সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন থেকে শিক্ষক বদলি অনলাইনে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন থেকে শিক্ষক বদলি অনলাইনে

স্বদেশ ডেস্ক:

প্রায় সোয়া দুবছর পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক বদলি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে এখন থেকে সরাসরি নয়, অনলাইনে হবে এই বদলির কাজ। নির্ধারিত সফটওয়্যারে পরিচয়পত্র (আইডি) ব্যবহার করে তারা বদলির আবেদন করবেন। তিন ধাপে অনুমোদন শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বদলির আদেশ জারি হয়ে যাবে। নতুন পদ্ধতিতে এই বদলি কার্যক্রম আগামী মাসে শুরু হবে। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে সারা দেশে বদলির এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। ইতোমধ্যে গাজীপুরে এই কার্যক্রমের পরীক্ষামূলক (পাইলটিং) প্রয়োগ করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণজনিত পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের মধ্য মার্চ থেকে বদলির কার্যক্রম বন্ধ আছে।

বদলিতে শিক্ষকদের হয়রানি আর উৎকোচ বাণিজ্যের অনেক অভিযোগ আছে। একশ্রেণির অসাধু শিক্ষা কর্মকর্তা সারা বছর বদলি মৌসুমের জন্যই অপেক্ষা করে থাকেন। বছরের শুরুর তিন মাস বা জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এলে তারা হয়রানির দুয়ার খুলে বসেন। অন্যদিকে হয়রানি ও ঘুসের হাত থেকে বাঁচতে অনেক শিক্ষক প্রভাবশালী মহল থেকে তদবির করিয়ে থাকেন। এছাড়া লোভনীয় স্থানে বদলির জন্য মহাতদবির বাণিজ্য বা প্রভাবশালীদের চাপ সৃষ্টির ঘটনা ঘটে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, বদলিকে কেন্দ্র করে মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং উপজেলা পর্যায়ে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। নানা জায়গা থেকে বদলির জন্য সুপারিশ, যোগাযোগ, অনুরোধ, আবেদন, সাক্ষাৎ এগুলো ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এতে পাঠদান কার্যক্রম যেমন বিঘ্নিত হতো, তেমনি শিক্ষকরা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারতেন না। নতুন এই পদ্ধতির কারণে শিক্ষকদের কারও কাছে যেতে হবে না। বদলির জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, নতুন এই পদ্ধতি এসব চর্চা কতটা দূর করতে পারবে। কেননা বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের এমপিওর কাজ বিকেন্দ্রীকরণের সময়েও একই কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন তাদের কাজে চার ঘাটে ঘুস দিতে হয় আর হয়রানিও বেড়েছে বলে অভিযোগ আছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান যুগান্তরকে বলেন, সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেই এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। বদলির আবেদন প্রথমে প্রধান শিক্ষক ও পরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিষ্পত্তি করবেন। এরপর সেটি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আসবে। তিনি বদলির আদেশ জারি করবেন। এই তিন স্তরের কোথাও ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় ফাইল আটকে থাকতে পারবে না। এই তিন দিনের মধ্যে যাচাই করে নিষ্পত্তি না করলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই যাচাইয়ের জন্য নিয়োজিত পরবর্তী ব্যক্তির কাছে চলে যাবে। পাশাপাশি নিষ্পত্তি না করার বিষয়টি মহাপরিচালকের ড্যাশবোর্ডে ‘লাল চিহ্ন’ আকারে উঠবে। তখন তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে কৈফিয়ত তলব করবেন। কোনো কারণ ছাড়া ফাইল নিষ্পত্তি না করলে সংশ্লিষ্টকে শোকজ করা হবে। শোকজে সন্তুষ্ট না হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সফটওয়্যারে অবশ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে শোকজের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যদি এই ধরনের ফাইল আটকে রাখার চর্চা দেখা যায়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শোকজের ব্যবস্থাও সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

অনলাইনে বদলির এই পদ্ধতি উদ্বোধন উপলক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বুধবার সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) মহিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এতে প্রায় পৌনে ৪ লাখ শিক্ষক কর্মরত। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। এ কারণে তাদের বদলিও নিজ উপজেলার মধ্যেই হওয়াকে স্বাভাবিক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আর এ কারণে এটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসাবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিষ্পত্তি করেন। তবে বিশেষ কারণে অন্য জেলা ও বিভাগে বদলি হওয়া যায়। আর মহানগরী ও পৌরসভা পর্যায়ে বদলির জন্য আলাদা বিবেচনা আছে। অন্য জেলায় বদলির ক্ষেত্রে বিভাগীয় উপপরিচালক আর অন্য বিভাগে বদলির ক্ষেত্রে মহাপরিচালক পর্যায়ে অনুমোদন লাগে। মহানগরী পর্যায়ে বদলি নিষ্পত্তি করে মন্ত্রণালয়।

এর আগে ৩০ জুন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১৮টি স্কুলের মধ্যে এই কার্যক্রমের পাইলটিং করা হয়। ১৫ জুলাই পর্যন্ত যেসব শিক্ষক ওই উপজেলায় বদলির আবেদন করেছিলেন, তাদেরই মধ্যে ১৮টি বিদ্যালয়ে শূন্য পদে বদলি করা হয়েছে। এই কাজটিই বুধবার সম্পন্ন করেন প্রতিমন্ত্রী।

এদিকে এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে বর্তমানে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। বর্তমানে তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা চলমান রয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে সারা দেশে ৪৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আগস্ট থেকে দেশের তিন হাজার ২১৪টি বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু করা হবে। দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেনে একই ধরনের প্রাথমিকের পাঠ্যবই পড়ানো হবে। বিদ্যালয়ে ভিন্ন ভিন্ন পাঠ্যবই পড়ানো যাবে না।

বছর শেষে পাইলটিং ক্লাস শিশুদের কতটা কাজে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগের মতোই বিষয়বস্তু রয়েছে। যাদের পাইলটিংয়ের আওতায় আনা হবে তারা আগের বই পড়ছে। তাই নতুন বই পড়ানো শুরু করা হলে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। তবে আগামী বছর নতুন কারিকুলামের দ্বিতীয় শ্রেণির পাইলটিং শুরু করার কথা থাকলেও দেরি হয়ে যাওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। আগামী বছর শুধু প্রথম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমে ক্লাস শুরু করা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877