স্বদেশ ডেস্ক: দিন যতই যাচ্ছে ডেঙ্গুতে চিকিৎসক ও হাসপাতালের সেবা সংশ্লিষ্টদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলছে। মৃত্যুর মিছিলেও যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ডেঙ্গুর এই ভয়াবহতা থাকতে পারে আগষ্ট শেষে সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. রেহনুমা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একইভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রোকসানা ও ইসরাত জাহান। এর আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো কয়েকজন চিকিৎসক ভর্তি হয়েছিলেন। পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারা। আবার কারো মা- বাবা কিংবা বাচ্চা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। একইভাবে মেডিকেলের গ্যাস্ট্রেলজির কনসালটেন্ট ডা. রুকনুজ্জামানের ছেলেও ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। পরিবারের সদস্যরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকলেও তাদেরকেই ঠিক মতো সেবা করতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স কাঞ্চনা জানান, কয়েকদিন থেকে তার বাচ্চা অসুস্থ। তাকে সময় দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চাপে তা হচ্ছে না। অসুস্থ হয়ে বিছানায় না যাওয়া পর্যন্ত কারো অবসর মিলছে না। আমাদেরও তো পরিবার-পরিজন আছে। দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকতে না পারলে কি হয়! খাওয়া-দাওয়া ঠিক সময়ে হচ্ছে না।
কাঞ্চনা আরো জানান, ডেঙ্গু প্রকোপ বৃদ্ধির আগে ডিউটি শেষ হলেই বাসায় ফিরতে পারতাম। এখন সেখানে অনেক দেরিতে বাসায় ফিরতে হয়।
হাসপাতালের সুপারভাইজার ও সিনিয়র স্টাফ নার্স গৌরি জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে আমরা সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করছি। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে নার্সরা দুই থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত অতিরিক্তি সময় কাজ করছেন। আর অতিরিক্ত কাজের চাপে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে স্বাভাবিক অবস্থা ভেঙে পড়বে।
মুগদা মেডিকেল সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত চিকিৎসক, সিনিয়র স্টাফ নার্স ও অন্যান্যদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- অঞ্জু সিকদার, রাবেয়া আক্তার, শাহিনুর আক্তার, সমাপ্তি হালদার, খালেদা আক্তার, আমাতুন আজিমা, ফারভিন আক্তার, ইতি অধিকারী, রোমানা হক, রোমেনা আক্তার, আতিকা আক্তার, মুন্নি খানম, রোকসানা আক্তার, সুচিত্রা বৈদ্য, মমতাজ বেগম, কাঞ্চনা হালদার, শাহিনা পারভিন, সাবিহা সুলতানা, রোকনুজ্জামান, মুন্নি খানম, সেবিকা সেরেনা, নাসরিন সুলতানা, রিতা বল, সালমা আক্তার, মাজেদা, অঞ্জু সিকদার, ইসরাত জাহানসহ আরো অনেকে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক আমিন আহমদ খান জানান, আমাদের এখানে ডাক্তার ও নার্স মিলিয়ে ৩০ জনের মতো ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের অনেকে এখনো ছুটিতে আছেন। এছাড়া ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের পরিবারের অনেক সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।
তিনি আরো বলেন, আমরা নিরলসভাবে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালের সবাই ডিউটির অতিরিক্ত সময় কাজ করছে। কাজের মধ্যেও অনেকে অসুস্থ হচ্ছেন। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির বিষয়ে আমরাও চিন্তিত।