রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন

সু চি কি রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন

সু চি কি রাজনীতিতে ফিরতে পারবেন

স্বদেশ ডেস্ক:

সু চির বিরুদ্ধে আঠারটি অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখার দায়ে তাকে মোট ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির সামরিক আদালত। অন্যসব অভিযোগে তাকে যদি দোষী সাব্যস্ত করা হয়, তা হলে তার জীবনের বাকিটা সময় কাটাতে হবে কারাকক্ষেই। ফলে মুক্ত সু চির দেখা মিলবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। রাজনীতিতে ফেরা হয়তো আরও দূরের কথা। যদিও এ লেখককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ অধ্যাপক নাতাশা লিন্দস্তেদ বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, সু চি সম্ভবত জনগণের মাঝে আবার ফিরে আসবেন। যতদূর আন্দাজ করি, তিনি মিয়ানমারের রাজনীতিতে টিকে থাকার পথ খুঁজে পেয়েছেন।’

কিন্তু মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশীয় অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন সম্প্রতি বলেছেন, ‘[সু চির বিরুদ্ধে] নতুন নতুন অভিযোগ দায়েরের জন্য মরিয়া হয়ে কাজ করছে জান্তা। এসব অভিযোগের শুনানি হচ্ছে বানোয়াট আদালতে। ফলে এত দীর্ঘ সময়ের জেলসাজা হবে যে, তাকে আর কখনো মুক্তভাবে দেখা না-ও যেতে পারে।’

তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযোগ- তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসীন হতে ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোটারদের প্রলোভন দেখিয়ে এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করে নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।

সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে এবং সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে বছরজুড়েই মিয়ানমারে বিক্ষোভ হয়েছে। জান্তার কঠোর দমননীতির কারণে সে বিক্ষোভ সহিংস রূপও নিয়েছে। বলা চলে, বারোটা বেজে গেছে দেশটির, বিশেষত মুক্তিকামী মানুষের।

২০২১ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসার প্রতিষ্ঠান র‌্যাপলার জানিয়েছে, রাজনৈতিক বন্দিদের সাহায্যকারী একটি সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই ৫০০ দিনে মিয়ানমারে সেনা-সাধারণ সহিংসতায় দেড় হাজার মানুষের প্রাণ ঝরেছে। জাতিসংঘের হিসাবে জান্তার হাতে বন্দি হয়েছে আট হাজারের বেশি মানুষ।

মিয়ানমারের এ পরিণতির জন্য চার বছর আগে জান্তার হাতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচারহীনতা ও এ বিষয়ে সু চির নিশ্চুপ থাকাকে সম্প্রতি দায়ী করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থা। তবে সু চি তখন রোহিঙ্গা বিষয়ে সেনাদের ভাষ্যতেই অন্ধের মতো ভরসা রেখেছিলেন বলে কোনো কোনো আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক মনে করেন।

এদিকে সু চিকে মুক্তির বিষয়ে বা মিয়ানমারে পুনরায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালুর ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে কয়েকটি আহ্বান জানিয়েছে। যেমন আসিয়ানের বিশেষ দূতকে মিয়ানমারে সফর করা ও সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে, সহিংসতা বন্ধ করতে হবে এবং সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে মুক্তি দিতে হবে।

মিয়ানমারের স্বাধীনতার নায়ক জেনারেল অং সানের মেয়ে সু চি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশের শেকল থেকে মিয়ানমার মুক্ত হওয়ার ঠিক দুদিন আগে তার বাবা গুপ্তহত্যার শিকার হন। তখন সু চির বয়স মাত্র দুই বছর।

সু চির মা খিন চি ১৯৬০-এর দশকে ভারতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় সু চি দিল্লিতে ছিলেন। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয় থেকে তিনি দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে তার ভবিষ্যৎ স্বামী মাইকেল আরিসের সঙ্গে সম্পর্ক হয়।

স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ সময়ই জান্তা প্রশাসনের আওতার মধ্য দিয়ে গেছে মিয়ানমার। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জান্তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ সু চি ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ১৫ বছর বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে, যা ওই সময় ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল- জয় পেয়ে দেশটির ‘প্রধান শাসক’ হিসেবে ক্ষমতায় আসীন হন নোবেলজয়ী এ নেতা। তবে সন্তানের বিদেশি নাগরিকত্ব থাকায় তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। গণতন্ত্রের জন্য লড়াকু জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ সু চি ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877