রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৩১ পূর্বাহ্ন

গ্রেপ্তার আতঙ্কে ‍পুরুষশূন্য গ্রাম, বিপাকে নারী ও শিশু

গ্রেপ্তার আতঙ্কে ‍পুরুষশূন্য গ্রাম, বিপাকে নারী ও শিশু

স্বদেশ ডেস্ক:

গ্রেপ্তার আতঙ্কে এখন পুরুষ শূন্য ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ভাংবাড়ি মহেশপুর গ্রাম। নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় অজ্ঞাতদের নামে মামলা হওয়ার পর গ্রামের অধিকাংশ পুরুষ বাড়ি ছেড়েছেন। পুরো এলাকায় এখন সুনসান নীরবতা। কোন গাড়ি দেখলেই পালিয়ে যাচ্ছেন নারী ও শিশুরা। আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা যায় ভাংবাড়ী মহেশপুর গ্রামে। তবে পুলিশ বলছে, অকারণে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন পরবর্তী  সহিংসতার ঘটনায় ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও দুই সহকারী পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা প্রায় ৮শ’ জনের বিরুদ্ধে  থানায় তিনটি মামলা করেন।

এরপর থেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভাংবাড়ি মহেশপুর গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে যায়। বাড়িতে আয় রোজগারের কোন মানুষ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন গৃহবধূরা। আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।

তবে, কোন নির্দোষ মানুষকে হয়রারি করা হবে না বলে আশ্বাস দিলেন রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) এসএম জাহিদ ইকবাল। এদিকে, ঘটনার তদন্তে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।

উপজেলার মীরডাঙ্গী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মো. বাদশাহ মিয়ার ৯ মাস বয়সী মেয়ে সুরাইয়া মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. খতিবর রহমান একটি মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান বলেন, ইউপি সদস্য পদে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা তাদের ওপর হামলা করেছিলেন। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি বলে এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

২৭ জুলাই রাতে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব শেষে ফেরার সময় মীরডাঙ্গী বাজারের ১০০ গজ দক্ষিণে পুলিশের ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও সদর থানার এএসআই বিলাশ চন্দ্র রায় একটি মামলা করেন। মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

শিশু সুরাইয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ওইদিন তাৎক্ষণিকভাবে লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় লোকজন। ওই সময় তারা রানীশংকৈল আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন ও রানীশংকৈল থানা ঘোরাও করে রাখেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এ ঘটনায় রানীশংকৈল থানার এএসআই আহাদুল জামান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে মামলার কথা শুনে অনেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া গ্রামের প্রায় সব দোকান বন্ধ রয়েছে। নির্বাচনে পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী খালেদুর রহমানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তার প্রতিবেশী এক নারী জানিয়েছেন, তারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তবে কোথায় গেছেন, তা তারা জানাননি।

অজ্ঞাতনামা মামলার কথা শুনে অধিকাংশ পুরুষ ছেড়েছেন ঘরবাড়ি। গ্রেপ্তার আতঙ্কে সময় পার করছে বাড়ির নারী ও শিশুরা। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো গ্রামে।

মীরডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা মনসুরা বেগম বলেন, আমরা শুনেছি ৭’শ-আটশ মানুষের নামে মামলা হয়েছে। যেহেতু নাম উল্লেখ করে মামলা হয়নি সে কারণে ভয়ে ভয়ে সময় পার করছি আমরা।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল বলেন, আমরা দিনমজুর মানুষ। দিন আনি দিনে খাই। একদিন কাজ না করলে- না খেয়ে থাকতে হয়। এখন অনেকজনের নামে অজ্ঞাতনামা মামলা হয়েছে। আমি নিজেই অনেক ভয়ে আছি। কাকে কখন তুলে নিয়ে যায় বলা যায় না।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান বলেন, ইউপি সদস্য পদে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা তাদের ওপর হামলা করেছিলেন। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি বলে এজাহারে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

এদিকে মামলার কথা শুনে অনেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন। হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছাড়া গ্রামের প্রায় সব দোকান বন্ধ রয়েছে। নির্বাচনে পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী খালেদুর রহমানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তার প্রতিবেশী এক নারী জানিয়েছেন, তারা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তবে কোথায় গেছেন, তা তারা জানাননি।

রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল বলেন, তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ৮ শ’। তবে আমি বলে দিয়েছি, কোনো সাধারণ মানুষ এতে হয়রানি হবে না। অতএব কেউ ভয় পাবেন না। শুধুমাত্র দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877