স্বদেশ ডেস্ক:
সিলেটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। একই সাথে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ চললেও বেশির ভাগ দুর্গম এলাকায় ত্রাণসামগ্রী যাচ্ছে না। যাও যাচ্ছে তাতে দুর্গত মানুষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে সামান্যই।
পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করায় রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ও সদর ইউনিয়নের চারটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে চারঘাট-বাঘা, পবা ও গোদাগাড়ী এলাকায়। গাইবান্ধার সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ ও গোখাদ্য সঙ্কটও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনাসহ অন্যান্য নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। এখানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সহস্রাধিক পরিবার।
কুড়িগ্রামে দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষ। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে পড়েছেন তারা। বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দিন দিন দুর্ভোগ বাড়ছে। খাবার পানি, রান্না করা খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
সিলেটে চলমান বন্যায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলায় হাঁস-মুরগিসহ তিন হাজারের বেশি গবাদিপশু মারা গেছে। আর ডুবে গেছে গবাদিপশুর ৭১০টি খামার। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার বিচ্ছিন্ন জনপল্লীর বানভাসিরা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। শহর ও শহরতলির আশপাশে সরকারি-বেসরকারি কিছু ত্রাণ বিতরণ করলেও হাওর এলাকার বিচ্ছিন্ন পল্লীর বানভাসিদের এখনো খোঁজ নেয়নি কেউ।
রাজশাহীতে পদ্মায় বাড়ছে পানি, এলাকায় আতঙ্ক
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানি বাড়তে শুরু করেছে রাজশাহীর পদ্মায়। রাজশাহী পয়েন্টে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মার পানির উচ্চতা মাপা হয় ১২ দশমিক ৬৬ মিটার। আর রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। ফলে এখন বিপদসীমার ৫ দশমিক ৮৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রাবাহিত হচ্ছে পদ্মার পানি। পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করায় রাজশাহীর চারঘাট-বাঘা, পবা ও গোদাগাড়ী এলাকায় এরই মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফুঁসে উঠছে পদ্মা নদী। মরা পদ্মায় শোনা যাচ্ছে আবারো স্রোতের গর্জন। নদীর আনাচে-কানাচে এখন টইটম্বুর হয়ে উঠছে।
এ দিকে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ও সদর ইউনিয়নের প্রায় চারটি গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বাঘা উপজেলার সর্ব দক্ষিণ পূর্বে থাকা সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন চকরাজাপুরেও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পাউবো সূত্র বলছে, এবারো পদ্মার পানি শহররক্ষা বাঁধ অতিক্রম করবে না। কারণ রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। আর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা শহর রক্ষা বাঁধের উচ্চতা ২১ দশমিক ৬৭ মিটার। তাই পদ্মার পানি বাড়লেও বাঁধ নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পাউবো সূত্র জানায়, আপাতত বন্যার আশঙ্কা নেই। এই সময় পানি বাড়াটা স্বাভাবিক। তবে সাধারণত হঠাৎ করে বেশি বেড়ে গেলে ভাঙন দেখা দেয়। তাই ভাঙন ঠেকাতে পাউবো ১০ হাজার জিও ব্যাগ মজুদ রেখেছে।
গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ ও গো-খাদ্য সঙ্কটও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি এখনো বিপদসীমার নিচে রয়েছে। এ দিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের কষ্ট দিন দিন বেড়েই চলছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পাশাপাশি ওই সব মানুষজন গো-খাদ্য সঙ্কটে গবাদিপশুকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নে ৯৬টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ২১ হাজার ৮৩৪ পরিবারের ৪৭ হাজার ৪৬৬ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বিয়ানীবাজারে প্লাবিত এলাকা এখনো বাড়ছে
বিয়ানীবাজার (সিলেট) জানান, বিয়ানীবাজার উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা ও কুশিয়ারা এবং সুনাই নদীর পানি বাড়ছে। বুধবার সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য নদী দু’টির অবস্থা প্রায় একই। বন্যাকবলিত হওয়ার উপজেলার ১১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় ৩৪টি বিদ্যালয়ে আস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
এ দিকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত কুশিয়ারার একাধিক ডাইক ভেঙে এবং সুরমা ও সুনাই নদীর ডাইক উপচে লোকালয়ে পানি ঢোকা অব্যাহত ছিল। মঙ্গলবার বিকেল থেকে কুশিয়ারা নদীর বালিঙ্গা এলাকায় একটি অংশে ডাইক ভেঙে যাওয়ায় এটি দিয়ে প্রবল স্রোতে পানি এসে আশপাশের ১০টি গ্রাম প্লাবিত করেছে। উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি এখনো বিপদসীমার উপর
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ঘরবাড়িতে পানি থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষজন। কিছু পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু এলাকায় আশ্রয় নিলেও অনেক পরিবার এখনো বসবাস করছে নৌকায় ও ঘরের উঁচু করা মাচানে। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কটে পড়েছেন তারা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বুধবার বেলা ৩টা রিপোর্ট অনুযায়ী ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্ট ব্রহ্মপুত্রের পানি ১৪ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বগুড়ায় আরো অবনতি, পানিতে ভেসে গেছে শিশু
বগুড়া অফিস ও সারিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, বগুড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দিন দিন দুর্ভোগ বাড়ছে। খাবার পানি, রান্না করা খাবারসঙ্কট দেখা দিয়েছে। যমুনা নদীর পানি বুধবার আরো বেড়ে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বাড়তে থাকায় নতুন করে গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন থেকে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যায় ১০ হাজার ২৫০টি টিউবওয়েল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এক লাখ ১০ হাজার গবাদিপশু পানিবন্দী হয়েছে।
এ দিকে ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানিতে ডুবে আতিক হাসান (৭) নামে এক শিশু নিখোঁজ হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের শিমুলবাড়ি সড়কের কালভার্টের কাছে এ ঘটনা ঘটে। সে উপজেলার গোসাইবাড়ি পূর্বপাড়ার কমল হোসেনের ছেলে।
সিলেটে মারা গেছে ৩ হাজারের বেশি গবাদিপশু
ইউএনবি জানায়, সিলেটে চলমান বন্যায় প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বন্যার পানিতে সিলেট জেলায় হাঁস-মুরগিসহ তিন হাজারের বেশি গবাদিপশু মারা গেছে। আর ডুবে গেছে গবাদিপশুর ৭১০টি খামার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি কমলে এবং যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে জেলায় এখন পর্যন্ত তিন হাজার ১৮৯টি গবাদিপশু মারা গেছে। আর জেলা কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, বন্যায় সিলেট জেলায় ৭১০টি খামার ডুবে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে এক হাজার ৯৯১ টন খড় ও দুই হাজার ৯৫৯ টন ঘাস। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত জেলায় প্রাণিসম্পদের ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। চলমান বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। তবে এ উপজেলার ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য নেই প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কাছে।
সুনামগঞ্জের পানি কমছে, বাড়ছে দুর্ভোগ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার বিচ্ছিন্ন জনপল্লীর বানভাসিরা ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। শহর ও শহরতলির আশপাশে সরকারি-বেসরকারি কিছু ত্রাণ বিতরণ করলেও হাওর এলাকার বিচ্ছিন্ন পল্লীর বানভাসিদের এখনো খোঁজ নেয়নি কেউ।
নদীর পানি কমায় সুনামগঞ্জ শহর থেকে ধীরে নামছে বন্যার পানি। তবে এখনো প্লাবিত রয়েছে সুনামগঞ্জ সদরসহ ১২টি উপজেলা। পানিবন্দী রয়েছে প্রায় ৮ লাখেরও বেশি মানুষ। ক্রমাগত বাড়ছে তাদের দুর্ভোগ। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট। বাসভাসিরা জানান, বন্যায় সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে এখন খাবারের জন্য কিছু পাচ্ছি না। বন্যার পানিতে সব টিউবওয়েল তলিয়ে গেছে। তাই খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এ দিকে বানভাসি মানুষ ঘর ছেড়ে আশ্রয়ের খোঁজে দিগি¦দিক ছুটছেন। যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই গৃহপালিত পশু সাথে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক পরিবারের নিজস্ব নৌকা না থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে পানিবন্দী অবস্থায় বাড়িঘরে আটকা পড়ে থাকতে হচ্ছে। তা ছাড়া হাট-বাজারগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এসব বানভাসি মানুষের জন্য এখন শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ আশ্রয় জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে জনমনে ভীতি আর উৎকণ্ঠা কাজ করছে।
এ দিকে পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় সিলেট থেকে কয়েকটি জরুরি সেবার গাড়ি সুনামগঞ্জ এসেছে। কিছু কিছু বাসা-বাড়িতে একাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। জেলার সব উপজেলা মিলে প্রায় ৫০০টির মতো আশ্রয়কেন্দ্রে লাখের ওপরে বানভাসি মানুষ অবস্থান করছে। জেলার অধিকাংশ স্থানে সীমিত আকারে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু হলেও সেবার মান একেবারেই নিম্ন।
কুশিয়ারা পাড়ের ২৮ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি
রাজনগর (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের রাজনগরে সপ্তাহব্যাপী বন্যায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত ১৬ জুন উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে এসব এলাকা প্লাবিত হয়। এতে উপজেলার উত্তরভাগ ও ফতেহপুর ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামের এসব মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। উপজেলার প্রধান নদী মনুর পানি কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় কয়েকেটি গ্রাম অশঙ্কামুক্ত হলেও কুশিয়ারা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কুশিয়ারার আব্দুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সহস্রাধিক পরিবার।
কুলাউড়া-বরমচাল রেলপথে পানি
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, গত ৫/৬ দিন কুলাউড়ার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও মঙ্গলবার রাতের বেশির ভাগ সময় বৃষ্টিপাত হওয়ায় কুলাউড়ায় বন্যার পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বরমচাল ইউনিয়নের ফানাই-আনফানাই নদী এলাকায় ফানাই ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইনে বন্যার পানি উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বরমচালের ফানাই-আনফানাই নদীর মধ্যবর্তী এলাকার ওই স্থানের প্রায় ২০০ ফুট রেললাইনে সোমবার বিকেল থেকে পানি উঠতে শুরু করে। এখন সময় যতই যাচ্ছে, ততই বাড়ছে পানি। ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে ওই স্থানের রেললাইন। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কুলাউড়া-বরমচাল রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
দেওয়ানগঞ্জে যমুনার পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপরে
দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি স্থিতিশীল এবং আগামীকাল থেকে পানি কমতে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানিমাপক আব্দুল মান্নান। তবে পানি স্থিতিশীল হওয়ায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি এলেও দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র, যমুনাসহ অন্যান্য নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
কটিয়াদীতে ২৩টি গ্রাম প্লাবিত
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২৩ গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও দোকানপাটে পানি উঠে পড়ায় এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দারা। প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধির কারণে আতঙ্কে রয়েছে উপজেলার অন্যান্য গ্রামবাসী।