শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৬ অপরাহ্ন

আষাঢ় এলেও হারিয়ে যাচ্ছে বর্ষার স্মারক কদম

আষাঢ় এলেও হারিয়ে যাচ্ছে বর্ষার স্মারক কদম

স্বদেশ ডেস্ক:

আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ, বর্ষারও। কিন্তু প্রকৃতি থেকে যেন হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা বর্ষার স্মারক কদম ফুল। কদমের হৃদয় রাঙিয়ে নেয়ার সুযোগ এখন শহুরে লোকের কমই আছে। শুধু শহর নয়, গ্রাম থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে কদম। ভোলার লালমোহনে এখন আর চোখে পড়ে না চোখ জুড়ানো ঘন সবুজ পাতার মধ্যে সাদা-হলুদ মঞ্জুরি ফুলের চিরচেনা কদম গাছ।

এক সময় সব জায়গায় চোখে পড়ত কদম গাছ। বর্ষার আগমনের সাথে সাথে চোখে পড়ত সেই কদম ডালে ফোটা থোকা থোকা ফুল। বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আদিকাল থেকে কদম আমাদের প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে আসছে। শুধু সৌন্দর্য্য নয়, ভেষজ গুণের পাশাপাশি কদমের রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্বও।

বীজ থেকে চারা হয়। চারা গজানোর ১০-১২ বছরের মধ্যে ফুল ফোটে। আষাঢ় মাসে গাছে ফুল আসে। ফুলগুচ্ছ আকারে গোলাকার সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। ফুলে সৌরভ না থাকলেও এর সাদা-হলুদ রঙ নজর কেড়ে নেয়। কদম গাছ অনেক লম্বা ও ছয়-সাত ফুটেরও বেশি চওড়া হয়ে থাকে। বন্যা ও খরা সহিষ্ণু গাছ শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁচে থাকতে পারে।

কদমের সাদা-হলুদ, পাতার সবুজ কোটি ডাল আন্দোলিত করে প্রকৃতিতে আসত বর্ষাকাল। কদম ছাড়া বর্ষা যেন বেমানান। প্রকৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যেগে অন্য গাছের পাশাপাশি কদম গাছ রোপণ করা প্রয়োজন। হলুদ, শুভ্রতার সংমিশ্রণে গোলাকৃতির এই ফুল এখন কদম গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে। কদম গাছের শাখে পাতার আড়ালে ফুটে থাকা অজস্র কদম ফুলের সুগন্ধ লোকালয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। আর তাই তো কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত।

কদম ফুলের আরেকটি নাম হচ্ছে নীপ।

জানা যায়, কদম ফুলের সৌন্দর্য্যরে মতোই আরো কিছু চমৎকার নাম রয়েছে। বৃত্তপুষ্প, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভী, মেঘাগমপ্রিয়, মঞ্জুকেশিনী, কর্ণপূরক, পুলকি এসবও কদম ফুলের নাম।

আরো জানা যায়, কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। কদম্ব মানে হলো যা বিরহীকে দুঃখী করে। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে।

কদম ফুল শুধু বর্ষায় প্রকৃতির হাসি নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতা। কদম গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে কদম ফুল তরকারি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া হয়। কদম গাছের কাঠ দিয়ে দিয়াশলাই তৈরি করা হয়ে থাকে। বর্ষায় প্রকৃতির সতেজ-সজীব রূপ-রস যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয় জয় করে এসেছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি সব আবর্জনা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে। বন্যার পানি পলিমাটি বয়ে এনে দেশকে করে সুজলা- সুফলা। তাই তো বর্ষা ঋতু এত কাব্যময়, প্রেমময়, ঐশ্বর্যশালী। তাই বর্ষাকাল বাঙালির চিরচেনা।

  • মাকসুদুর রহমান পারভেজ, লালমোহন (ভোলা)

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877