১৭ বছর বয়সী ছেলে সারোজ একা একাই প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা তার মাকে বাঁশের পালানে শুইয়ে সাইকেলে করে গ্রাম থেকে দূরে বনের মধ্যে নিয়ে দাফন করেছে।
মৃত্যুর সময় মা জানকি সিনহানিয়ার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। পানি আনতে গিয়ে আচমকা মারা যান তিনি। ১০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর করপোবহালে বাবার বাড়িতেই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন তিনি।
ঘটনাটি গত জানুয়ারি মাসের। ভারতের ওড়িশ্যা অঙ্গরাজ্যের ছোট এক গ্রামের মাঝখান দিয়ে সাইকেলে করে সারোজ যখন তার মায়ের লাশ নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তার মনোযোগ নষ্ট হওয়ার মতো তেমন কিছু ছিল না। একমাত্র জিনিস যেটা তার বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিল সেটি হচ্ছে, তার নিজের জুতো ভাঙা রাস্তার নুড়ির সঙ্গে বারবার ঘষা খাওয়ার আওয়াজ। সাইকেলের পেছনের সিটে ক’টা বাঁশের পালানে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে তার মা জানকি সিনহানিয়ার লাশ শুইয়ে দেয়া হয়েছিল। সে দৃশ্য দেখলে তখন ভাবাটা কঠিন- কোনো একদিন এই সিটে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি।
ইন্ডিয়াটুডের এক প্রতিবেদন অনুসারে, সারোজ যখন লাশ নিয়ে যাচ্ছিল তখন তার মাথায় ছিল একটি অপরিষ্কার তোয়ালে। সেটি মাথায় নিয়েই কখনো কখনো কারো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল সে। ‘লাশটা কার?’, এমন প্রশ্নের উত্তরে খুব নিচুস্বরে জবাব দিতো- আমার মায়ের।
সারোজ আর তার মায়ের দোষ বলতে একটাই ছিল- তারা নিচু বর্ণের মানুষ। প্রচলিত প্রথা অনুসারে, উচ্চ বর্ণের কেউ নিচু বর্ণের কারো দাফনের কাজে শামিল হওয়া নিষিদ্ধ। আর সে প্রথা মেনে কেউ আসেনি সারোজকে সহায়তা করতে।
তার চিরচেনা প্রতিবেশীরাও সেদিন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ওদিশার করপোবহাল গ্রামের সবার চোখে সারোজ আর তার মা অদৃশ্য হয়ে গেছিল। কেউ আসেনি লাশটিকে একবার সপর্শ করতেও। কেননা, সারোজের পরিবার নিচু জাতের।
সম্প্রতি তার লাশ নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফের ভাইরাল হয়েছে। রেডিটে বেশ কয়েকবার শেয়ার হওয়ার পর তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে সমালোচনা।