শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের চমক! এবার ভিন্‌গ্রহে পানি-মেঘের সুস্পষ্ট ছবি

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের চমক! এবার ভিন্‌গ্রহে পানি-মেঘের সুস্পষ্ট ছবি

স্বদেশ ডেস্ক:

জেমস ওয়েব মহাকাশ টেলিস্কোপ তার প্রথম অভিযানে ১৩৫০ কোটি বছর আগের প্রথম দিকে সৃষ্ট নক্ষত্রগুলোর বিরল ছবি প্রকাশ করেছিল। এবার ভিন্ন এক জগতের ভিন্ন কোনো গ্রহে পানি-মেঘ-ধোঁয়ার স্পষ্ট ছবি প্রকাশ করেছে জেমস ওয়েব।

এক হাজার আলোকবর্ষ দূরের এক জগৎ। সেখানেও আছে এক সূর্য। আর তাকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করছে এক দৈত্যাকার গ্যাসীয় পিণ্ড।

ঠিক যেন এই পৃথিবীরই প্রতিবিম্ব, মহাকাশের নিকশ কালো অন্ধকারে কোনো এক আয়নায় ফুটে উঠেছে। তাতে পানি, মেঘ, ধোঁয়া… সবকিছুরই চিহ্ন স্পষ্ট। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের দ্বিতীয় চমক এটি। গতকালই প্রকাশিত হয়েছে জেমস ওয়েবের তোলা এক নির্মীয়মাণ নক্ষত্রপুঞ্জের সমাহারের ছবি।

পৃথিবীর মতো প্রাণের অনুকূল কোনো গ্রহ যে থাকতে পারে, তেমন ইঙ্গিত আগেও মিলেছিল। টেলিস্কোপের লেন্সে ধরা পড়া কোনো কোনো ভিনগ্রহের ছবি দেখে কৌতূহলও জন্মেছে। কিন্তু এমন স্পষ্ট ছবি, জেমস ওয়েবের আগে কেউই দেয়নি।

নাসা জানিয়েছে, ডব্লিউএএসপি-৯৬ মিল্কি ওয়েরই এক এক্সোপ্ল্যানেট। তার মতো ৫ হাজার এক্সোপ্ল্যানেট চিহ্নিত হয়েছে। এক্সোপ্ল্যানেট হলো সৌরজগতের বাইরে থাকা কোনো গ্রহ, যা পৃথিবীর মতো কোনো এক নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে।

পৃথিবীর দক্ষিণের আকাশে আমাদের গ্রহ থেকে প্রায় ১১৫০ আলোকবর্ষ দূরে ফিনিক্স কনস্টেলেশন বা নক্ষত্রপুঞ্জে রয়েছে ডব্লিউএএসপি-৯৬ গ্রহটি। এটি একটি গ্যাসীয় পিণ্ড, কিন্তু সরাসরি এর সাথে সৌরজগতের কোনো সম্পর্ক নেই। বৃহস্পতি গ্রহের অর্ধেকেরও কম ভর এর। কিন্তু ব্যাস বৃহস্পতির ১.২ গুণ বেশি। সৌরজগতের যে কোনো গ্রহের তুলনায় এটি অনেক স্ফীত। তাপমাত্রাও বসবাসের অযোগ্য, ৫৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এছাড়া আরো কিছু বিষয় চোখে পড়ার মতো। গ্রহটি তার নক্ষত্র থেকে খুব একটা বেশি দূরে নেই। সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ। তাদের মধ্যে যা দূরত্ব, তার ৯ ভাগের ১ ভাগ দূরত্ব রয়েছে ডব্লিউএএসপি-৯৬ ও তার সূর্যের। পৃথিবীর সাড়ে তিন দিনেই গ্রহটি তার নক্ষত্রকে এক পাক ঘুরে ফেলে। এই সামগ্রিক চরিত্র, অর্থাৎ প্রকাণ্ড আকার, ছোট প্রদক্ষিণকাল, স্ফীত পরিমণ্ডল, এগুলোর জন্যই ডব্লিউএএসপি-৯৬-কে ঘিরে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের আগ্রহ জন্মেছে। এত বিশদ তথ্য যে এর আগে কখনো পাওয়া যায়নি।

জেমস ওয়েবের পূর্বসুরী হাবল টেলিস্কোপ গত দু’দশকে অসংখ্য এক্সোপ্ল্যানেটকে দৃষ্টিতে এনেছে, তাদের বায়ুমণ্ডল বিশ্লেষণ করেছে, ২০১৩ সালে প্রথম স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেছে সেখানে পানির উপস্থিতি। কিন্তু জেমস ওয়েব অভিযানে নেমেই চমক লাগিয়ে দিয়েছে। আশা জাগিয়েছে, শিগগিরই প্রাণের অনুকূল কোনো গ্রহের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।

২১ জুন জেমস ওয়েবের ‘নিয়ার-ইনফ্রারেড ইমেজার অ্যান্ড স্লিটলেস স্পেক্ট্রোগ্রাফ’ (এনআইআরআইএসএস)-এ ধরা পড়ে ডব্লিউএএসপি-৯৬। ওই দিন গ্রহটি নিজের নক্ষত্রের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময়ে নক্ষত্রের রশ্মি তার গায়ে পড়ে। তার পরে তা প্রতিফলিত হয়ে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা দৃশ্যমান হয় এক্সোপ্ল্যানেটটি। সেই প্রতিফলিত আলোর পথ অনুসরণ করেই জানা গিয়েছে দূর-গ্রহের প্রতিটি চরিত্র। আকার, কক্ষপথ, অস্তিত্বের কথা।

এত বিশদ তথ্য এই প্রথম জানা গেল। কৃতিত্ব অবশ্যই জেমস ওয়েবের।

এই দূরবীক্ষণ যন্ত্রে রয়েছে বিশেষ স্পেকট্রাম। এটি জল, অক্সিজেন, মিথেন বা কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে চিহ্নিত করতে সক্ষম। এই স্পেকট্রামকে ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন, কোনো ভিন্‌গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কতটা জলীয় বাষ্প, কার্বন ও অক্সিজেন রয়েছে; গ্রহের বায়ুমণ্ডলের আনুমানিক তাপমাত্রা ও গভীরতা কতটুকু। গ্রহের জন্ম থেকে জীবনবৃত্তান্ত, জানা যাবে সবই। মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসবে গ্রহ-নক্ষত্রের অনেক অজানা বিষয়।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877