শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:০৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গরমে বাড়ির ছাদ ও ছাদ বাগান ঠান্ডা রাখতে ‘মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ প্যারিসের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থীদের সরিয়েছে পুলিশ জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ সংক্রান্ত বাংলাদেশের প্রস্তাব গৃহীত সৌদিতে প্রবল বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ল মসজিদের ছাদ ‘নীলচক্র’ কি নীল হবে না রক্তের রঙ লাল হবে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ২৫ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ওপর ইরানের নিষেধাজ্ঞা তিউনিসিয়ায় নৌকাডুবিতে নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, ৩ জন সাময়িক বরখাস্ত ভোটের পরিবেশ নষ্ট করলে কাউকে ছাড় নয়: ইসি রাশেদা
অর্থনীতিতে বড় সংকটের শঙ্কা

অর্থনীতিতে বড় সংকটের শঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক

বৈশ্বিক মহামারী করোনার আঘাতে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। দেশের অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব পড়ে। সেই ধকল কাটিয়ে ওঠার মুহূর্তে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির ক্রমাগত উল্লম্ফনে অর্থনীতিতে সংকট আরও ঘনীভূত হতে শুরু করে। এখন করোনার চতুর্থ ঢেউ আবার চাপ তৈরি করছে দেশের অর্থনীতিতে।

কোভিডের সময় সারা বিশ্বেই চাহিদা ছিল কম। এতে উৎপাদনও কম হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থাও বিঘ্নিত হয়। কোভিডের প্রভাব চলে যেতে থাকলে চাহিদা বাড়ে। কিন্তু সে তুলনায় উৎপাদন বাড়েনি। ফলে শুরু থেকেই দেখা দেয় মূল্যস্ফীতির চাপ। বাংলাদেশও এর বাইরে ছিল না। এর পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে।

মূল্যস্ফীতির চাপ বাংলাদেশেও আছে। স্বস্তির জায়গা এখনো রপ্তানি আয়। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন আমদানির ক্ষেত্রে। আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয়ে বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে আমদানির পরিমাণ যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে এর ব্যয়। তবে রপ্তানি আয় বাড়লেও সে তুলনায় আমদানি ব্যয় এতটাই বেড়েছে যে বাণিজ্য ঘাটতি হয়ে গেছে বিশাল। অন্যদিকে করোনার সময় প্রবাসী আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশে ছিল বরাবরই ভালো প্রবৃদ্ধি। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই এ আয় নিম্নগামী। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বৈদেশিক প্রায় সব ক্ষেত্রেই আয় কমে

গেছে, অথচ বেড়েছে ব্যয়। এতে চলতি হিসাবে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। ভারসাম্যহীনতা আছে সামগ্রিক লেনদেনেও।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিকল্প নেই। একটু সচেতন হলে ১০ থেকে ১৫ ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব। এটি করতে হবে। এসি ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া, এমনকি বন্ধ করতে হবে। কর্মঘণ্টা কমালে উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে হবে। রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ করা যেতে পারে। মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে। এককথায় আমদানি প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে, যা এখন ৪০ শতাংশ। সরকার ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যা ভালো। তবে আরও কমানোর চেষ্টা করতে হবে।

ইতোমধ্যে অর্থনীতির শক্তিশালী দেশ শ্রীলংকা পর্যুদস্ত। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির ক্রমাগত উল্লম্ফন শ্রীলংকার অর্থনীতিকে ক্ষতবিক্ষত করে তুলেছে। ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি রুপি ছাপিয়েছে শ্রীলংকা। ছাপানো এ বিপুল পরিমাণ মুদ্রা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ। দেশটিতে গত মাসে শুধু খাদ্য মূল্যস্ফীতিই হয়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। চলতি বছর দেশটির সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৬০ শতাংশে দাঁড়ানোর প্রক্ষেপণ রয়েছে। যদিও তা ১০০ শতাংশ ছাড়ানোর আশঙ্কাও করছেন অনেকে। শ্রীলংকার এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারও ব্যাপক সতর্ক। কৃচ্ছ্রসাধনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু গ্যাস বিদ্যুৎ সংকট সব হিসাব ওলটপালট করে দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি আরও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। ঋণের সুদহার বাড়ানো, মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণ কমানো ও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ তাদের। আর মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে কয়লা উত্তোলন, গ্যাসকূপ খনন ও অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে। তবে উৎপাদন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সরকার এরই মধ্যে ব্যয় সংকোচনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থছাড়, গাড়ি কেনা বন্ধ এবং আপ্যায়ন, প্রশিক্ষণ, ভ্রমণসহ বিভিন্ন খাতে খরচ কমিয়ে অর্ধেক করার মাধ্যমে উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয় থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বেসরকারি খাত যাতে ব্যয় সংকোচন করে, সে জন্যও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ধরনের নীতি। বিশেষ করে জরুরি নয় এবং বিলাসপণ্যের আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে এলসি মার্জিন।

পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন সীমিত ও লোডশেডিং করতে বাধ্য হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জনগণকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সপ্তাহিক কর্মঘণ্টা কমানো এবং ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম বাস্তবায়ন করতে জনপ্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হবে। কর্মঘণ্টা ২ ঘণ্টা কমানোর সুপারিশ করা হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে গত মে মাসে গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ। খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে গতকাল প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ১০০ ডলারে উঠেছে। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম উঠেছে ৪০ ডলারে।

গম, ভুট্টা, সয়াবিন ও পাম অয়েলের মতো ভোজ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমলেও গত বছরের তুলনায় এখনো বেশি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। একই অবস্থা তুলা, লোহা, রাসায়নিকসহ শিল্পের কাঁচামালের দামেও। এ পরিস্থিতির মূল কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি, যা ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ খুব শিগগির স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। এদিকে বন্যার কারণে দেশের ২০ জেলায় ধান ও সবজি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব জেলার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, সরকারকে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার এবং মূল্যস্ফীতি ধরে রাখতে হবে। ইতোমধ্যেই সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877