেললেন এক স্কুপ চকোলেট আইসক্রিম বা এক প্লেট বিরিয়ানি। অনেকেই ভাবেন, এক্সারসাইজ যখন করছেনই, তখন খাওয়া-দাওয়ায় আর বাধানিষেধ কেন! তবে সঠিক ওয়র্কআউটের সঙ্গে সঠিক ডায়েট প্ল্যান না গড়ে তুলতে পারলে কাক্সিক্ষত ফল মোটেও পাবেন না। তাই, এক্সারসাইজের কখন কী খাবেন আর কতটা খাবেন, সে বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
সকালবেলায় শরীরচর্চা করলে: আর সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই যারা শরীরচর্চা করতে পছন্দ করেন, তাদের খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণটাও কিছুটা বেশি হবে। ব্রেকফাস্ট করবেন পেটপুরে। আমিষাশী মহিলাদের ক্ষেত্রে দু’টো ডিমের সাদা অংশ, দু’টো ব্রাউন ব্রেডের স্যান্ডউইচ, একটা কলা বা একটা আপেল খেতে পারেন। ফলের বদলে দালিয়াও খেতে পারেন। সিদ্ধ বিন, গাজর, টোম্যাটো আর ক্যাপসিকাম, আলু মেখে খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে স্যান্ডউইচ খাবেন না। সাধারণত তিনটে আইটেম খেলেই চলে। আজকাল অনেকেই ওয়েট ট্রেনিং দিয়ে কার্ডিও এক্সারসাইজ করেন। তবে কার্ডিও করলেও আপনার মূল লক্ষ্য হবে শরীরে মাসল রিটেন করা। এর জন্য প্রয়োজন প্রোটিন। আর এনার্জি ধরে রাখতে গেলে কার্বোহাইড্রেট লাগবে। শরীরে কিছু এসেনশিয়াল ফ্যাটও লাগে। সেক্ষেত্রে উপরের খাবারগুলোর সঙ্গে কয়েকটা আমন্ড খান। কাজুবাদাম বা ওয়ালনাটও খেতে পারেন। কড লিভার অয়েল সাপ্লিমেন্টে ওমেগা সিক্স থাকে। এগুলো সবই গুড ফ্যাটের উৎস। মোটের উপর যাই খান না কেন, তাতে প্রোটিন থাকাটা জরুরি। সেই প্রোটিন ডিম, দালিয়া, স্প্রাউটস বা মুগডাল থেকে আসতে পারে। চিকেন বা মাছ খাওয়া যেতেই পারে। তবে ব্যস্ত মানুষদের পক্ষে সকালে ব্রেকফাস্টে চিকেন স্যুপ তৈরি করাটা মুশকিল। কেউ যদি তৈরি করে নিতে পারেন তাহলে খুবই ভালো। চিকেন বা মাছ অ্যানিমাল প্রোটিনের ভালো উৎস। নাহলে লাঞ্চে তো চিকেন বা মাছ খেতেই পারেন। দুপুরে লাঞ্চে প্রোটিন খেলে ও বিকেলে এক্সারসাইজের পরে প্রোটিন খেলে রাতে ডিনারে প্রোটিন খাবেন না। আর যদি সকালে এক্সারসাইজ করেন তাহলে ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চে প্রোটিন খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ডিনারে প্রোটিন অতটা প্রয়োজনীয় নয়। রাতে শরীরের কলকবজা বিশ্রাম নেয়। ফলে রাতের খাবার একেবারে হালকা খাওয়াই ভালো। শরীরের মেটাবলিজম রেট এসময়ে কম থাকে। আর রাতে শরীরের এনার্জির প্রয়োজনও সেরকম থাকে না। ব্রেকফাস্ট পেটপুরে খাওয়ার কারণ একটাই! সারা দিনের প্রয়োজনীয় এনার্জি সঞ্চয় করে নেওয়া।
সন্ধ্যাবেলায় ওয়র্কআউট করলে: যেকোনো ওয়র্কআউটের পরেই শরীরে প্রোটিনের চাহিদা বাড়ে। পুরুষদের শরীরে মাংসপেশি বেশি থাকায় ওদের প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তাও মহিলাদের তুলনায় বেশি। মহিলারা সাধারণত টোনড লুক চাইলেও এক্সারসাইজের পরে প্রোটিনের প্রয়োজন তাদেরও হয়। তবে এক্সারসাইজের পরে শুধু নয়, এক্সারসাইজের আগে ও এক্সারসাইজ করাকালীনও শরীরে এনার্জির প্রয়োজন। তাই এ সময়েও কিছু খেতে হবে। এক্সারসাইজ করার সময়ে কার্বোহাইড্রেট ইনটেক হলে এনার্জি পাবেন বেশি। কলা বা অন্য কোনও ফল, নিউট্রি বার খেতে পারেন। এই খাবারগুলো এনার্জির মাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এক্সারসাইজ শেষ হওয়ার অন্তত ১৫ মিনিট পরে যে খাবার খাবেন তাতে প্রোটিন আর কার্বোহাইড্রেটের ব্যালেন্স যেন থাকে। যারা আমিষ খান, তারা ওয়র্কআউটের পরে একটা ডিমের সাদা অংশ অথবা স্টিমড সসেজ, ছোলা ভেজানো, অল্প দালিয়া বা ওটস খেতে পারেন। দালিয়া বা ওটসে ফাইবার থাকে। যারা এ দু’টোর কোনওটাই খান না, তারা একটা ফল খেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ফাইবার ইনটেক হবে না। যারা নিরামিষ খান, তারা ওয়র্কআউট করার পরে স্প্রাউটস খাবেন। দুধ, সিদ্ধ কর্ন খেতে পারেন। তবে মহিলাদের ওজন ধরে রাখার জন্য দু’টোর বেশি আইটেম এক সঙ্গে না খাওয়াই ভালো। নাহলে শরীরে প্রয়োজনের বেশি ক্যালরি ঢুকে যাবে। এটা গেল সন্ধ্যাবেলা ওয়র্কআউট করলে তার অনুরূপ ডায়েট চার্ট।
কতটা খাবেন: এক্সারসাইজের পর কতটা খাবেন, তা নির্ভর করে বডি ওয়েটের উপর। যারা রোগা (৫৫ কেজির আশপাশে ওজন যাদের) তারা একটু কম খাবেন। আবার যাদের ওজন ধরুন, ৬০-৬৫ কেজি তাদের শরীরে মাংসপেশি ধরে রাখতে গেলে (মাসল সাসটেনেন্স) একটু বেশি খেতে হবে। প্রথমজন যদি একটা ডিমের সাদা অংশ খান, তাহলে দ্বিতীয়জন দু’টো খাবেন। মাংসপেশি ধরে রাখতে গেলে বেশি প্রোটিনের প্রয়োজন। আবার এক্সারসাইজের ইনটেনসিটির উপরেও খাওয়াদাওয়ার পরিমাণ কিছুটা নির্ভর করে। যিনি শুধু যোগাসন করেন, তার অতটা বেশি ক্যালরি বার্ন হয় না। যারা হাই ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ করেন তারা যদি আধবাটি দালিয়া খান, তাহলে যিনি যোগাসন করেন তিনি এক-চতুর্থাংশ দালিয়া খাবেন। দু’টো স্যান্ডউইচের বদলে একটা স্যান্ডউইচ খাবেন। খাবার একই থাকবে, তবে খাবারের পরিমাণ তারতম্য হবে।
জল খান বেশি করে: ঘাম ঝরালে ডিহাইড্রেটেড হবেন দ্রুত। স্কিনের টেক্সচার খারাপ হয়ে যায়। তাই, দু-তিন লিটার জল খেতে হবে এক্সারসাইজের পরে। বিশেষত আউটডোর ওয়র্কআউটের ক্ষেত্রে, শুরু করার আগে জল খেতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে। আবার এক্সারসাইজের সময়েও কিছুটা জল খাবেন। একবারে বেশি জল খেলে শরীরের ভেতরে ব্লোটেড হয়ে যাবে। এক্সারসাইজ শুরুর আগে থেকে এক্সারসাইজ শেষ হওয়ার পরে অন্তত ৭৫০ মিলিলিটার জল খাবেন। যারা আউটডোরে কসরত করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ বেড়ে হবে এক থেকে দেড় লিটার। আর এই গরমে যা ঘাম হবে, তাতে তো অন্তত তিন লিটার জল খাবেন। এ.সি-তে ওয়র্কআউট করলে অতটা ঘাম না হওয়ায় জলের প্রয়োজনও কম থাকে।
বয়স্কদের জন্য: যত বয়স বাড়ে তত মাংসপেশির ক্ষয় (মাসল ওয়েস্টিং) হয়। তবে বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে পুরুষদের মাসল ওয়েস্টিং হয় দ্রুত। তাই, বয়স বাড়লে প্রোটিন ইনটেকের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই প্রয়োজনীয়তা আরও কিছুটা বেশি। একটু বুঝিয়ে বলি, যদি একজন বয়স্ক মহিলা (৪০-এর পরে) কার্ডিও ট্রেনিং করেন, তাহলে তার দু’টোর জায়গায় তিনটে ডিম খাওয়ার প্রয়োজন নেই! দু’টো খেলেই চলবে। পুরুষদের ক্ষেত্রে কিন্তু বেশি খেতে হবে প্রোটিন। তবে মোটামুটি এক্সারসাইজের পরে যা খাবেন তার ৬০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ৩০ শতাংশ প্রোটিন আর ১০ শতাংশ ফ্যাট রাখতে হবে। অর্থাৎ ব্যালেন্সড ডায়েট প্রয়োজন। বয়স বাড়লে প্রোটিনের ইনটেক পাঁচ শতাংশ মতো বাড়বে।
এনার্জি ড্রিংক আর প্রোটিন শেক: এক্সারসাইজ করতে করতে এনার্জির প্রয়োজন হলে এনার্জি ড্রিংক নিতে পারেন। এটি কার্বোহাইড্রেটের উৎস। এ ছাড়া ভিটামিন, মিনারেল থাকে। প্রোটিন শেক মূলত মাংসপেশি ধরে রাখার জন্য। তবে যারা চিকেন, দুধ, ডিম খাচ্ছেন তারা এমনিতেই প্রোটিন পাচ্ছেন খাবারের থেকে। এরপরেও যদি তারা প্রোটিন শেক খান, তাহলে অতিরিক্ত প্রোটিন ফ্যাটে পরিণত হবে। বিশেষত আমিষাশী মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রোটিন শেকের সেভাবে কোনও প্রয়োজনই নেই। যারা নিরামিষ খান, তারা এক স্কুপ করে প্রোটিন শেক খেতে পারেন। যে কোনও অতিরিক্ত খাবার শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে ফ্যাটে পরিণত হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877