স্বদেশ ডেস্ক:
বলিভিয়ার লা পাজে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৬০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এস্তাদিও হার্নান্দো সাইলেস স্টেডিয়াম ফুটবলারদের কাছে আতঙ্কের একটা জায়গা। ২০১৫ সালে এ মাঠে খেলার পর শ্বাসের অভাবে মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরতে হয় ব্রাজিল দলকে। নেইমার এ মাঠে খেলাকে বলেছিলেন অমানবিক। এই মাঠেই আজ বলিভিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলে জয় পেয়েছে ব্রাজিল। তবে হলুদ কার্ডের কারণে মাঠে ছিলেন না নেইমার।
বাংলাদেশ সময় আজ ভোর সাড়ে ৫টার ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে জোড়া গোল করেন রিচার্লিসন। বাকি দুই গোল লুকাস পাকেতা ও ব্রুনো গুইমারেজের।
একই সময় এস্তাদিও মনুমেন্টালে শুরু হয় আর্জেন্টিনা ও ইকুয়েডরের মধ্যকার ম্যাচ। ১-১ গোলে ড্র করে আর্জেন্টিনা।
মনুমেন্টালে আর্জেন্টিনা এর আগে সর্বশেষ খেলেছে ১৯৯৩ কোপা আমেরিকা ফাইনালে। ওই ম্যাচে কোল আলফিও বাসিলের হাত ধরে শিরোপা জিতেছিল গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা-ফার্নান্দো রেদোন্দোদের আর্জেন্টিনা। আজ এই মনুমেন্টালেই বাসিলের এক রেকর্ডে ভাগ হলো। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে তার হাত ধরে টানা ৩১ ম্যাচে অপরাজিত ছিল আর্জেন্টিনা, যা দলটির ইতিহাসে টানা সর্বোচ্চ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড। শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে হজম করা গোলে ড্র করেও সে রেকর্ডে ভাগ বসাল স্কালোনির আর্জেন্টিনা।
হলুদ কার্ড নিষেধাজ্ঞায় নেইমার ও ভিনিসিয়ুসকে পায়নি ব্রাজিল। হার্নান্দো সাইলেস স্টেডিয়ামের লড়াইটা তাই কঠিন হয়ে উঠলেও বলিভিয়াকে পাত্তাই দেননি পাকেতা, গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লিরা। অতীতও ব্রাজিলের পক্ষেই ছিল।
১৯৯৭ কোপা আমেরিকায় বলিভিয়া এ মাঠে নিজেদের সব ম্যাচ খেলে উঠে আসে ফাইনালে। কিন্তু সেই একই মাঠে ফাইনালে আর পেরে ওঠেনি বলিভিয়া। রোনালদো-দেনিলসনদের ব্রাজিলের কাছে হারতে হয় ৩-১ গোলে। এবার এক গোল বেশি হজম করতে হলো।
এই জয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়ার রেকর্ড গড়ল ব্রাজিল। ২০০২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কোচ মার্সেলো বিয়েলসার হাত ধরে সর্বোচ্চ ৪৩ পয়েন্ট পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। আজকের জয়ে ১৭ ম্যাচে ব্রাজিলের সংগ্রহ দাঁড়াল ৪৫ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আর্জেন্টিনা। দুটি দল আগেই কাতার বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করেছে।
২৪ মিনিটে পাকেতার গোলের উৎস গুইমারেজের দুর্দান্ত সলো মুভ, তারপর কুশলী পাস এবং পাকেতার ফিনিশিং। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে রিচার্লিসনের গোলটি বলিভিয়া রক্ষণের ভুলে পায় ব্রাজিল। ডান প্রান্ত থেকে অ্যান্টনির ক্রস সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় পেয়ে গোল করেন রিচার্লিসন। প্রথমার্ধে বলিভিয়া ফরোয়ার্ড হেনরি ভাসা গোলের দুটি দারুণ সুযোগ নষ্ট করেন। ভালো একটি সেভ করেন ব্রাজিল গোলকিপার আলিসন।
লিওনেল মেসি পুরো সময়ই মাঠে ছিলেন। ২৪ মিনিটে জুলিয়ান আলভারেজের গোলের ‘বিল্ড আপ’ ছিল তার দারুণ পাস থেকে। তবে এর বাইরে মেসি সেভাবে কোনো সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেননি।
প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ৬২ মিনিটে ইকুয়েডরের মিনার পোস্টের বাইরে বল মেরে সুযোগ নষ্ট করেন। কয়েক মিনিট পর একটি ফাউলের ঘটনা কেন্দ্র করে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। হলুদ কার্ড দেখেন আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি। ডিফেন্ডার নিকোলাস ওতামেন্দি ও ইকুয়েডরের এস্ত্রাদাও হলুদ কার্ড দেখেন।
আর্জেন্টিনা পেনাল্টি থেকে গোল হজম করে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে। নিজেদের বক্সে ‘হ্যান্ডবল’-এর অপরাধ করে বসেন নিকোলাস তাগলিয়াফিকো। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক থেকে ইকুয়েডরের এনার ভ্যালেন্সিয়ার শট রুখে দেন গোলকিপার জেরোনিমো রুলি। ফিরতি বলে সমতাসূচক গোল করেন ভ্যালেন্সিয়া।
চিলির বিপক্ষে আগের ম্যাচের দলে সাতটি পরিবর্তন এনে একাদশ সাজান ব্রাজিল কোচ তিতে। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া ব্রাজিল বিরতির পর বলিভিয়ার চাপ সামলেছে।
৪৮ মিনিটে মার্সেলো মোরেনোর হেড দর্শনীয়ভাবে রুখে দেন ব্রাজিল গোলকিপার আলিসন। এর কিছুক্ষণ পর ভাসার জোরাল শট মার্কিনিওসের গায়ে লেগে জালে ঢোকার মুহূর্তে দারুণভাবে রুখে দেন লিভারপুলের এই গোলকিপার। ৬৮ মিনিটে পাকেতার পাস থেকে দারুণ ভলিতে দেশের হয়ে গোলের খাতা খোলেন গুইমারেজ।
৭৮ মিনিটে দারুণ ড্রিবলিংয়ে গোলকিপারকে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি মার্তিনেল্লি। যোগ করা সময়ে ব্রাজিলের হয়ে শেষ গোলটি রিচার্লিসনের।