রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৫:১১ অপরাহ্ন

কিয়েভে চূড়ান্ত হামলায় রাশিয়া

কিয়েভে চূড়ান্ত হামলায় রাশিয়া

স্বদেশ ডেস্ক:

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে চূড়ান্ত হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। নগরীর আশপাশে মুহূমুহু ঘটছে বিস্ফোরণ, একটু পর পর বেজে উঠছে বিমান হামলার সাইরেন। ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, দ্য গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক প্রতিটি গণমাধ্যম জানিয়েছেÑ রুশ বাহিনী উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে কিয়েভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রুশ বাহিনীর এই বহরে বিএম-২১ গ্রাদসহ বিভিন্ন বিধ্বংসী রকেট ও ট্যাংক রয়েছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রুশ বাহিনী কিয়েভ থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। সেখান থেকে গোলা ছুড়তে ছুড়তে ক্রমেই তারা অগ্রসর হচ্ছে। বিপরীত দিকে ইউক্রেনও জানিয়েছে- রাজধানী রক্ষায় তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখতে গোটা কিয়েভের সব ঘর-বাড়ি ও রাস্তা দুর্গে পরিণত করা হয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক জানান, রাজধানীতে প্রবেশের প্রতিটি চেকপয়েন্ট রুশ আগ্রাসন রুখতে প্রস্তুত এবং সাপ্লাই লাইন গড়ে তোলা হয়েছে। আমরা বলতে চাই- শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে কিয়েভ। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও স্বীকার করেছে, শহর ঘিরে রুশ বাহিনী অবরোধ তৈরি করায় এরইমধ্যে কিয়েভে খাদ্য ও পানীয় জলের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে।

বিবিসি জানায়, কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া প্রচেষ্টা শুরু করেছে ইউক্রেন। পশ্চিমা দেশগুলোর সরবরাহ করা ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র ও কামান এবং ড্রোন ব্যবহার করে রুশ সেনাদের অগ্রযাত্রা বাধা দিচ্ছে তারা। এক্ষেত্রে নিয়মিত সৈন্যরা ছাড়াও ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের পাঠানো তথ্য ইউক্রেন সেনারা কাজে লাগাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় ভোরের দিকে কিয়েভের উত্তরপূর্বে ব্রোভারি জেলায় রুশ বাহিনীর গোলাবর্ষণে একটি হিমায়িত পণ্যের গুদামে আগুন লেগে যায়। এ ছাড়া শহরের আশপাশে বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকায় রকেট হামলা চালানো হয়। শহরের পাশে একটি বিমানঘাঁটিতেও আঘাত হেনেছে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র।

শুধু কিয়েভ নয়, ইউক্রেনের অন্যান্য শহরেও গতকাল রুশ হামলার তীব্রতা বেড়েছে। এদিন খারকিভ, চেরনিহিভ, সামি, মারিওপোল ঘিরেও চলে রুশবাহিনীর অবিরাম বোমাবর্ষণ। এর মধ্যে মারিওপোলে একটি মসজিদে বোমাবর্ষণ হয়। মসজিদটিতে অন্তত ৮০ বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে হামলার পর তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা জানা যায়নি। এসব অঞ্চলের আবাসিক এলাকাগুলোতেও পড়ছে মুহুর্মুহু বোমা।

কিয়েভ দখলে রাশিয়ার চূড়ান্ত হামলা আরও তীব্র করলে সেখানে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাশিয়া হামলায় ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করছে বলে এরইমধ্যে স্বীকার করেছে। এ ছাড়া তারা মাল্টিপল রকেট সিস্টেমও ব্যবহার করছে। আর জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব অস্ত্রের ব্যবহার হবে মারাত্মক রক্তক্ষয়ী।

এমন পর্যুদস্ত অবস্থা সত্ত্বেও এখনো মনোবল হারাচ্ছেন না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রয়টার্স জানিয়েছে, গত শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি দাবি করেন, ইউক্রেনের যুদ্ধ একটি কৌশলগত টার্নিং পয়েন্টে পৌঁছে গেছে। যদিও আমরা জানি না আর কতদিন ইউক্রেনের ভূমিকে মুক্ত রাখতে পারব। তবে আমরা এটা অবশ্যই করব। ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

যদিও জেলেনস্কির কথার সঙ্গে পরিস্থিতি মিলছে না। গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, দেশটির প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ শহরই প্রায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে রুশ সেনারা। যুদ্ধের শুরুর দিকে ইউক্রেন সেনারা অবিশ্বাস্য ক্ষীপ্রতায় রুশ আক্রমণ প্রতিহত করলেও এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। রাশিয়া সেনা সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দ্বিগুণ শক্তিতে অগ্রসর হচ্ছে। এরইমধ্যে গতকাল রুশ সেনারা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মেলিতপোলের মেয়র ইভান ফেদরোভকে ধরে নিয়ে গেছে। যদিও ১৭ দিনের এই যুদ্ধে রাশিয়াও বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, রাশিয়া এই যুদ্ধে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তি হারিয়েছে। গত শুক্রবারও ইউক্রেন সেনারা মেজর জেনারেল আন্দ্রেই কোলেসনিকভ নামে রাশিয়ার এক শীর্ষ সেনাকর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। এর আগেও রাশিয়ার আরও দুজন এই স্তরের সেনাকর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

এদিকে জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া দাবি করেছেন, মস্কোর বাহিনী ইউক্রেনে জীবাণু অস্ত্র তৈরির চিহ্ন সরিয়ে ফেলার তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে তিনি দাবি করেন, রুশবাহিনী ইউক্রেনে কমপক্ষে ৩০টি গবেষণাগারের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে অত্যন্ত বিপজ্জনক জীবাণু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছিল। তবে নেবেনজিয়া তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877