স্বদেশ ডেস্ক:
ফুটেছে কদম, আজ পয়লা আষাঢ়; মেঘবতী জলের দিন। শুরু হলো বর্ষা ঋতু। চার দিকে কদমের ফুটন্ত সৌন্দর্য বর্ষার আগমনী বার্তা বয়ে আনছে। কদম ফুলকে বলা হয়ে থাকে বর্ষার বিশ্বস্ত দূত। কাঠফাটা রোদে মানুষের হাঁসফাঁস করা গরমে অঝোর ধারায় বৃষ্টি-বর্ষণের জন্য প্রতীক্ষা বাসা বাঁধছে।
বর্ষার নবধারা জলের সঙ্গে সঙ্গে নেচে ওঠে প্রকৃতি ও জনজীবন। নতুন প্রাণের আনন্দে অঙ্কুরিত হয় গাছপালা, ফসলের মাঠ। চার পাশে অন্ধকার, মেঘের ঘনঘটা; হঠাৎ বৃষ্টির আলিঙ্গন। গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁক গলিয়ে গাছে গাছে কদম ফুটেছে। রিমিঝিমি বৃষ্টিতে থই থই চারিধার, তীব্র তাপদাহে তপ্ত দেহে স্বস্তির ছোঁয়া নিয়ে হাজির হয় আষাঢ়। বৃষ্টি ভেজা সে ফুলের শোভা ছড়িয়ে পড়েছে গাছে গাছে। বলছিলাম নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের স্বর্ণগোলক কদম ফুলের কথা।
আকাশজুড়ে কখনো কালো মেঘের ঘনঘটা। কখনো এক চিলতে রোদের মুখে কালো মেঘের ভিড়ে হঠাৎ করেই মুষলধারায় বৃষ্টি।
কদম ফুলকে বলা হয় বর্ষার দূত। বর্ষার আগমনের আগেই হাজির হয় কদম ফুল। মানিকগঞ্জের প্রকৃতিতে বর্ষার রূপলাবণ্য ফুটে উঠেছে। গাছে গাছে ফুটেছে কদমসহ অনিন্দ্য সুন্দর ফুল। প্রকৃতিতে এনে দিয়েছে নজরকাড়া সৌন্দর্য।
ঘিওর উপজেলাসহ মানিকগঞ্জের গ্রাম কিংবা শহরের সর্বত্রই বর্ষার কয়েক দিন আগেই নিজেদের মেলে ধরেছে আপন মহিমায় কদম ফুল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় বাংলার প্রকৃতি থেকে কদম ফুল যেন হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। কদমগাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। উপজেলার বানিয়াজুরী, ঘিওর, নালী, সিংজুরী, পয়লা, বালিয়াখোড়া, বড়টিয়া এলাকায় অযতœ অবহেলায় বেড়ে উঠছে প্রচুর কদমগাছ। এমন দিনে রাস্তার ধারে ফুটন্ত কদম ফুলের সৌন্দর্য ছিল চোখে পড়ার মতো।
বর্তমানে কমে গেলেও এখনো রাস্তার ধারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ঝোপঝাড় ও জলাশয়ের পাড়ে আপন মনে সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে কদম। উপজেলার সাইংজুরী গ্রামের শিক্ষক আব্দুল মতিন দেওয়ান স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাড়ির আঙিনায় ও রাস্তায় দু’পাশে কদমগাছ ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন সেখানে শোভা পাচ্ছে ফলদ গাছ। বৃষ্টিতে ভিজে কদম ফুল সংগ্রহ এখন কেবলই স্মৃতি।
বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডের কাঠ ব্যবসায়ী মো: লিটন মিয়া বলেন, কদম কাঠ খুবই কম দামি। লাভের অঙ্কের হিসাব মেলানোর জন্য মানুষ আর তাদের বাড়ির আঙিনায় কদম ফুলের গাছ লাগাতে চাইছে না।
পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকর্তা সুবীর সরকার বলেন, গ্রামের দুরন্ত শিশু-কিশোর কদমতলায় কদম ফুল নিয়ে খেলা করত; কিন্তু আজ ধীরে ধীরে তা একেবারেই হারিয়ে যেতে চলেছে, যেন আকাল পড়েছে কদম ফুলের সৌন্দর্যে। যান্ত্রিক যুগে মানুষ বাড়ির আশপাশে ফলমূল ও ফুলের গাছ না লাগিয়ে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় পাহাড়ি গাছ লাগাচ্ছে।
ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, মানুষ আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ভুলে কৃত্রিম সৌন্দর্য তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গাছগাছালি ও ফলমূল।
জলবায়ু পরিবর্তনে বর্ষা যদিওবা পথ হারিয়েছে! তবু বর্ষার আগমনে কবিগুরুর ভাষায় বলতেই হয়, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর,/আউশের ক্ষেত জলে ভরভর,/ কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে।/ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’।