বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বিএনপির বিরোধ প্রকাশ্যে, নৌকার নীরবে

বিএনপির বিরোধ প্রকাশ্যে, নৌকার নীরবে

স্বদেশ ডেস্ক:

প্রচার পর্ব শেষ; রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। শেষ মুহূর্তে চলছে ভোটার টানার হিসাব-নিকাশ। মূল লড়াই হবে নৌকার সঙ্গে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর। আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি অংশ না নিলেও দলের সদ্য বহিষ্কৃত দুই প্রার্থী ভোটে লড়ছেন। তাদের নিয়ে বিএনপির স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের বিরোধ এখন প্রকাশ্যে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের একক প্রার্থী মাঠে থাকলেও স্বস্তি নেই নৌকা শিবিরে। পুরোনো দ্বন্দ্ব এখনো ‘নীরবে’ বিদ্যমান। যার প্রভাব ভোটের মাঠে দেখা যেতে পারে।

এদিকে ভোটের আয়োজন নিয়ে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেছেন, ‘সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আশা করি ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন।’

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচ প্রার্থী। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর মধ্যে।

বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সাক্কু ও কায়সার দুজনই দল থেকে পদত্যাগ করে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। দল সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অপরাধে তাদের ‘বহিষ্কার’ করে। এদের মধ্যে কায়সারের পেছনে রয়েছেন তার দুলাভাই ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা সদর আসনে ইয়াছিন ধানের শীষের

প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের বাহাউদ্দিন বাহারের কাছে হেরে যান। ইয়াছিনের অনুসারীরা মনে করেন, বাহারের জয়ের পেছনে ভূমিকা ছিল সাক্কুর।

অন্যদিকে কুমিল্লায় আওয়ামী রাজনীতিতে আফজল খান এবং আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরোধ বহুদিনের। নব্বইয়ের দশকে তা তীব্র হয়। তখন থেকেই দেখা গেছে, কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাহারকে বেছে নিলে আফজল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আবার আফজলকে বেছে নিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বাহার। বরাবরই তারা একে অন্যের ভরাডুবির কারণ হয়েছেন। আফজল খান মারা যাওয়ার পর সেই বিরোধের উত্তরাধিকার সূত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। এবারের নির্বাচনে আফজল খানের ছেলে কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরানও বিরোধের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ভাইবোন দুজনই ছিলেন মেয়র পদের মনোনয়নপ্রত্যাশী। সীমা দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইমরান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের কথায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। তখন আফজল খানের ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বলেন, ‘নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য ঢাকায় ডাকা হয়েছিল। আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের বলে এসেছি- আমার নেতাকর্মীরা নৌকার জন্য কাজ করছে। তবে নৌকার প্রার্থী ও তার নেতা চান না, আমরা নৌকার পক্ষে মাঠে নামি।’

নৌকার প্রার্থী রিফাতের ৪১ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আফজল খানের ছেলেমেয়েদের কাউকে না রাখায় ক্ষুব্ধ ইমরান। এর পর তাদের আর তেমন ভোটের মাঠে দেখা যায়নি। তবে সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করেও এলাকায় অবস্থান করছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় দিন পার করছেন। গতকাল তিনি কুমিল্লা সিটি এলাকায় নিজ বাসভবন ও দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সময় পার পারছেন। গতকাল বিকালে দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানকালে তিনি বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, নির্বাচনী মাঠে নামিনি। প্রচারণায় অংশ নিইনি।’

এদিকে গতকাল শেষ দিনের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রার্থীরা। এদিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে জনসংযোগ করেন। সকালে নগরীর রানীর দীঘিরপাড়ে নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই কুমিল্লায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। যিনি নির্বাচিত হবেন, আমি এবং আমার দলের পক্ষে সুস্বাগতম জানাব।’ সাক্কুর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী যার বিরুদ্ধে আমি দুর্নীতির অভিযোগ এনেছি, তিনি কালো টাকা ছড়াচ্ছেন। এমনকি আমার কর্মীদেরও টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’

টেবিল ঘড়ি নিয়ে লড়াই করা সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, সংসদ সদস্য তো চিঠি আমলেই নিলেন না। সিটির চর্তুদিকে ইউনিয়ন পরিষদ, সেখানকার সব চেয়ারম্যান বাহার ভাইয়ের লোক। উনি তাদের বলেছেন, ভোটের দিন ইউনিয়ন থেকে লোক এনে রাস্তায় প্যানিক সৃষ্টি করবে, যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে না যায়।’ সাক্কু বলেন, ‘রিফাত তো এমপির নমিনি। সে তো কিছু না। সব করছেন স্থানীয় এমপি। আমি এমপি বাহারকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছি।’

এদিকে সোমবার দুপুর ১২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজামউদ্দিন কায়সার। তিনি বহিরাগতদের উপস্থিতিতে ভোটারের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারদলীয় প্রার্থী বহিরাগতদের এনে জড়ো করছেন। মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিষয়ে যে অসহায়ত্বের পরিচয় দিয়েছেন, তাতে আমরা কুমিল্লার মানুষ যে আশা নিয়েছিলাম, তা হতাশায় রূপ নিয়েছে।’

মেয়র পদের বাকি দুই প্রার্থী হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম, যিনি ‘হাত পাখা’ প্রতীকে লড়বেন। আর ‘হরিণ’ প্রতীকে আছেন কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল। এদের নিয়ে ভোটের মাঠে তেমন আলোচনা নেই।

কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আওয়ামী লীগের একটি অংশ সাক্কুর পক্ষে কাজ করছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বেশ কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী সাক্কুর পক্ষে কাজ করছেন। তবে সিটি এলাকার বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং শ্রমিকরা একদিন কাজ বাদ দিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের ৩২টি ওয়ার্ড কমিটির সদস্য নৌকার পক্ষে কাজ করছে। সে ক্ষেত্রে রিফাত-সাক্কুর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।

জানা গেছে, কুমিল্লা নির্বাচনে এবার মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। আর নারী ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুজন। এবার ২২ হাজার নতুন ভোটার।

২০১৭ সালে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে ১১ হাজার ভোটে হারিয়ে সাক্কু জয় পান। তাই এবারের তরুণ ২২ হাজার নতুন ভোটারকে জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্টর মনে করছেন প্রার্থীরা।

এবার নির্বাচন হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে)। ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৬ জন। সাধারণ ওয়ার্ডে ১০৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে বুথ রয়েছে ৬৪০টি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877